লিওনেল মেসির উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচিত বার্সেলোনার বিস্ময়বালক লামিন ইয়ামাল যখন স্পেনের জাতীয় দলকে বেছে নিলেন, তখন সেটি শুধুই একটি ফুটবলীয় সিদ্ধান্ত ছিল না—এর পেছনে ছিল রাজনৈতিক ও পারিবারিক চাপের জটিল এক কাহিনি। প্রাক্তন রয়্যাল স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের (আরএফইএফ) প্রধান আলবার্ট লুকে দাবি করেছেন, ইয়ামালের বাবা নাকি হত্যার হুমকি পেয়েছিলেন, শুধুমাত্র তার ছেলের স্পেনকে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে!
মাত্র ১৭ বছর বয়সেই স্পেনের জাতীয় দলের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছেন ইয়ামাল। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে লা রোহা-র হয়ে অভিষেক হওয়া এই বিস্ময়কর প্রতিভা জন্মসূত্রে মরক্কোর নাগরিকত্বও পেতেন, কেননা তার বাবা মরক্কান। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই বার্সেলোনার উপকণ্ঠে বেড়ে ওঠা ইয়ামাল স্পেনের হয়ে খেলতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।
লুকে দাবি করেছেন, মরক্কোর সরকার ও তাদের জাতীয় দলের কোচ ইয়ামালকে দলে ভেড়ানোর জন্য তার পরিবারের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছিল।
‘এটি মোটেও সহজ সিদ্ধান্ত ছিল না,’ স্প্যানিশ রেডিও ক্যাডেনা সের-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লুকে বলেন। ‘মরক্কোর কোচ তার পরিবারকে বোঝাতে গিয়েছিলেন, এমনকি মরক্কোর সরকারও তাকে দলে টানার জন্য চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ইয়ামাল নিজেই আমাকে বলেছিল, ‘আমি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। আমাকে চারদিক থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু আমি স্পেনের হয়েই খেলব।’
তবে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্যটি এসেছে ইয়ামালের বাবাকে নিয়ে। আলবার্ট লুকে জানান, ‘ইয়ামালের বাবা আমাকে বলেছিলেন, ‘মরক্কোতে আমাকে মেরে ফেলা হবে।’ তিনি এমন কিছু কথা বলেছেন, যা প্রকাশ করাটা বোধহয় ঠিক হবে না।’
মরক্কোর জনগণের একটি অংশ বিশ্বাস করে, ইয়ামালের মতো প্রতিভার মরক্কোর হয়ে খেলা উচিত ছিল। কিন্তু ইয়ামাল নিজে জন্ম থেকেই স্পেনে বেড়ে উঠেছেন এবং সেখানে ফুটবলীয় পরিচর্যা পেয়েছেন। তবুও এই সিদ্ধান্তে তার বাবার জীবন বিপদের মুখে পড়বে, এমন তথ্য নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর!
এত বিতর্কের পরও ইয়ামাল এখন স্পেনের জাতীয় দলে অপরিহার্য সদস্য। তিনি নেশনস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে দুই লেগেই শুরুর একাদশে থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তার আগে লা লিগায় ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বার্সেলোনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ম্যাচে মাঠে নামতে হবে।
বার্সা আজ ওসাসুনার মুখোমুখি হবে, এরপর বেনফিকার বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগ ও তারপর অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে কঠিন অ্যাওয়ে ম্যাচ।
ফুটবল বরাবরই মাঠের খেলা থাকেনি, বরং কখনো কখনো এটি হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক ও সামাজিক দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দু। লামিন ইয়ামালের জাতীয় দল নির্বাচন সেই বিতর্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে। যখন একজন তরুণ প্রতিভাকে শুধুমাত্র একটি দেশকে বেছে নেওয়ার কারণে এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, তখন সেটি ফুটবলীয় সিদ্ধান্তের বাইরেও এক নতুন মাত্রা তৈরি করে।