Homeআওয়ামী লীগঅবৈধ ও অসাংবিধানিক প্রশাসন কতৃক প্রকাশিত মনগড়া অর্থনীতি শ্বেতপত্রের প্রতিবাদে বাংলাদেশ আওয়ামী...

অবৈধ ও অসাংবিধানিক প্রশাসন কতৃক প্রকাশিত মনগড়া অর্থনীতি শ্বেতপত্রের প্রতিবাদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিবৃতি

—-

১. অবৈধ ও অসাংবিধানিক ফ্যাসিস্ট ইউনূস প্রশাসনের নির্দেশে প্রকাশিত হ’ল “অর্থনীতি শ্বেতপত্র” (নভেম্বর ২০২৪)। রচিত হয়েছে ইংরেজি ভাষায়। শ্বেতপত্রটি প্রণয়ন করেছে ১২ সদস্যের “শ্বেতপত্র কমিটি ২০২৪”, শিরোনাম “White Paper on State of the Bangladesh Economy: Dissection of a Development Narrative”. এই শ্বেতপত্রটি রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়েছে; যেখানে গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ শাসনামলে দেশের অর্থনীতি নিয়ে অবৈজ্ঞানিক, মনগড়া ও অবাস্তব কথা রচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এটার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যান করছি এবং এটার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরছি।

পদ্ধতিগত’ বিষয়াদি: অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতত্ত্ব :

২. সদ্য প্রকাশিত “বাংলাদেশ অর্থনীতির শ্বেতপত্র”-এর মর্মার্থ বুঝতে কয়েকটি বিষয় বলা জরুরি: (ক) প্রণেতাদের সবাই আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী এবং ইউনুস সরকারের সুবিধাভোগী; (খ) শ্বেতপতপত্রের কোথাও আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের কোনোই উল্লেখ নেই অথচ প্রণেতাদের প্রায় সবাই অতীতে আওয়ামী লীগ সরকারের ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রশংসা করেছেন, প্রশংসা করেছেন উন্নয়নের সামাজিক অনেক দিক, প্রশংসা করেছেন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গ্রাজুয়েশনের; (গ) যদিও বা প্রণেতারা উল্লেখ করেছেন যে তাদের লক্ষ হলো দেশের অর্থনীতিতে যা ঘটেছে তার কার্যকারণ নিরুপণ করা কিন্তু এ কাজটি করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। কারণ নির্মোহ/বস্তুনিষ্ঠ তথ্য ও তত্ত্বভিত্তিক কোনো কার্যকরণ তারা নিরুপণ করতে পারেননি; (ঘ) শ্বেতপত্রের গবেষণার পদ্ধতিতাত্বিক ভিত্তি (Methodological Foundation) শুধু দুর্বলই নয় তা একপেশে। এখানে মূল পদ্ধতি হলো সেসব বিষয়ে জোর দেয়া যা দিয়ে পপুলিস্ট পদ্ধতি মেনে কিছু কিছু বিষয়ে যুক্তিহীন উচ্চবাচ্য করে মূল বিষয়ে এড়িয়ে যাওয়া যায়। এ পদ্ধতি শুধু একপেশেই নয় তা অযৌক্তিক ও অবৈজ্ঞানিক; (ঙ) সব কিছু মিলে শ্বেতপত্র প্রণেতারা যা করার চেষ্টা করেছেন তা হলো বলার চেষ্টা করা যে আওয়ামী লীগ শাসনামলের গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজে তেমন কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি। আর এ কারণেও শ্বেতপত্রটি গভীর অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং এক কথায় বর্জনীয়।

অর্থপাচার: অবাস্তব অতিকথন :

৩. শ্বেতপত্রে অভিযোগ করা হয়েছে যে গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হয়েছে ২৮ লাখ কোটি টাকা। অবশ্য শ্বেতপত্রে অর্থপাচার সংশ্লিষ্ট হিসেবপত্তরের বিজ্ঞানসম্মত কোনো পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়নি হিসেবটি মনগড়া এবং উদ্দেশ্যগত কারণেই অতিমূল্যায়ন দোষে দুষ্ট। উল্লেখ্য যে গত ১৫ অর্থবছরে (২০০৯-১০/২০২৩-২৪) বাংলাদেশে মোট সরকারি বাজেটের পরিমাণ প্রায় ৫৭ লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ বার্ষিক গড় বাজেট প্রায় ৩ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা। শ্বেতপত্রের অভিযোগ অনুযায়ী দেশ থেকে বছরে গড়ে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার কোটি টাকা অর্থ পাচার হয়েছে। অর্থাৎ দেশ থেকে যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে তার পরিমাণ হবে দেশের বাজেটের ৪৯ শতাংশ। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো তাহলে সরকারের বাজেট অনুযায়ী উন্নয়ন ও পরিচালন কার্যক্রম কীভাবে সম্পন্ন হলো? এসব প্রশ্নের কোনো সদুত্তর শ্বেতপত্রে নেই। থাকার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। কারণ তারা ধরেই নিয়েছেন যে অর্থপাচার নিয়ে যত বেশি অঙ্কের-বড় অঙ্কের কথা বলা সম্ভব তা-ই বলতে হবে। যুক্তির বিষয়াদি এখানে গৌণ বিষয়।অর্থপাচার নিয়ে শুধু অতিকথনই হয়নি সেই সাথে কোন খাত থেকে কার দ্বারা কিভাবে কত পাচার হয়েছে এসব নিয়ে শ্বেতপত্রে কোনো কথা নেই, নেই কোনো ইঙ্গিত।

প্রবৃদ্ধি: বস্তুগত ও নৈতিক দ্রব্য উৎপাদন উন্নয়ন স্বীকার করা হয়নি:

: (৪) শ্বেতপত্রে গত ১৫ বছরের অথনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে যে উল্লেখযোগ্য অর্জন (৫%-৮.২%) তার স্বীকৃতি নেই। সম্ভবত প্রবৃদ্ধি সংশ্লিষ্ট বাস্তব এ সত্যটি স্বীকার করলে অনেক কিছুই তারা বলতে পারতেন না – এখানেই ইতিবাচক উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের বিষয়টি তাদের আগ্রাহ্য করতে হয়েছে। তাদের নিয়তেই সমস্যা। উল্লেখ্য যে, গত ১৫ বছরে আমরা যেমন বস্তুগত উৎপাদনে যথেষ্ট এগিয়েছি তেমনি নৈতিক দ্রব্য উৎপাদনেও (যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি) অনেক এগিয়েছি। আর এসব কারণেই এমনকি নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বহুবার বলেছেন যে আওয়ামী লীগ শাসনামলে বাংলাদেশ সামাজিক উন্নয়ন সূচকে এমনকি প্রতিবেশী ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে।

রিজার্ভ আয় অস্বীকার:

(৫) ২০০৯ সালে (আওয়ামী লীগ শাসনামলের শুরুর দিকে) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৭.৪৭ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২১ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। আর মাথাপিছু আয় একই সময়ে ৬৮৬ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছিল ২,৮৪১ ডলার। অর্থপাচারসহ অন্যান্য যেসব নেতিবাচক বিষয়দি নিয়ে শ্বেতপত্র অতিকথন করেছে তা ঠিক হলে রিজার্ভ প্রবৃদ্ধি মাথাপিছু আয় তো এমন রেকর্ড পরিমাণ হত না। এসবের পাশাপাশি একথাও বিচার করতে হবে যে ২০০৯ সালে দেশের জিডিপি ছিল ১০২ বিলিয়ন ডলার যা ২০২৪-এর মাঝামাঝি হয়েছে ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার।

উন্নয়ন প্রকল্পের সাফল্য এড়িয়ে গেছেন:

(৬) গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে নিজ অর্থে পদ্মা সেতু, ঢাকার মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেলের মতো মেগা প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন হয়েছে। এসবে দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উপকার ভোগ করছেন। এসব মেগা প্রকল্প ছিলো আমাদের দেশের জন্য কল্পনাতীত বিষয়। এসব মেগা প্রকল্প নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণেতারা কোনো ধরনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যয়-উপকার বিশ্লেষণ না করেই গায়ের জোরে দুর্নীতির কথাবার্তা বলছেন যা অর্থনীতি শাস্ত্রের ন্যায়নীতি অনুযায়ী একপেশে বিধায় আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।

বৈদেশিক ঋণ-এর তুলনামূলক চাপ কমা অস্বীকার করছে:

(৭) শ্বেতপত্র প্রণেতারা বলছেন যে দেশ বিক্রি হয়ে গেছে। প্রমাণের জন্য বৈদেশিক ঋণের স্থিতির কথা উল্লেখ করছেন। কিন্তু সত্যটা হলো এরকম: জিডিপি-র অনুপাতে ২০০৯ সালে বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিলো ৩৫% যা কমে দাঁড়িয়েছে ২৫%-এ।

ইউনূস-এর ৪ মাসে ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতি:

