মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম মিডেল ইস্ট আই এর এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, গাজা পুনর্গঠনে মিশরের প্রস্তাবিত পরিকল্পনার বিরুদ্ধে গোপনে ষড়যন্ত্র করছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
মিশরের প্রস্তাবটি আরব লীগ অনুমোদন করলেও সংযুক্ত আরব আমিরাত যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তদবির করে এটিকে প্রত্যাখ্যান করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে হামাস পুনরায় শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে, যা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হতে পারে।
মিশর গাজা পুনর্গঠনের জন্য একটি ৫,৩০০ কোটি ডলারের পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছে, যা ইতিমধ্যে আরব লীগ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থন পেয়েছে। এই পরিকল্পনার আওতায় গাজায় একটি নিরাপত্তা বাহিনী গঠনের প্রস্তাব রয়েছে, যাদের প্রশিক্ষণ দেবে জর্ডান ও মিশর। এছাড়াও, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের সম্ভাবনাও রয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে।
মিডেল ইস্ট আই এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংযুক্ত আরব আমিরাত আরব লীগের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও মিশরের এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে তদবির করে পরিকল্পনাটি বাতিল করার চেষ্টা করছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুক্তি হলো, এই পরিকল্পনা হামাসকে শক্তিশালী করার সুযোগ দেবে, যা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত, ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করে মিশরের প্রস্তাবের বিরোধিতা করছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে বিতাড়িত করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা সংযুক্ত আরব আমিরাত সমর্থন করেছিল।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিরোধিতার পেছনে হামাস এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। মিশরের বর্তমান সরকার মুসলিম ব্রাদারহুডের বিরোধী হলেও হামাসের শীর্ষ নেতাদের সাথে তাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। অন্যদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাত মুসলিম ব্রাদারহুড এবং হামাসকে মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারকারী সংগঠন হিসেবে দেখে এবং তাদের দমনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। এই প্রেক্ষাপটে, গাজা পুনর্গঠনের পরিকল্পনা হামাসকে শক্তিশালী করতে পারে বলে সংযুক্ত আরব আমিরাত আশঙ্কা করছে।
মিশর গাজা পুনর্গঠনের পরিকল্পনাকে অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য হিসেবে দেখছে। মিশরের প্রস্তাব অনুযায়ী, গাজায় একটি নিরাপত্তা বাহিনী গঠন করা হবে, যা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়াও, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে গাজায় মানবিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ সুগম হবে বলে মিশর মনে করে।
গাজা পুনর্গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে মিশর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে মতপার্থক্য মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিরোধিতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হস্তক্ষেপ এই পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলেছে। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও হামাস এই পরিকল্পনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে এবং এর বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন কামনা করছে।
এই ইস্যুতে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি সংযুক্ত আরব আমিরাত বা মিশর। তবে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি এবং আঞ্চলিক শক্তিগুলোর ভূমিকা এই পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।