সম্মানিত সহকর্মীবৃন্দ,
আজ মহফুজ আলমের পোস্টে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা উঠে এসেছে, যা আমাদের জাতীয় পরিচয় এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। পোস্টের একাংশে এমন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, একজন মুক্তিযোদ্ধা যতোই সাহসিকতার সাথে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখুক না কেন, তিনি যদি কোনো অন্যায় করে থাকেন, তাহলে সেই কাজের জন্য তাকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে! এটি বোঝায় যে মুক্তিযোদ্ধাদের এখন সন্দেহের চোখে দেখা হবে এবং তাদের নানা কর্মকাণ্ড পরীক্ষা-নিরীক্ষার আওতায় আনা হতে পারে। যদিও দেশের প্রতিটি নাগরিকের মতো মুক্তিযোদ্ধারাও আইনের অধীনে বিচারযোগ্য, তবে কেন বিশেষ করে শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধাদেরই লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে?
এই ন্যারেটিভটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে। আপনারা লক্ষ্য করুন, প্রথমে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে শেখ হাসিনাকে ভালো বলা হয়েছিল, পরে শেখ হাসিনাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে বঙ্গবন্ধুকে প্রশংসা করা হলো। এরপর একে একে চার জাতীয় নেতার ওপর সন্দেহ প্রকাশ করা হলো, আর এখন মুক্তিযোদ্ধাদের চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এ প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য যেন মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অবদানকে ক্ষুণ্ণ করা।
স্পষ্টত, এর পেছনে একটি সুগভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে, যার মাধ্যমে আমাদের ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা চলছে। তারা ইতিহাসকে নিজেদের মত করে উপস্থাপন করে দাবি করছে, ভারত পাকিস্তানকে দ্বিখণ্ডিত করেছে, পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কোনো গণহত্যা চালায়নি, মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের চর ছিল, আর জামাতে ইসলামীরা নাকি দেশপ্রেমিক। এটি নিছকই ইতিহাস বিকৃতি নয়, বরং এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করার একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বলা হচ্ছে, ১৯৭১ পরবর্তী কর্মকাণ্ডের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার হতে পারে, অথচ একাত্তরের সময় যারা ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল, তাদের নিয়ে কোনো কথা বলা হচ্ছে না। কেন এই বৈষম্য? কেন তাদের বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না, যাদের কারণে আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামে এত রক্ত ঝরেছিল? কেন শুধু মুক্তিযোদ্ধাদেরই বিচারের প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, অথচ জামাতে ইসলামীর অপকর্ম নিয়ে নীরবতা পালন করা হচ্ছে?
আমরা ইতিহাস বিকৃত করে জাতির পিতার অবদানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার এই প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অবমাননা করে যারা বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে, তাদের প্রচেষ্টা জাতির স্বাধীনতার জন্য সরাসরি হুমকিস্বরূপ। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতাকে যারা ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায়, তাদের প্রতিহত করা আমাদের দায়িত্ব।
আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের জাতি এমন এক সংগ্রামের ফল যা গৌরবময় ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। যারা এই ইতিহাসকে বিকৃত করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের দৃঢ় অবস্থান সংহত করা উচিত। জাতির পিতার নেতৃত্বে যে সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, সেই গৌরবময় ইতিহাস চিরকাল অম্লান থাকবে।
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু
#ATeam 20141137