Homeজাতীয়আইইউটিতে টানা তৃতীয় সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ অব্যাহত

আইইউটিতে টানা তৃতীয় সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ অব্যাহত


গত ২৩ নভেম্বর একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তৃতীয় বর্ষের তিনজন ছাত্র মারা যায়, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবহেলার অভিযোগে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে সাধারণ ছাত্ররা। শিক্ষার্থীরা কতিপয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে অসদাচরণ, দুর্নীতি এবং প্রশাসনের একটি অননুমোদিত সিন্ডিকেটের প্রভাবের অভিযোগ তুলেছে। শিক্ষার্থীরা জবাবদিহিতা, শিক্ষকদের বরখাস্ত এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের দাবি করেছে; যতক্ষণ না এগুলো পূরণ হচ্ছে তাদের বয়কট অব্যাহত থাকবে বলে তারা জানিয়েছে।

আইইউটির অডিটোরিমায়ে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন বিশ্ববিদ্যায়ের আন্দোনলরত শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ জানিয়ে একটি প্রেস রিলিজ প্রকাশ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) শিক্ষার্থীরা ২৮ নভেম্বর থেকে বিক্ষোভ করেছে। ২৩ নভেম্বর একটি মর্মান্তিক ঘটনায় উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষার্থী প্রাণ হারান। ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যবর্তী বিভিন্ন পর্যায়ের সমস্যাগুলো উত্থাপন করেছে, যা জবাবদিহিতা ও সংস্কারের জন্য একটি বৃহদাকারের আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।

২৩ নভেম্বর মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (এমপিই) বিভাগের বার্ষিক বনভোজনে যাওয়ার পথে তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষের ছাত্রদের বহনকারী একটি ডাবল ডেকার বাস ১১ কেভি বিদ্যুতের লাইনের সংস্পর্শে আসে, যার ফলে একটি বিপর্যয়কর ঘটনা ঘটে। এতে তৃতীয় বর্ষের তিনজন শিক্ষার্থী মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারায় এবং পাঁচজন আহত হয়। মারা যাওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন— মোজাম্মেল হোসেন নাঈম (২৪), মোস্তাকিম রহমান মাহিন (২২) ও জোবায়ের আলম সাকিব (২২)। তারা সবাই মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে যে, উদ্বেগ প্রকাশের পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং কতিপয় শিক্ষক চরম অসংবেদনশীলতা এবং দায়িত্বহীনতা প্রদর্শন করেছে। ঘটনাস্থলে বিভাগের প্রধানের (HOD) কিছু মন্তব্য শিক্ষার্থীদের কাঁধে দোষ চাপানোর প্রয়াস দেখা যায়। অনুরূপ মন্তব্য ভারপ্রাপ্ত প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর এবং ছাত্র কল্যাণ অফিসের প্রধান (OSW) দ্বারা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে যে, আইইউটির মধ্যে ‘চলকু’ (বা IUT ফ্যাকাল্টি ওয়েলফেয়ার সোসাইটি) নামে পরিচিত একটি কথিত অননুমোদিত শিক্ষক ফোরামের অস্তিত্ব রয়েছে। বর্তমান এবং প্রাক্তন ছাত্রদের দাবী অনুযায়ী, এই ফোরামের কিছু ফ্যাকাল্টি সদস্য (যা ‘সিন্ডিকেট’ নামেও পরিচিত) প্রশাসনের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখে এবং প্রায়ই ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত সুবিধার জন্য সিদ্ধান্তগুলো পরিবর্তন করে। তারা অভিযোগ করেছে যে এই সিন্ডিকেট পূর্বে থেকেই ছাত্র-বান্ধব উদ্যোগগুলোকে বাধাগ্রস্ত করেছে এবং তাদের (সিন্ডিকেট) স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে নীতিগুলো প্রয়োগ করেছে। 

কিছু প্রাসঙ্গিক প্রতিবেদন নির্দেশ করে যে গ্রুপটি অযৌক্তিক স্বায়ত্তশাসন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি ছায়া কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করে এবং আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াগুলোকে অগ্রাহ্য করে। এর প্রতিবাদের অংশ হিসেবে, শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে, শুধুমাত্র উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে প্রবেশাধিকার দিয়েছে। এই পদক্ষেপটি ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার দাবীতে তাদের অঙ্গীকারকে স্পষ্ট করেছে।

শিক্ষার্থীরা গত দুই সপ্তাহ ধরে ফ্ল্যাশলাইট মিছিল, র‍্যালি, ক্লাস বয়কটসহ আরও অনেক প্রতিবাদে অংশ নিয়েছে। শিক্ষার্থীরা প্রথমে ৮ দফা দাবি পেশ করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া পর্যালোচনা করার পর তারা জবাবদিহিতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের আহ্বানসহ তাদের দাবিগুলো ৯টি মূল পয়েন্ট ব্যাখ্যা করেছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবির মধ্যে রয়েছে অনুষদ ও স্টাফ সদস্যদের বরখাস্ত করা যারা অসদাচরণ ও অবহেলার অভিযোগে অভিযুক্ত। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি, আর্থিক জালিয়াতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং একাডেমিক অনিয়মের মামলা।

অভিযুক্ত ব্যক্তিদের তালিকায় রয়েছেন।, এমপিই বিভাগের অধ্যাপক আরাফাত আহমেদ ভূঁইয়া, অধ্যাপক ড. মোঃ হামিদুর রহমান, অধ্যাপক ড. মোঃ আবু রায়হান, ইইই বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজাউল হক খান, ইইই বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ তসলিম রেজা, অধ্যাপক ড. মোঃ শাহাদাত হোসেন খান, TVE বিভাগের প্রধান, অধ্যাপক ড. মোঃ আবুল কালাম আজাদ, BTM বিভাগের প্রধান,  ইইই বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ মোঃ ফখরুল ইসলাম,ইইই বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ রিকবুল ইসলাম, মেডিকেল অফিসার ডাঃ আলী তারেক, মোঃ গোলাম কিবরিয়া আব্বাসী, নিরাপত্তা-ইন-চার্জ, শরিফুল ইসলাম মজুমদার, সহকারী হল সুপারভাইজার।

শিক্ষার্থীরা ‘চলকু’ ফোরামের নির্দিষ্ট সিন্ডিকেট সদস্যদের সন্দেহজনক পিএইচডিসহ প্রশ্নবিদ্ধ একাডেমিক প্রমাণপত্রের অভিযোগও তুলে ধরেছে। দুর্নীতি, ভয়ভীতি এবং কর্তৃত্বের অপব্যবহারের প্রতিবেদনগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শাসনব্যবস্থার উপর শিক্ষার্থীদের আস্থা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সিন্ডিকেট মিথ্যা অপপ্রচার করে নিজেদের রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায়, আইইউটির চ্যান্সেলর, অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) মহাসচিব বাংলাদেশ ভ্রমণ এবং শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ সমাধানের জন্য একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে শিক্ষার্থীরা ঘোষণা করেছে যে তাদের দাবি সম্পূর্ণরূপে পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এবং সন্তোষজনক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাস ও পরীক্ষাসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহন করবে না। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্রদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইএসসি (ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস কাউন্সিল) চলমান বিক্ষোভের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। বিক্ষোভকারীরা মনে করে যে তাদের আন্দোলন অহিংস এবং ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার নীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। তারা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আস্থা ও সততা পুনরুদ্ধারের জন্য জবাবদিহিতা এবং সংস্কারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগসহ আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করার জন্য ভুল তথ্য ছড়ানোর অপপ্র চেষ্টারও নিন্দা জানিয়েছে। তারা দৃঢ়ভাবে দাবি করেছে যে এ ধরনের যেকোনো কর্মকাণ্ড শক্ত হাতে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে পূরণ করতে হবে। শিক্ষার্থীরা উপাচার্য এবং ওআইসি প্রতিনিধি দলের প্রতি তাদের আস্থা পুনঃস্থাপন করেছে যাতে তারা তাদের দাবিগুলো পূরণ করে এবং যথাযথ ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে সংকট নিরসনে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করে। তবে শিক্ষার্থীরা জোর দিয়ে বলেছে যে যতক্ষণ না তাদের দাবি পূরণ করা হচ্ছে তারা সব ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনসহ তাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখবে এবং ন্যায়বিচার ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

 





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত