Homeজাতীয়জেনেভায় রোহিঙ্গাদের জন্য ৯৪ কোটি ডলারের জেআরপি ঘোষণা আজ

জেনেভায় রোহিঙ্গাদের জন্য ৯৪ কোটি ডলারের জেআরপি ঘোষণা আজ


রোহিঙ্গাদের জন্য এ বছর প্রায় ৯৪ কোটি ডলার সহায়তার প্রস্তাব দিয়ে জেনেভাতে ‘জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) ২০২৫-২৬’ ঘোষণা করা হবে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আজ  সোমবার (২৪ মার্চ) সকালে (বাংলাদেশ সময় বিকালে) জেআরপি প্রকাশনা ইভেন্টে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেবেন রোহিঙ্গা সমস্যা এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলির জন্য প্রধান উপদেষ্টার হাইরিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমান, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা-আইওএম এর মহাপরিচালক অ্যামি পোপ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন দাতা দেশগুলোর প্রতিনিধিরা।

২০১৭ সাল থেকে এক বছর মেয়াদি জেআরপি ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এবারই প্রথমবারের মতো দুই বছরের মেয়াদের জন্য জেআরপির ঘোষণা দেওয়া হবে। তবে ৯৪ কোটি ডলার সহায়তার প্রস্তাব শুধু ২০২৫ সালের জন্য।
 
জাতিসংঘের বাংলাদেশ অফিস থেকে জানানো হয়, ২০২৫-২৬ সালের জেআরপি বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিওসহ ১১৩টি সংস্থাকে সমন্বিত করেছে। এর মূল লক্ষ্য হলো— রোহিঙ্গা শরণার্থী ও জোর করে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা। একইসঙ্গে কক্সবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীকেও সহায়তা প্রদান করা।

সংস্থাটি জানিয়েছে, দুই বছরের জন্য তৈরি করা এই জেআরপি দীর্ঘস্থায়ী এই সংকটের যাত্রা এবং বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে। এটি দাতাদের দীর্ঘমেয়াদি সহায়তার সুযোগ করে দেবে। তবে ২০২৫ সালের জন্য নির্ধারিত বাজেট ও জনসংখ্যার লক্ষ্যমাত্রাগুলো নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ২০২৬ সালের পরিকল্পনাগুলো পরিস্থিতির বিবেচনায় পরবর্তী সময়ে নির্ধারণ করা হবে।

জেআরপি ২০২৫-২৬-এর উপকারভোগীরা কারা

জেআরপি ২০২৫-২৬-এর আওতায় সরাসরি সুবিধাভোগীদের মধ্যে কক্সবাজার ও ভাসানচরের ক্যাম্পে বসবাসকারী ১০ লাখ ৯০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং কক্সবাজার জেলার প্রায় ৩ লাখ ৯২ হাজার স্থানীয় জনগোষ্ঠী অন্তর্ভুক্ত।
 
পরোক্ষভাবে, জেআরপি অংশীদাররা তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে থাকবে। ক্যাম্প ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য সেবা, খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী মূলত দেশীয় বাজার থেকেই সংগ্রহ করা হয়, যেখানে সম্ভব হলে কক্সবাজার ও বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে সরাসরি ক্রয় করা হয়। এছাড়া, জাতিসংঘের সংস্থাগুলো ও আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো স্থানীয় অংশীদার নির্বাচন, দক্ষতা উন্নয়ন এবং মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয়করণকে গুরুত্ব দিচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও আশপাশের উপজেলাগুলোর উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

জেআরপির জন্য কত তহবিল প্রয়োজন

২০২৫ সালের প্রয়োজনভিত্তিক কার্যক্রমের জন্য প্রায় ৯৪ কোটি মার্কিন ডলার তহবিল প্রয়োজন, যা সদস্য রাষ্ট্র ও বেসরকারি দাতাদের কাছ থেকে আসবে। জেআরপি একটি সম্পূর্ণ অর্থায়নকৃত কর্মসূচি নয়, বরং এটি ১১৩টি মানবিক অংশীদারের (যার মধ্যে ৫৬টি বাংলাদেশি এনজিও) পক্ষ থেকে একটি আবেদন, যা রোহিঙ্গা শরণার্থী জরুরি মানবিক সহায়তা ও তাদের দক্ষতা উন্নয়ন ও ক্ষুদ্র আয়ের সুযোগ তৈরির মাধ্যমে সহনশীলতা বৃদ্ধির জন্য করা হয়েছে। ২০২৫ সালের জন্য জেআরপি বরাদ্দের আনুমানিক ৪০ শতাংশ (৩৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কক্সবাজার ও ভাসানচরের জন্য) জরুরি জীবন রক্ষাকারী কার্যক্রমে প্রয়োজন। 

২০২৪ সালের জেআরপি আবেদন ছিল ৮৫ কোটি মার্কিন ডলার, যার মধ্যে প্রায় ৫৬ কোটি মার্কিন ডলার (৬৫ শতাংশ) তহবিল পাওয়া গিয়েছিল। অর্থের এই ঘাটতির কারণে খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা হ্রাস করতে হয়েছে, যা রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা, পুষ্টি ও সামগ্রিক কল্যাণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

জেআরপি হলো বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলার জন্য প্রধান তহবিল সংগ্রহ ও সম্পদ সংস্থানের প্ল্যাটফর্ম। তবে জেআরপিতে অংশগ্রহণ করা মানেই তহবিল নিশ্চিত হওয়া নয় বা কোনও সংস্থা অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, এমন নয়।

জেআরপি কোন খাতগুলোর জন্য তহবিল সংগ্রহ করে

জেআরপির তহবিল প্রয়োজনীয়তা আটটি খাতের অগ্রাধিকারভিত্তিক কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করে, যার মধ্যে রয়েছে খাদ্যনিরাপত্তা, পুষ্টি, স্বাস্থ্য, আশ্রয়ণ, পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াশ), সুরক্ষা, শিক্ষা এবং জীবিকা ও দক্ষতা উন্নয়ন। তবে, এটি কক্সবাজার ক্যাম্প এবং ভাসানচরে বসবাসকারী শরণার্থী জনগোষ্ঠী বা কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বিশাল চাহিদার সম্পূর্ণ প্রতিফলন নয়। কিছু এনজিও এবং অন্যান্য কৌশলগত অংশীদার জেআরপি কাঠামোর বাইরে তহবিল সংগ্রহ করে, যা জেআরপির কৌশল, পরিকল্পনা ও কর্মসূচির পরিপূরক হিসেবে কাজ করে (যেমন: এমএসএফ, রেড ক্রস বা রেড ক্রিসেন্ট পরিবার, এএফএডি এবং তুর্কি এনজিও)।

কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য উন্নয়ন-বিষয়ক দাতাসংস্থাগুলো গুরুত্বপূর্ণ তহবিল সংগ্রহ অব্যাহত রয়েছে, তবে বেশিরভাগ অবদান জেআরপির প্রকল্পগুলোর আওতার বাইরে ব্যবহার করা হয়। যদিও জেআরপির জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল জেলার চলমান এবং পরিকল্পিত উন্নয়ন সহায়তা থেকে আলাদা, তবুও ক্যাম্প ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য এই পরিপূরক সহায়তার কার্যকারিতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে আনতে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তাকে সেক্টর কৌশলের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করার প্রচেষ্টা চলছে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত