Homeঅর্থনীতিসেন্ট্রাল ফার্মার ক্ষতি শতকোটির বেশি

সেন্ট্রাল ফার্মার ক্ষতি শতকোটির বেশি


ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছে। কোম্পানির পুঞ্জীভূত লোকসান এখন শতকোটি টাকা ছাড়িয়েছে, এর ফলে ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধেও এখন ব্যর্থ হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে করের বকেয়া, বিক্রি বাড়াতে না পারা, উৎপাদন খরচের অতিরিক্ত চাপ এবং উৎপাদনের বহুমাত্রিক সীমাবদ্ধতা। এসব সমস্যার সবই কোম্পানির হালনাগাদ আর্থিক প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

২০২৪ সালের জুনে শেষ হওয়া অর্থবছরের আর্থিক হিসাব অনুযায়ী, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবসার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তবে এই অনিশ্চয়তার মধ্যে কোম্পানির শেয়ারদর প্রায় ৮৯ শতাংশ বেড়েছে। ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩-এ শেয়ারদর ছিল ৮ টাকা, যা গত ৪ ফেব্রুয়ারি ১৫ টাকা ১০ পয়সায় পৌঁছায়। এই সময়ের মধ্যে শেয়ারদর কিছুটা কমে ১৩ টাকায় লেনদেন হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ২১ জানুয়ারি কোম্পানির শেয়ারদরের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ জানতে চায় এবং ২৬ জানুয়ারি কোম্পানি জানায়, কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ারদর বেড়েছে।

তবে, কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন ও নিরীক্ষকদের তথ্য অনুযায়ী, পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক। ৩০ জুন ২০২৪ সালের মধ্যে কোম্পানির লোকসান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, যা সংকট আরও বাড়াচ্ছে। কোম্পানি ঋণের কিস্তি পরিশোধেও ব্যর্থ এবং এর মধ্যে রয়েছে ২৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকার দীর্ঘমেয়াদি ঋণ। নিরীক্ষকেরা জানিয়েছেন, কোম্পানি ঋণের বর্তমান অবস্থার বিষয়ে ব্যাংককে চিঠি পাঠালেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

প্রতিবেদনে নিরীক্ষক আরও বলেছেন, কোম্পানি বিভিন্ন ঋণদাতার কাছ থেকে ৮৮ লাখ ১৭ হাজার ২৫২ টাকা ঋণ নিয়েছে, তবে ঋণের বিশদ তথ্য এবং সময়সীমা সরবরাহ করা হয়নি, ফলে এগুলো যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কোম্পানি কর বাবদ ২৮ কোটি ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৯৫২ টাকা প্রভিশন রেখেছে, তবে এটি ২০২২ সালের ৩০ জুনের পর থেকে অপরিবর্তিত রয়েছে। এর পাশাপাশি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০০৭-০৮ থেকে ২০২০-২১ পর্যন্ত প্রায় ৯৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা দাবি করেছে, যা এখনো মেটানো হয়নি। কোম্পানি এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। কোম্পানি যেসব ব্যয় করেছে, তার সঠিক প্রমাণ দেখাতে পারেনি। অগ্রিম প্রদান, আমানত, পূর্বপরিশোধিত ব্যয় এবং পাওনার সঠিক তথ্য বা প্রমাণ সরবরাহ করা হয়নি। নিরীক্ষকেরা জানিয়েছেন, কোম্পানি প্রায় সব ব্যয় নগদে পরিশোধ করেছে, ফলে লেনদেনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া, কাঁচামাল কেনায় উৎসে কর কর্তন হয়নি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে কর্তিত কর সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি।

এ ছাড়া কোম্পানির সম্পদ ও যন্ত্রপাতি হিসাবের বিস্তারিত তথ্যও অনুপস্থিত। কোম্পানির ১০৬ কোটি ৬ লাখ ৯২ হাজার ৭১৫ টাকার সম্পদের তালিকা ছিল, তবে সেগুলোর প্রমাণ সাপেক্ষে কোনো নিবন্ধন বই (রেজিস্টার) সংরক্ষণ করা হয়নি, যার কারণে সম্পদের সঠিকতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এর পাশাপাশি, কোম্পানি মালিকানাধীন জমির দলিল নিরীক্ষককে সরবরাহ করেনি এবং কোম্পানি জানায়, দলিলটি ব্যাংকের হেফাজতে রয়েছে। ফলে নিরীক্ষক জমির মালিকানার স্বত্ব যাচাই করতে পারেননি।

একইভাবে, কোম্পানির খুচরা যন্ত্রাংশের অস্তিত্ব এবং অন্যান্য খরচের প্রমাণ সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে এসব হিসাবের যথার্থতা নিয়েও সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া, কোম্পানি প্রায় ৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা পাওনা দেখিয়েছে, কিন্তু নিরীক্ষককে এই পাওনার সময়কাল এবং পাওনাদারের তথ্য সরবরাহ করা হয়নি। এতে কোম্পানির আর্থিক হিসাবের যথার্থতা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনসুর আহমেদ ও কোম্পানি সচিব তাজুল ইসলামকে ফোন করা হলেও তাঁরা ফোন রিসিভ করেননি। এর ফলে, কোম্পানির বর্তমান আর্থিক অবস্থার বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত