মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র মাস রমজানে পেশাদার ক্রীড়াবিদদের পারফরম্যান্স নিয়ে বহুবার আলোচনা হয়েছে। বেশিরভাগ খেলাতেই দেখা যায় মুসলিম ক্রীড়াবিদরা চেষ্টা করেন রোজা রেখেই নিজেদের কাজ চালিয়ে যেতে। অবশ্য এর ব্যতিক্রমও আছে। যেমনটি দেখা গেল সদ্য সমাপ্ত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে।
এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের হয়ে শিরোপা জেতা মোহাম্মদ শামি জানিয়েছেন, তিনি রোজা রাখেননি, কারণ তার কাছে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। অন্যদিকে, ফুটবল বিশ্বে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ডিফেন্ডার নুসাইর মাজরাউই দেখিয়ে দিলেন, কীভাবে রোজা রেখেও দুর্দান্ত খেলা সম্ভব।
শামির সিদ্ধান্ত বনাম মাজরাউইর আত্মত্যাগ
মোহাম্মদ শামি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ বোলার ছিলেন। তবে তিনি খোলাখুলিভাবেই স্বীকার করেছেন, টুর্নামেন্ট চলাকালীন রোজা রাখা তার জন্য সম্ভব হয়নি। তার যুক্তি ছিল, পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে তাকে নির্দিষ্ট ডায়েট ও বিশ্রামের নিয়ম মেনে চলতে হয়।
অন্যদিকে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ডাচ-মরোক্কান ফুটবলার নুসাইর মাজরাউই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের মতো শারীরিক পরিশ্রমের সর্বোচ্চ জায়গায় কঠিন থেকে কঠিনতর জায়গায়। আর্সেনালের মতো কঠিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে প্রায় ১৪ ঘন্টা রোজা রেখেই খেলেছেন এবং দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছেন। রোববার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ইউনাইটেডের ১-১ ড্রয়ের ম্যাচে তিনি ছিলেন দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়।
মাজরাউইর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স
রাইট উইংব্যাকে খেলে মাজরাউই পুরো ম্যাচজুড়ে আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দিয়েছেন। দ্বিতীয়ার্ধে তিনি ছিলেন ভয়ংকর, একের পর এক আক্রমণে প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ভেদ করেছেন।
তিনি ম্যাচে মোট ৩৯ বার বল স্পর্শ করেন, ২১টির মধ্যে ১৭টি সফল পাস দেন এবং তার পাসিং পারসেন্টেজ ছিল ৮১%। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, তিনি ৩টি কী-পাস দেন এবং ম্যাচের শেষ মুহূর্তে দলের অধিনায়কের জন্য একটি বড় সুযোগ তৈরি করেন।
রোজা রেখে কীভাবে এই পারফরম্যান্স?
মাজরাউই রোজা রেখেও মাঠে অবিশ্বাস্য কর্মক্ষমতা দেখিয়েছেন। তিনি ১০০% সফল ড্রিবল করেছেন, প্রতিপক্ষের তিনটি গ্রাউন্ড ডুয়েল ও সবকটি এরিয়াল ডুয়েল জিতেছেন। পাশাপাশি, তিনটি ক্লিয়ারেন্স ও দুটি ইন্টারসেপশন করেছেন। এত কিছুর পরও, তিনি ক্লান্ত হননি কিংবা তার পারফরম্যান্সে কোনো ভাটা পড়েনি।
অন্যদিকে, শামি খেলেছেন বিশ্রাম ও নির্দিষ্ট ডায়েট মেনে। তিনি ফিটনেসের কথা ভেবে রোজা রাখেননি এবং ভারতের হয়ে ৫ ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়েছেন।
ত্যাগ নাকি পেশাদারিত্ব?
এই তুলনা ফুটবল ও ক্রিকেটের মধ্যে শারীরিক চাহিদার পার্থক্য তুলে ধরে। তবে একই সঙ্গে এটি প্রশ্ন তোলে—একজন খেলোয়াড়ের ধর্মীয় বিশ্বাস ও পেশাদারিত্বের মধ্যে সামঞ্জস্য আনা কতটা সম্ভব? মাজরাউই দেখিয়েছেন, রোজা রেখেও শীর্ষ পর্যায়ে খেলা সম্ভব। অন্যদিকে, শামির সিদ্ধান্ত মনে করিয়ে দেয়, আধুনিক পেশাদার ক্রীড়াবিদদের জন্য শারীরিক প্রস্তুতিও গুরুত্বপূর্ণ।