Homeখেলাধুলাপ্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা খরচে নতুন স্টেডিয়াম বানাচ্ছে ম্যানইউ 

প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা খরচে নতুন স্টেডিয়াম বানাচ্ছে ম্যানইউ 


ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ঐতিহাসিক ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এক নতুন যুগের সূচনা করতে চলেছে। ক্লাবের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অবকাঠামোগত প্রকল্পের ঘোষণা এসেছে, যেখানে ১০০,০০০ দর্শক ধারণক্ষমতার এক ‘আইকনিক’ স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ২ বিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা) বাজেটের এই স্টেডিয়ামটি বর্তমান ওল্ড ট্রাফোর্ডের কাছেই গড়ে তোলা হবে, যা ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় ফুটবল অ্যারেনা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।

প্রস্তাবিত সেই স্টেডিয়ামের নকশা

‘বিশ্বের সেরা ফুটবল স্টেডিয়াম গড়তে চাই’— এমন উচ্চাকাঙ্ক্ষী স্বপ্ন দেখছেন ক্লাবের সহ-মালিক স্যার জিম র‌্যাটক্লিফ, যিনি আশা করছেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ এক দীর্ঘ আলোচনা ও গবেষণার পর সিদ্ধান্ত নেয়, তারা ওল্ড ট্রাফোর্ড সংস্কার না করে সম্পূর্ণ নতুন এক অত্যাধুনিক স্টেডিয়াম নির্মাণ করবে।

বিশ্ববিখ্যাত স্থপতি প্রতিষ্ঠান ফস্টার এন্ড পার্টনার্স নতুন স্টেডিয়ামের নকশা করেছে। এটি হবে এক ছাতা-আকৃতির অত্যাধুনিক স্থাপনা, যার কেন্দ্রীয় চত্বরে থাকবে ঐতিহ্যবাহী ট্রাফালগার স্কয়ারের দ্বিগুণ আয়তনের এক বিশাল পাবলিক প্লাজা। স্টেডিয়ামের অন্যতম আকর্ষণ হবে তিনটি সুবিশাল মাস্ট, যা ‘দ্য ট্রাইডেন্ট’ (ত্রিশূল) নামে পরিচিত হবে এবং ২০০ মিটার উঁচু হবে— যা ২৫ মাইল দূর থেকেও দৃশ্যমান থাকবে।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বর্তমানে ১ বিলিয়ন পাউন্ডের ঋণে থাকলেও, তারা কীভাবে এই স্টেডিয়ামের জন্য অর্থায়ন করবে তা এখনো স্পষ্ট করেনি। তবে ব্রিটিশ সরকার এই প্রকল্পের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে এবং অর্থমন্ত্রী র‍্যাচেল রিভস এটিকে সমর্থন দিয়েছেন।

ওল্ড ট্রাফোর্ড ১৯১০ সাল থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ঘরের মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্টেডিয়ামের বেহাল দশা ফুটবলপ্রেমীদের হতাশ করেছে। ছাদ থেকে পানি চুঁইয়ে পড়া এবং পরিকাঠামোগত দুর্বলতা নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়েছিল।

২০০৬ সালের পর থেকে কোনো বড় সংস্কার হয়নি স্টেডিয়ামটিতে। ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ নতুন স্থাপনার পরিকল্পনা তৈরির আগে সোফি স্টেডিয়াম (লস অ্যাঞ্জেলস) ও সান্তিয়াগো বার্নাবেউ (রিয়াল মাদ্রিদ)-এর সম্প্রসারণ প্রকল্প নিয়ে গবেষণা করেছে।

তবে পুরনো ওল্ড ট্রাফোর্ড কীভাবে ব্যবহৃত হবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ক্লাবের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এটি শুধুমাত্র নারী ও যুব দলের জন্য ছোট করে রাখার পরিকল্পনাও আর্থিকভাবে লাভজনক নয়।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, এই প্রকল্প শুধুমাত্র ক্লাবের জন্যই নয়, গোটা শহরের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখবে। তাদের দাবি,

  • ৯২,০০০ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে
  • ১৭,০০০ নতুন বাড়ি নির্মাণ করা হবে
  • প্রতিবছর ১.৮ মিলিয়ন অতিরিক্ত পর্যটক আকৃষ্ট করবে
  • বার্ষিক ৭.৩ বিলিয়ন পাউন্ড যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে

‘এটি শুধুমাত্র স্টেডিয়ামের প্রকল্প নয়, এটি গোটা ম্যানচেস্টারের সবচেয়ে বড় পুনর্গঠনের অংশ। ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকের পর এটি হবে সবচেয়ে বড় আর্থিক উন্নয়ন প্রকল্প,’— বলছেন গ্রেটার ম্যানচেস্টারের মেয়র অ্যান্ডি বার্নহ্যাম।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কিংবদন্তি কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন নতুন স্টেডিয়ামের পক্ষে জোরালো মত প্রকাশ করেছেন।

‘ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সর্বদাই সেরার জন্য লড়াই করবে, মাঠে এবং মাঠের বাইরে। ওল্ড ট্রাফোর্ড আমাদের স্মৃতিতে চিরকাল থাকবে, কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য আমাদের সাহসী হতে হবে।’

ওল্ড ট্রাফোর্ড ছাড়ার বিষয়টি অনেক সমর্থকের জন্য আবেগপূর্ণ হলেও, ক্লাবের কর্মকর্তারা এটিকে নতুন এক যুগের সূচনা হিসেবে দেখছেন।

নতুন স্টেডিয়ামের নির্মাণ পরিকল্পনা

  • প্রিফ্যাব্রিকেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে, যেখানে ১৬০টি পৃথক অংশ শিপিং করে আনা হবে।
  • নির্মাণ সামগ্রী ম্যানচেস্টার শিপ ক্যানাল দিয়ে আনা হবে
  • সম্পূর্ণ এলাকা পরিবেশবান্ধব ও সহজে হাঁটার উপযোগী করা হবে
  • স্টেডিয়ামের অভ্যন্তরীণ ডিজাইন বিশ্বমানের ভিআইপি বক্স ও প্রযুক্তিনির্ভর অভিজ্ঞতা দেবে

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের নতুন স্টেডিয়াম শুধু ইংল্যান্ড নয়, সমগ্র বিশ্ব ফুটবলে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে যাচ্ছে। এটি শুধুমাত্র ক্লাবের ভক্তদের জন্য নয়, ম্যানচেস্টারের অর্থনীতির জন্যও এক বিশাল ইতিবাচক পরিবর্তন বয়ে আনবে বলে আশা ক্লাব কর্তৃপক্ষের।

স্যার জিম র‌্যাটক্লিফের ভাষায়, ‘আমরা হয়তো বিশ্বের সবচেয়ে আইকনিক ফুটবল স্টেডিয়াম গড়তে যাচ্ছি।’





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত