Homeজাতীয়আসিফ মাহমুদ ও হাসনাতের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে তোলপাড়

আসিফ মাহমুদ ও হাসনাতের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে তোলপাড়


অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ এবং আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তাঁদের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় চলছে। এর জেরে আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভও করেছে।

আজ শুক্রবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ। ভিডিওটি ১৫ মার্চ ধারণ করা হয়েছে বলে ওই পোস্টের মন্তব্যের ঘরে জানান তিনি।

‘ক্যান্টনমেন্টের ইন্টারভেনশনের ট্রেইলর-১’ শীর্ষক ২৮ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে বার্তায় আসিফ মাহমুদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. ইউনূসের নিয়োগ নিয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের ‘ভেটো’ (আপত্তি) ছিল।

ভিডিওতে আসিফ বলেন, ‘সেনাপ্রধানের দিক থেকে মূল ভেটোটা (আপত্তি) ছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূস কেন? হোয়াই নট অ্যানি আদার পারসন (অন্য কেউ কেন নয়)? ড. ইউনূসের নামে মামলা আছে। তিনি একজন কনভিকটেড পারসন (দণ্ডিত ব্যক্তি)। কনভিকটেড পারসন কীভাবে আসলে একটা দেশের প্রধান উপদেষ্টা হতে পারে।’

আওয়ামী লীগকে একটা লোক একেবারেই দেখতে পারছে না এবং বাংলাদেশে তো আলটিমেটলি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ লোক আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে। এই ৩০-৪০ শতাংশের মানুষের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে কি একটা লোককে প্রধান উপদেষ্টা করা উচিত?—সেনাপ্রধান এমন মন্তব্য করেন বলে ভিডিওতে বলেন উপদেষ্টা আসিফ।

ভিডিওতে আসিফ আরও বলেন, ‘সেনাপ্রধান শেষে আমাদেরকে বলেছিলেন, তিনি বুকে পাথর চাপা দিয়ে এ সিদ্ধান্ত মেনে নিচ্ছেন।’

এর আগে গতকাল একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনার পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ তুলে অবিলম্বে দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণ) হাসনাত আবদুল্লাহ।

শুক্রবার দিবাগত রাতে (২১ মার্চ) এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আসুন, সকল যদি কিন্তু পাশে রেখে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারলে জুলাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত আমাদের শহীদদের রক্ত আমরা বৃথা হতে দিবো না। ৫ আগস্টের পরের বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কামব্যাকের আর কোনো সুযোগ নাই, বরং আওয়ামী লীগকে অবশ্যই নিষিদ্ধ হতেই হবে।’

তিনি লেখেন, ‘১১ই মার্চ, সময় দুপুর ২:৩০। কিছুদিন আগে আমি আপনাদের বলেছিলাম যে, “রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ” নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরীন শারমিন, তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।

‘আমিসহ আরও দুইজনের কাছে ক্যান্টনমেন্ট থেকে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় ১১ই মার্চ দুপুর ২:৩০-এ। আমাদেরকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, আসন সমঝোতার বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদেরকে বলা হয়, ইতোমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে—তারা শর্ত সাপেক্ষে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে। একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা নাকি ভালো। ফলশ্রুতিতে আপনি দেখবেন, গত দুইদিন মিডিয়াতে আওয়ামী লীগের পক্ষে একাধিক রাজনীতিবিদ বয়ান দেওয়া শুরু করেছে।’

হাসনাত আবদুল্লাহ আরও লেখেন, ‘আমাদেরকে আরো বলা হয়—”রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ” যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবে এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে।’

হাসনাত বলেন, তাঁরা তৎক্ষণাৎ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে কাজ করতে বলেন।

‘এর উত্তরে আমাদের বলা হয়, আওয়ামী লীগকে ফিরতে কোনো ধরনের বাধা দিলে দেশে যে সংকট সৃষ্টি হবে, তার দায়ভার আমাদের নিতে হবে এবং “আওয়ামী লীগ মাস্ট কাম ব্যাক”।’ লিখেছেন হাসনাত আবদুল্লাহ।

হাসনাত আরও লেখেন, ‘আলোচনার একপর্যায়ে বলি—যেই দল এখনো ক্ষমা চায় নাই, অপরাধ স্বীকার করে নাই, সেই দলকে আপনারা কীভাবে ক্ষমা করে দিবেন! অপরপক্ষ থেকে রেগে গিয়ে উত্তর আসে, “ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডম অ্যান্ড এক্সপিরিয়েন্স। উই আর ইন দিজ সার্ভিস ফর এটলিস্ট ফোর্টি ইয়ার্স। তোমার বয়সের থেকে বেশি। তা ছাড়া আওয়ামী লীগ ছাড়া ইনক্লুসিভ ইলেকশন হবে না।”

উত্তরে বলি, “আওয়ামী লীগের সাথে কোনো ইনক্লুসিভিটি হতে পারে না। আওয়ামী লীগকে ফেরাতে হলে আমাদের লাশের ওপর দিয়ে ফেরাতে হবে। আওয়ামী লীগ ফেরানোর চেষ্টা করা হলে যে সংকট তৈরি হবে, তার দায়ভার আপনাদের নিতে হবে।”

মিটিং অসমাপ্ত রেখেই তাঁদের চলে আসতে হয় বলে উল্লেখ করেন হাসনাত।

হাসনাত আবদুল্লাহ আরও অভিযোগ করেন, জুলাই আন্দোলনের সময়ও তাঁদের ওপর নানা ধরনের চাপ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ওসব চাপে নতি স্বীকার না করে আপনাদের তথা জনগণের উপরেই আস্থা রেখেছি। আপনাদের সাথে নিয়েই হাসিনার চূড়ান্ত পতন ঘটিয়েছি।’

হাসনাত আরও বলেন, এখনো তিনি নির্দিষ্ট মহলের চাপকে অস্বীকার করে যাচ্ছেন।

এনসিপি নেতা লেখেন, ‘এ পোস্ট দেওয়ার পর আমার কী হবে আমি জানি না। নানামুখী প্রেশারে আমাকে হয়তো পড়তে হবে, হয়তো বিপদেও পড়তে হতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে কোনো ধরনের আপস করার সুযোগ নাই।’

তিনি আরও লেখেন, ‘আজ আবারও যদি আপনাদের সমর্থন পাই, রাজপথে আপনাদের পাশে পাই, তবে আবারও এই আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের ভারতীয় ষড়যন্ত্রও আমরা উড়িয়ে দিতে পারব।’

সবশেষে হাসনাত আবদুল্লাহ লেখেন, ‘আসুন, সকল যদি কিন্তু পাশে রেখে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারলে জুলাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত আমাদের শহীদদের রক্ত আমরা বৃথা হতে দিবো না। ৫ আগস্টের পরের বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কামব্যাকের আর কোন সুযোগ নাই বরং আওয়ামী লীগকে অবশ্যই নিষিদ্ধ হতেই হবে।’

ওই পোস্টে একজনের মন্তব্যের জবাবে হাসনাত আবদুল্লাহ লিখেছেন, ‘মৃত্যু হলেও মানুষ জানুক কেন মারা গিয়েছি।’

আজ শুক্রবার বিকেলে সারজিস আলম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘লড়াইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের জন্য আমরা প্রস্তুত। গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ পর্যন্ত এ লড়াই চলবে।’





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত