দেশের আকাশে আজ রবিবার (৩০ মার্চ) পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল সোমবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। আর বাংলাদেশের কোথাও চাঁদ দেখা না গেলে ৩০ রোজা পূর্ণ করে ঈদ উদযাপিত হবে আগামী মঙ্গলবার। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। এই লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এবার জাতীয় ঈদগাহে থাকবে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের এখানে ঈদের নামাজ আদায় করার কথা আছে।
সুপ্রিম কোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আয়োজনের সব ধরনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এখানে একসঙ্গে ৩৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে আশেপাশের সড়ক এবং জায়গা মিলিয়ে ঈদের নামাজে অংশ নিতে পারেন প্রায় ৯০ হাজার মুসল্লি। এছাড়া ভিভিআইপি গ্যালারিতে ২৫০ জনের মতো নামাজ আদায় করতে পারবেন। নামাজ আদায়ের জন্য আরামদায়ক কাপের্ট বিছানো হয়েছে। এছাড়া নামাজ পড়তে আসা মানুষের জন্য সুপেয় পানিরও ব্যবস্থা করেছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
জাতীয় ঈদগাহ প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, ঈদগাহে মূল প্রবেশ পথ করা হয়েছে দুইটি। ভিভিআইপিদের প্রবেশের জন্য সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ দিয়ে আলাদা একটি গেট করা হয়েছে। এছাড়া নারীদের নামাজের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করার পাশাপাশি, তাদের জন্য আলাদা প্রবেশপথ করা হয়েছে। প্রবেশ পথে বসানো হয়েছে ‘ঈদ মোবারক’ সম্বলিত তোরণ। ঈদগাহের মাঠ প্রায় পুরোটাই ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। প্যান্ডেলের নিচে মাঠে ম্যাট বিছানো। এছাড়াও রয়েছে সিলিং ফ্যান, লাইট ও মাইকের ব্যবস্থা।
জাতীয় ঈদগাহে পুলিশ ও র্যাবের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ফায়ার ব্রিগেডের একটি টিমও জাতীয় ঈদগাহের কাছে থাকবে। পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা দিতে দুইটি মেডিক্যাল টিম ঈদগাহে প্রস্তুত থাকবে বলে জানিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। আবহাওয়া অনুকুলে না থাকলে ঈদের প্রধান জামাত সকাল ৯টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে।
ঈদগাহের সার্বিক প্রস্তুতি বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া জানান, জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায় করার জন্য আরামদায়ক কার্পেট বিছানো হয়েছে। তাই কাউকে জায়নামাজ সঙ্গে আনতে হবে না। প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসহায়তার জন্য দুটি মেডিক্যাল টিম থাকবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন থাকবেন। মুসল্লিদের জন্য অজু করার জায়গা, শৌচাগার ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
শাহজাহান মিয়া বলেন, গত বছরের মতো এবারও আমরা আধুনিক ও সুসংগঠিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঈদ জামাত আয়োজনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকলেও প্রতিকূল পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
এদিকে জাতীয় ঈদগাহের নিরাপত্তায় ঈদের জামাতে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। রবিবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, জাতীয় ঈদগাহ, বায়তুল মোকাররম ও ঢাকার অন্যান্য সব স্থানে অনুষ্ঠেয় ঈদ জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিতে করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ সমন্বিত, সুদৃঢ়, সুবিন্যস্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাতে ঘিরে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে।
ডিএমপি কমিশনার জানান, প্রবেশ গেটগুলোতে তল্লাশির জন্য আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেকটর থাকবে। পুরো জাতীয় ঈদগাহ ময়দানসহ আশপাশের এলাকা সিসিটিভির আওতাভুক্ত থাকবে। প্রায় ১০০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এসব ক্যামেরা কন্ট্রোলরুম থেকে সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
ঈদগাহ ময়দানে আসার প্রধান তিনটি সড়কের (মৎস্য ভবন, প্রেসক্লাব ও শিক্ষা ভবন) প্রবেশমুখে আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেকটর দিয়ে তল্লাশির ব্যবস্থা থাকবে। নারীদের জন্য পৃথক নামাজের ব্যবস্থা, প্রবেশ গেট ও পৃথক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে বলেও জানান তিনি।
শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ঈদগাহ ময়দান ও আশেপাশের এলাকায় এসবির টিম এবং সিটিটিসির ডগ স্কোয়াড সুইপিং করবে। সোয়াত ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট স্ট্যান্ডবাই থাকবে। সাদা পোশাকে ডিবি ও সিটিটিসি সদস্যদের মোতায়েন করা হবে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
নিরাপত্তার স্বার্থে তল্লাশিকাজে সহায়তার জন্য নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, কোনও ধরনের ব্যাগ, ধারালো বস্তু, দাহ্য পদার্থ নিয়ে না আসার জন্য অনুরোধ রইলো। সবাইকে জামাত শেষে সুশৃঙ্খলভাবে বের হওয়ার অনুরোধ করা যাচ্ছে। সন্দেহজনক কিছু মনে হলে নিকটস্থ পুলিশ সদস্যকে জানাবেন, কিংবা প্রয়োজনে ৯৯৯ অথবা পুলিশ কন্ট্রোলরুমে যোগাযোগ করবেন।