Homeজাতীয়চীনের চালবাজি রুখতে জ্যামার বসাচ্ছে আমেরিকা, যুদ্ধ আসন্ন?

চীনের চালবাজি রুখতে জ্যামার বসাচ্ছে আমেরিকা, যুদ্ধ আসন্ন?


ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উপগ্রহ সিগন্যাল আটকানোর জন্য জ্যামার বসানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে আমেরিকা। আর তারপর থেকেই জল্পনা, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের আসনে বসার পরেই চিনের সঙ্গে বৈদ্যুতিন যুদ্ধ শুরু হতে পারে আমেরিকার।

এসব নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত ডিসেম্বর থেকে। আমেরিকার ‘স্পেস র‍্যাপিড ক্যাপাবিলিটিস’ অফিসের ডিরেক্টর কেলি হ্যামেট তখন জানিয়েছিলেন যে, ‘রিমোট মডুলার টার্মিনাল (আরএমটি)’ নামে পরিচিত জ্যামার সিস্টেমটি ‘কিল চেন’ ব্যাহত করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ‘কিল চেন’ হলো একটি সামরিক পদ্ধতি, যা শত্রুদের আক্রমণের ছক চিহ্নিত করে।

হ্যামেট এ-ও জানিয়েছিলেন, জ্যামারের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো চীনের নজরদারি উপগ্রহের নেটওয়ার্ক, বিশেষ করে ‘ইয়াওগান’ সিরিজ়ের উপগ্রহগুলির সিগন্যাল আটকে দেওয়া। উপগ্রহের মাধ্যমে নজরদারির বিষয়ে চীনকে এক প্রকার অন্ধ করে দেওয়াই এর লক্ষ্য।

আমেরিকার ‘স্পেস অপারেশনস কম্যান্ড’ জ্যামার বসানোর প্রথম পর্যায়ের অনুমোদন দিয়েছে ইতোমধ্যেই। আমেরিকার তরফে প্রাথমিক ভাবে ১১টি জ্যামার মোতায়েন করা হবে বলে আশা করা হয়েছিল। তবে শেষে জানা যায়, আমেরিকার সামরিক বাহিনী প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে কেন্দ্র করে মোট ২০০টি ওই যন্ত্র মোতায়েন করার পরিকল্পনা করেছে।

উপগ্রহের মাধ্যমে সারা বিশ্বে নজরদারি চালায় চীন। একই কাজ করে আমেরিকাও। তাদের নজর এড়িয়ে কোনও কাজ করা কঠিন। নজরদারিকে কেন্দ্র করে আমেরিকা এবং চীনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলতে থাকে অহর্নিশ।

২০২২৩ সালে ‘ইয়াওগান-৪১’ নামে কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে চীন। কৃত্রিম উপগ্রহটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছে ‘লং মার্চ ৫’ লঞ্চার রকেটের মাধ্যমে। এটি চীনের অন্যতম শক্তিশালী রকেট। দাবি উঠেছিল, ওই উপগ্রহটিকে নজরদারি করতে এবং সামরিক কাজে ব্যবহার করা হতে পারে। সামরিক দূতের কাজ করবে সেই উপগ্রহটি।

যদিও চীন সরকারের দাবি ছিল, জমি জরিপ, পর্যবেক্ষণের মতো অসামরিক কাজের জন্যই ‘ইয়াওগান-৪১’ বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়েছে। এর সঙ্গে সামরিক কোনও সম্পর্ক নেই।

তবে ইতিহাস অন্য কথা বলছে। এর আগে চীনের বিরুদ্ধে ‘ইয়াওগান’ সিরিজের একাধিক উপগ্রহ সামরিক কাজে ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে আমেরিকা। তাই মনে করা হচ্ছিল ‘ইয়াওগান-৪১’কেও তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করতে পারে চীন।

দাবি করা হচ্ছিল, সারা পৃথিবী জুড়ে ‘ইয়াওগান-৪১’ কাজ করবে। তবে তা বিশেষভাবে নজর রাখবে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায়। বিশেষজ্ঞদের দাবি ছিল, এর মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অংশে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালাবে চীন।

আর তার পরেই চীনের ‘চালবাজি’ আটকাতে নামে আমেরিকা। ‘ইয়াওগান-৪১’ প্রথম নয়, এর আগে একাধিক ‘দূত’ উপগ্রহ মহাকাশে পাঠিয়েছে চীন। আমেরিকা ও চীনের দ্বন্দ্বের অন্যতম অঙ্গ এই কৃত্রিম উপগ্রহ।

ওয়াশিংটনের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (সিএসআইএস)’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের ইয়াওগান সিরিজের উপগ্রহগুলি মহাকাশ থেকে ছোট গাড়ির উপরেও নজরদারি চালাতে পারে। এর পাশাপাশি, উপগ্রহগুলি নাকি আমেরিকার ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কম্যান্ডের উপরেও ক্রমাগত নজরদারি চালাতে সক্ষম। গত মাসে ফ্লোরিডায় ‘স্পেসপাওয়ার কনফারেন্স’-এ আমেরিকার বেশ কয়েকজন সামরিক কর্তা বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরেন।

আমেরিকার মহাকাশ বাহিনীর ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার কম্যান্ডার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অ্যান্টনি মাস্তালির সেই অনুষ্ঠানে স্বীকার করেন যে, চীনের উপগ্রহগুলি আমেরিকা এবং বন্ধু দেশের সামরিক শক্তির উপর নজর রেখে সম্ভাব্য দুর্বলতাগুলিকে কাজে লাগায়।

আর সে কারণেই এ বার জ্যামার বসিয়ে উপগ্রহগুলির নজরদারি বন্ধ করে দিতে চাইছে আমেরিকা। মহাকাশ নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উপগ্রহের মধ্যে চীনা নজরদারিকে দুর্বল করার অন্যতম চাবিকাঠি শক্তিশালী জ্যামার। আর এই জ্যামার বসানোর নিয়েই তৈরি হয়েছে আমেরিকা এবং চীনের মধ্যে বৈদ্যুতিন যুদ্ধের আশঙ্কা।

অস্ট্রেলিয়ার ‘স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট’-এর মহাকাশ নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ম্যালকম ডেভিস এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘যদি আমেরিকা ওই জ্যামার বসায়, তা হলে চীনও শক্তি প্রদর্শন করবে। ফলে শুরু হবে এক প্রকার বৈদ্যুতিন যুদ্ধ, যা হবে বিশ্বের প্রথম বৈদ্যুতিন যুদ্ধ। আমেরিকার জ্যামারগুলি শনাক্ত করার পরে পাল্টা বৈদ্যুতিন হামলা চালাতে পারে চিন। আর তা থেকেই শুরু হবে এই যুদ্ধ। তবে এই যুদ্ধে কোনও অস্ত্র কাজ থাকবে না। পুরোটাই হবে বৈদ্যুতিন যুদ্ধ।’ সূত্র: আনন্দবাজার।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত