কখনো তিনি ছিলেন ‘নতুন মেসি’, কখনো বা ‘নতুন রোনালদিনহো’। ২০০৬ সালে বার্সেলোনায় অভিষেকের পর ফুটবলবিশ্ব মুগ্ধ হয়েছিল তার পায়ের জাদুতে। কিন্তু সেই সম্ভাবনার গল্প অকালেই থেমে যায়। ৩১ বছর বয়সে ফুটবলকে বিদায় জানিয়ে মেক্সিকান এই তারকা নাম লিখিয়েছেন তেল ব্যবসায়, যেখানে তিনি এখন বছরে আয় করছেন তিন লাখ ডলারেরও বেশি, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৩৭ কোটির সমান।
জিওভানি দস সান্তোস ২০০৬ সালে বার্সেলোনার হয়ে তার পেশাদার ফুটবল যাত্রা শুরু করেন। ২০০৭/০৮ মৌসুমে ফ্রাঙ্ক রাইকার্ডের অধীনে ৩৭টি ম্যাচে ৪ গোল ও ৭টি অ্যাসিস্ট করে তিনি আলোচনার শীর্ষে উঠে আসেন। তার খেলা দেখে অনেকেই বলেছিলেন, তিনি লিওনেল মেসি এবং রোনালদিনহোর যোগ্য উত্তরসূরি হতে চলেছেন।
তবে, পেপ গার্দিওলা ২০০৮ সালে বার্সার কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর দস সান্তোসের জন্য পরিস্থিতি বদলে যায়। গার্দিওলার পরিকল্পনায় জায়গা না পাওয়ায় তিনি ক্লাব ছাড়তে বাধ্য হন।
বার্সা ছাড়ার পর দস সান্তোস যোগ দেন টটেনহ্যাম হটস্পারে, কিন্তু প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটিতে তিনি ব্যর্থ হন। এরপর একে একে ইপসউইচ টাউন, গালাতাসারাই, রেসিং সান্তান্দার, মায়োর্কা, এবং ভিয়ারিয়াল—সবখানেই ছিল অস্থিরতা।
২০১৫ সালে মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ক্লাব এলএ গ্যালাক্সিতে যোগ দেন দস সান্তোস। ২০১৮ সাল পর্যন্ত সেখানে খেললেও আশানুরূপ সাফল্য পাননি। পরবর্তীতে ক্লাব আমেরিকার হয়ে ক্যারিয়ারের ইতি টানেন তিনি।
ক্লাব ক্যারিয়ারে অনিশ্চয়তা থাকলেও মেক্সিকান জাতীয় দলে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ২০০৫ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপজয়ী দলে তিনি ছিলেন অন্যতম তারকা। ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে মেক্সিকোকে সোনার পদক জেতাতে তার ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়।
২০২০ সালে ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার পর দস সান্তোস সম্পূর্ণ নতুন পথে হাঁটেন। তেল ব্যবসায় বিনিয়োগ করে তিনি বর্তমানে বছরে তিন লাখ ডলারেরও বেশি আয় করছেন। মেক্সিকোর একটি তেল কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে তিনি এখন একজন সফল ব্যবসায়ী।
ফুটবলের মাঠে তার ক্যারিয়ার হয়তো প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি, কিন্তু ব্যবসায়িক জীবনে জিওভানি দস সান্তোস দেখিয়ে দিয়েছেন, সাফল্যের পথ সবসময় সরলরেখায় চলে না।