(৮) অবৈধ ও অসাংবিধানিক ফ্যাসিস্ট ইউনূস প্রশাসনের বিগত ৪/৫ মাসে অর্থনীতির সকল ক্ষেত্র ধ্বংসপ্রাপ্ত। আর এ ধ্বংসযজ্ঞ থেকে দেশের মানুষের দৃষ্টি এড়াতেই প্রণিত হয়েছে শ্বেতপত্র। অবৈধ ইউনূস প্রশাসনের তিন মাসের মধ্যেই মানুষের জীবনজীবিকা ধ্বংসপ্রায়, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছ ২৫-৭৫ শতাংশ পর্যন্ত; সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে; বহু শিল্প কারখানা বন্ধ হয়েছে শিল্পোৎপাদন এক তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে; শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ প্রায়; স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে; কয়েক মাসেই শেয়ার বাজার থেকে উধাও হয়েছে ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা; আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে; সামাজিক নিরাপত্তার সরকারি ব্যবস্থার অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। এছাড়াও দুর্নীতিবাজ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ কল্যাণের ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সরকারকে ৬৬৬ কোটি টাকা প্রদানের রায় দিয়েছিল। ফ্যাসিস্ট ইউনূস ক্ষমতায় বসে ট্যাক্স ফাঁকির সেই মামলায় আদালত কর্তৃক ৬৬৬ কোটি টাকা সরকারকে দেওয়ার প্রদত্ত রায় প্রত্যাহার করে নিয়েছে।উন্নত দেশগুলোতে আমরা কী দেখি? সরকার প্রধানের নামে ফৌজদারী, আর্থিক কেলেংকারী বিভিন্ন মামলা কোর্টে যদি চলমান থাকে, তা ক্ষমতা খাটিয়ে প্রত্যাহার করিয়ে নেওয়ার নজির নাই এবং তার রায় যদি বিপক্ষে যায় তবে তিনি পদত্যাগ করেন। অনেক সময় অভিযোগ উঠার সাথে সাথেই পদত্যাগ করেন।

যাতে সঠিক তদন্ত এবং বিচারকার্য প্রভাবিত না হয়। দুর্নীতিবাজ ইউনূসের আইনি লড়াই করার সেই সৎ সাহস ছিল না এবং অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসেই সে প্রথমে নিজের দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহার করে নিল। সে যদি পরিবর্তন চাইত, সংস্কার করে ইতিবাচক ধারার প্রবর্তন করতে চাইত, তাহলে নিজের দুর্নীতি মামলা প্রত্যাহার করে নিত না। শুধু তাই নয়, সে খুব সুকৌশলে তার প্রতিষ্ঠানের কর মওকুফ করিয়ে নিয়েছে আগামী পাঁচ বছরের জন্যে। তার কোম্পানির মূল এসেট যদি এক বিলিয়ন ডলার হয় এবং তার কোম্পানির বছরে কর যদি ২৫ শতাংশ হয়, তাহলে সে কর মওকুফ করিয়ে নিয়েছে বছরে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার, টাকায় যা প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। পাঁচ বছরে যা কিনা প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার বা ১৫ হাজার কোটি টাকার উপরে। একদিকে সে দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহার এবং কর মওকুফ করিয়ে নিয়েছে, অন্য দিকে দেশের ব্যাংকে তারল্য সংকট দূর করার জন্য টাকা ছাপানো হয়েছে। তার পরও গ্রাহকেরা তাদের প্রয়োজনীয় টাকা উত্তোলন করতে পারছে না।

অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট ইউনূস-এর বিগত ৪/৫ মাসের অর্থনীতি ও সমাজের ধ্বংস-ধ্বস নিয়ে শ্বেতপত্রে কোনো কথা নেই। আসলে বাস্তব দুর্গতির মাত্রা সম্পর্কে ওরা জানে। আর সে কারণেই সাধারণ মানুষের মনোজগতে বর্তমান-চলমান দুর্গতি-দুরবস্থা আড়াল করতেই আওয়ামীলীগ শাসনামল নিয়ে কল্পকথা রচনা করেছেন শ্বেতপত্রে। এই শ্বেতপত্র প্রকাশের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট ইউনূস তার সময়ে ঘটে যাওয়া অর্থনৈতিক দুর্নীতি, শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি এবং অর্থপাচারের ঘটনাকে চাপা দেওয়ার অপচেষ্টা করছে। একই সাথে তার সরকারের ব্যর্থতাকে আড়াল করার জন্য পাঁয়তারা চালাচ্ছে। আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট ইউনূস প্রশাসনের দুরভিসন্ধিমূলক অপপ্রয়াস এবং অবৈজ্ঞানিক ও বাস্তবতাবিবর্জিত অলীক কথনের এই শ্বেতপত্রকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত