Homeঅর্থনীতিসোনালী পেপারের শেয়ার কেলেঙ্কারিতে সাকিব আল হাসান জড়িত

সোনালী পেপারের শেয়ার কেলেঙ্কারিতে সাকিব আল হাসান জড়িত


পুঁজিবাজারে পেপার ও প্রিন্টিং খাতে তালিকাভুক্ত সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেডের শেয়ার কারসাজিতে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এতে তাঁর সহযোগী ও নেতৃত্বদানকারী হিসেবে ছিলেন সমবায় অধিদপ্তরের উপনিবন্ধক ও শেয়ার ব্যবসায়ী আবুল খায়ের হিরু।

তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাকিব, হিরু, তাঁর পরিবারের সদস্য, তাঁদের প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক পার্টনারসহ মোট ১০ ব্যক্তি ও ৪ প্রতিষ্ঠানকে ৩১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজির তদন্ত করে এর সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেয়েছে।

তদন্তে দেখা গেছে, ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ অক্টোবরের মধ্যে শেয়ারটির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, যার মূল কারণ ছিল সিরিজ ট্রেডিং। একাধিক বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনারশিপ) হিসাব ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়। এই কারসাজির পেছনে ছিলেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও সমবায় অধিদপ্তরের উপনিবন্ধক আবুল খায়ের হিরু, যাঁরা এতে বিশাল অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করেন।

বিএসইসির এই দীর্ঘ তদন্ত শেষে শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি শাস্তির আওতায় আনার জন্য উল্লেখিত জরিমানা ধার্য করেছে। যেখানে সাকিব আল হাসান এবং আবুল খায়ের হিরু, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের এবং ব্যবসায়িক সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দণ্ড আরোপ করা হয়েছে।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যে, সাকিব আল হাসান এবং তাঁর পার্টনার হিরু, তাঁদের পরিবার এবং সহযোগীদের বিরুদ্ধে ২৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, পুঁজিবাজারে অনিয়মে জড়িতদের শাস্তির আওতায় এনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে কাজ করছে কমিশন।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িত আরও কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাঁদের বিরুদ্ধে জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। এই ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান হলো ডিআইটি কো-অপারেটিভ, আবুল কালাম মাতবর, কাজী সাদিয়া হাসান, কাজী ফরিদ হাসান, মোনার্ক হোল্ডিংস, মোনার্ক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট এবং সফটভেশন লিমিটেড। তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় জরিমানা আরোপ করা হয়েছে, যার মধ্যে দুটি বড় পরিমাণের জরিমানা রয়েছে। একটির পরিমাণ ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং অন্যটির পরিমাণ ২৬ কোটি টাকা। এর মানে হচ্ছে, এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মোট ৩৩ কোটি ২৫ লাখ টাকার জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।

এ ছাড়াও সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজিসংক্রান্ত একটি পৃথক জরিমানা আরোপ করা হয়েছে। এই জরিমানা শেয়ার কারসাজি ছাড়াও শেয়ার অধিগ্রহণ ও কর্তৃত্ব গ্রহণসংক্রান্ত বিধিমালা ভঙ্গ করার জন্যও আরোপিত হয়েছে। এতে অভিযুক্তদের, যেমন আবুল খায়েরসহ অন্যদের, প্রতি জনকে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এই জরিমানার মোট পরিমাণ ১৩ লাখ টাকা।

সাকিব আল হাসান দেশের বাইরে থাকায় তাঁর মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে জরিমানার বিষয়ে জানতে আবুল খায়ের হিরুর মোবাইলে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি নিয়ে অনেক বছর ধরে গুঞ্জন ছিল, তবে বিএসইসি তদন্ত শুরু করার পরই প্রমাণ মিলেছে। সাকিব আল হাসানের মতো জাতীয় তারকা এই কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ায় তাঁর বিশ্বস্ততা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে। যদিও সাকিব বা তাঁর পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করা হয়নি, তবে এটি তাঁর পেশাদারি জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি প্রমাণিত এবং জরিমানা ঘোষণা করার পর বিএসইসি আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে। যদিও এটি পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তবে ভবিষ্যতে ব্যবসায়িক স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এই পদক্ষেপ শেয়ারবাজারের জন্য সতর্কবার্তা এবং এমন ঘটনা ভবিষ্যতে প্রতিরোধে সহায়তা করবে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত