বাংলাদেশ যখন টেস্ট মর্যাদা পায়, তখনই দেশের ক্রিকেটে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। সেই টেস্ট জার্নির একেবারে শুরুতে, ২০০১ সালে বাংলাদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো সফরে আসে আফ্রিকার শক্তিশালী দল জিম্বাবুয়ে। দুই দলের ক্রিকেট ইতিহাসে এই সিরিজটি ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ — কারণ এটি ছিল বাংলাদেশের নিজেদের মাটিতে টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় সিরিজ এবং জিম্বাবুয়ের সঙ্গে প্রথম মুখোমুখি লড়াই। সময়ের ব্যবধানে বদলে গেছে দল, পাল্টেছে শক্তিমত্তা, কিন্তু এই সফরের স্মৃতি আজও অনেকের কাছে বিশেষ।
২০০১ সালের নভেম্বর মাস। জিম্বাবুয়ে দল পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে বাংলাদেশে আসে। তখন জিম্বাবুয়ের দলে ছিলেন হিথ স্ট্রিক, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, গ্রান্ট ফ্লাওয়ার, হেনরি ওলোঙ্গা, গায় উইটল—যারা সবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিজ্ঞ নাম। অন্যদিকে বাংলাদেশ ছিল টেস্ট নবাগত। সফরে অনুষ্ঠিত হয় দুইটি টেস্ট ম্যাচ।
জিম্বাবুয়ে দল ৮ নভেম্বর ২০০১ সালে ঢাকায় প্রথম টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে তারা ১০৭ রানে অলআউট হয়। জিম্বাবুয়ে তাদের প্রথম ইনিংসে ৪৩১ রান করে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে তারা ১২৫/৩ রান করে, কিন্তু বৃষ্টির কারণে শেষ দুই দিনে খেলা না হওয়ায় ম্যাচটি ড্র হয়।
দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচটি চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। এই ম্যাচে জিম্বাবুয়ে ৮ উইকেটে জয় লাভ করে এবং সিরিজটি ১-০ ব্যবধানে জিতে নেয়। সিরিজে বাংলাদেশের পক্ষে হাবিবুল বাশার সর্বোচ্চ ২৪৯ রান করেন, আর তরুণ মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ৮ উইকেট নেন। জিম্বাবুয়ের পক্ষে ক্রেইগ উইশার্ট ২০৮ রান করেন এবং গ্রান্ট ফ্লাওয়ার ৮ উইকেট নেন।
এই সিরিজ বাংলাদেশের জন্য ছিল শেখার সিরিজ। আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটের রীতিনীতি, মানসিক চাপ, অভিজ্ঞতার পার্থক্য—সবকিছুর মুখোমুখি হয়েছিলেন তৎকালীন ক্রিকেটাররা। জিম্বাবুয়ের মতো অভিজ্ঞ ও দক্ষ দলের বিপক্ষে খেলা, বিশেষ করে অ্যান্ডি-গ্রান্ট ফ্লাওয়ারদের মতো ক্রিকেটারদের সামলানো ছিল বিশাল চ্যালেঞ্জ।
এই সফরই পরবর্তী বছরগুলোতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের মান উন্নয়নের ভিত্তি তৈরি করে দেয়। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বাংলাদেশ এখন অনেক পরিণত দল বলা চলে।
২০২৫ সালে আবারও বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে টেস্ট সিরিজ মাঠে গড়াতে যাচ্ছে। তবে এবার দৃশ্যপট একেবারে ভিন্ন। বাংলাদেশ এখন বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ, বিশ্বকাপে নিয়মিত দল, আর হোম কন্ডিশনে দুর্দান্ত শক্তি। এই সিরিজকে ঘিরে তাই অতীত আর বর্তমানের এক মধুর তুলনা তৈরি হয়েছে।