Homeজাতীয়জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরে এক ঢিলে তিন পাখি

জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরে এক ঢিলে তিন পাখি


জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের ঢাকা সফরে ‘এক ঢিলে তিন পাখি’ মেরেছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রথমত, ‘বাংলাদেশ একটি অস্থিতিশীল দেশ’ বা ‘সংখ্যালঘু নির্যাতনকে’ কেন্দ্র করে দেশের ভেতরে এবং বাইরে যে অপপ্রচার চলমান আছে— সেটির যে ভিত্তি নেই, তা জাতিসংঘ মহাসচিব স্বচক্ষে দেখে গেলেন। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে যে সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা চলছে, সেটির প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থনের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন আন্তোনিও গুতেরেস। তৃতীয়ত, বিভিন্ন বৈশ্বিক সংকটের কারণে কিছুটা আড়ালে চলে গিয়েছিল রোহিঙ্গা সমস্যা এবং এই সফরের মাধ্যমে সেটিকে আবার কিছুটা হলেও বিশ্বকে মনে করিয়ে দেওয়া গেছে।

সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ সফরের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন যে অব্যাহত রয়েছে, সেই বার্তা দিয়ে গেলেন জাতিসংঘ মহাসচিব।’

মহাসচিবের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইন্টারলোকিউটরের মধ্যে আলোচনায় অনেক বিষয় পরিষ্কার হয়েছে এবং সামনের দিনগুলোতে সহযোগিতার একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।

গত ১৩ মার্চ চার দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক, সংস্কার কমিটি, রাজনৈতিক দল, যুব সম্প্রদায় ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। তার সফরের অন্যতম মূল উদ্দেশ্য ছিল— রোহিঙ্গাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা। সেজন্য তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।

রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার

প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে শুক্রবার (১৪ মার্চ) ইফতারি করেন মহাসচিব। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তেমন উন্নত নয়। এমন  অবস্থায় সন্ধ্যায় সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গার উপস্থিতিতে ইফতারির আয়োজন করে অন্তর্বর্তী সরকার প্রমাণ করেছে যে ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি।

এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত পররাষ্ট্র দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুটি বিভিন্ন বৈশ্বিক সংকটের কারণে কিছুটা আড়ালে চলে গিয়েছিল। সেটিকে আবার সবার সামনে আনার জন্য এ ধরনের একটি ইফতার আয়োজন করার দরকার ছিল।’

ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে দেখানো গেছে যে ক্যাম্পের পরিস্থিতি খারাপ নয়।’

নেতিবাচক প্রচারণা

৫ আগস্টের পর দেশে ও দেশের বাইরে বাংলাদেশকে ঘিরে বিভিন্ন অপপ্রচার চলে আসছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সময়ে এর জবাব দেওয়া হয়েছে। এবার জাতিসংঘ মহাসচিব নিজ চোখে বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখে গেলেন। এখন বিভিন্ন আলোচনা ও প্ল্যাটফর্মে তিনি বাংলাদেশের অবস্থা বর্ণনা করতে পারবেন।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে যে অপপ্রচার চলছে, সেটি নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব নিজেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার সফরের কারণে বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণার দৌরাত্ম্য কমবে বলে আশা করা যায়।’

রোহিঙ্গা ইস্যু

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মহাসচিবের আলাদা আগ্রহ রয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালে তিনি রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখার জন্য বাংলাদেশ সফর করেছিলেন।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এ মুহূর্তে আর্থিক সংকটে রয়েছে জাতিসংঘ। এ কারণে রোহিঙ্গাদের রেশনের অর্থের পরিমাণ কমাতে বাধ্য হচ্ছে তারা। এ পরিস্থিতিতে আশা করা যায়, মহাসচিব রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন তহবিল জোগাড়ের চেষ্টা করবেন।’

রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের প্রতি বাংলাদেশের অবদানের বিষয়টিও বর্তমান সফরে দেখে গেলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মাথাপিছু আয় ধরে নেওয়া হয় ছয়শত থেকে সাতশত ডলার। এর মধ্যে জাতিসংঘ সরবরাহ করে প্রায় দেড়শত ডলার। বাকি অর্থ জোগান দেয় বাংলাদেশ।’

রোহিঙ্গারা যে স্থানে থাকে, সেটি বাংলাদেশের ভূমি। তারা জ্বালানি হিসেবে যে কাঠ ব্যবহার করে বা রোহিঙ্গারা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে যে অর্থ উপার্জন করে– সেগুলো সামষ্টিকভাবে যোগ করলে সেটির (আর্থিক) পরিমাণ অনেক। বিষয়টি জাতিসংঘও স্বীকার বলে তিনি জানান।

সংস্কার কার্যক্রম

বাংলাদেশে সংস্কার কার্যক্রমে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা তাদের কাছ থেকে কারিগরি সহায়তা নিতে পারি। তবে সংস্কার হতে হবে হোমগ্রোন।’

তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিলে সেটি বিবেচনা করবে জাতিসংঘ এবং বাংলাদেশের পক্ষে সহযোগিতা পেতে সহজ হবে।’

 





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত