বাড়ছে খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি
- শুধু জানুয়ারি মাসেই ২৯৫টি খুনের এবং ১১৫টি ডাকাতির মামলা হয়েছে
- গত ৭ মাসে ডাকাতি ও দস্যুতার মামলা ১ হাজার ৫৮০
দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। প্রকাশ্যে দিবালোকে গুলি করে হত্যা, কুপিয়ে খুন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ বেড়েছে। ফলে জনমনে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। ঘর থেকে বের হলে কখন কি ঘটে এ ভয়ে মানুষ আতঙ্কিত। যৌথ বাহিনীর অভিযানের মধ্যেও অপরাধীরা থেমে নেই। বেড়েছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। গণপিটুনিতেও হত্যার ঘটনা ঘটছে।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় গত ৭ মাসে ১ হাজার ৫৩৮ মামলা হয়েছে বিভিন্ন অপরাধে। তন্মধ্যে খুন, ডাকাতি ও দস্যুতার মামলাই বেশি। পুলিশের তথ্যমতে, শুধু জানুয়ারি মাসেই ২৯৫টি খুনের এবং ১১৫টির ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়েছে। গত ৭ মাসে খুন, ডাকাতি, দস্যুতাসহ নানা অপরাধে ১ হাজার ৫৮০টি মামলা হয়েছে। অবস্থা দিন দিন আরো খারাপ হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র মতে, জানুয়ারিতে বিভিন্ন থানায় খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে ২৯৫টি। তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছিল ২৩১টি। এর আগের চার বছরে শুধু জানুয়ারিতে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছিল ২১৪, ২৬৪, ২৫৭ ও ২৭৩টি। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়েছে ২৮৫টি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, শুধু পরিসংখ্যান দিয়ে কিংবা মাসওয়ারী হিসাব করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি কিংবা অবনতি বলা যাবে না। অপরাধের বিষয়টি অনেকটা নির্ভর করে পরিবেশ পরিস্থিতির ওপরে। স্বীকার করছি বর্তমানে পুলিশের জনবল কম থাকায় কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে বলা সঠিক নয়। তিনি বলেন, এ মাসে পুলিশ, র্যাব ও অ্যান্টি টেরিরিজম ইউনিট যৌথভাবে সারাদেশের মহানগরীতে টহল দিবে। আইজিপি বলেন, ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সারাদেশে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। অপারেশন “ডেভিল হান্ট”-এর অভিযানে অনেক অপরাধী গ্রেফতার হয়েছে। আবার অনেকেই পালিয়ে গেছে।
সম্প্রতি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে চরমপন্থী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে। ইতোমধ্যে ৩ জনকে খুন করে অস্ত্রের মহড়ার মাধ্যমে তাদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে কুষ্টিয়ায় গড়াই নদীর তীরে কমপক্ষে তিনটি ডাকাতি ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটিয়ে ক্যাশ কাউন্টার থেকে ২ লাখ টাকা লুটে নিয়েছে।
ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের হুমকিতে তারা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। স্থানীয় লোকজন জানান, সম্প্রতি কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ এলাকায় খুন-খারাবি ও ডাকাতির ঘটনা বেড়ে গেছে। মানুষ নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ছে। শুধু খুন-খারাবি ও ডাকাতি নয় বেড়েছে ধর্ষণের মতো ভয়ঙ্কর ঘটনা। এতে করে সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা ও শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। চলতি বছরের গত দুই মাসে অন্তত ৭২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র। তাদের হিসাব মতে, জানুয়ারিতে ৩৯টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। তন্মধ্যে ১০টি ধর্ষণের ঘটনায় কোন মামলাই হয় নাই।
দেশের মহাসড়কে বাসের ভেতর অস্ত্র ঠেকিয়ে ধর্ষণ, বনশ্রীতে বাসার সামনে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে ও কুপিয়ে আহত করে ২০০ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ২ লাখ টাকা ছিনতাই। এসব ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
সাধারণ মানুষ বলছে, খুন-ডাকাতি-ছিনতাই-লুটতরাজ, ধর্ষণ ও কিশোর গ্যাং-এর তৎপরতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। বিশেষ অভিযান অপারেশন ডেভিল হান্ট চলছে। অন্যদিকে খুনোখুনি, চুরি-ডাকাতিও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। বিশেষ অভিযানের মধ্যেও অপরাধীরা বেপরোয়া। তবে এ অভিযানে গ্রেফতার হচ্ছে না কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আসা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলা যাবে না। তবে চেষ্টা চলছে। বিশেষ অভিযানে অপরাধীরা গ্রেফতারও হচ্ছে।
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন কমিশনার শেখ মোঃ সাজ্জাদ আলী বলেছেন, চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের তালিকা করে ব্যাপক অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, অপরাধ অতীতেও ছিল, এখনো আছে। তবে পুলিশ অপরাধ দমনে ব্যাপক তৎপর রয়েছে। ইতোমধ্যে অর্থাৎ গত দুই মাসে সহস্রাধিক অপরাধী ও দাগী চিহ্নিত খুনীসহ অপরাধীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যরাতে সংবাদ সম্মেলন, বিশেষ অভিযান কোন কিছুতেই অপরাধ কমছে না। বরং বেড়েই চলেছে। তারা বলছেন, এই রমজান মাসেও রাতে ঢাকা মহানগরী যেন অপরাধীদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।