Homeঅর্থনীতিসামিটের ১,১১৩ কোটি টাকার কর ফাঁকি: এনবিআর

সামিটের ১,১১৩ কোটি টাকার কর ফাঁকি: এনবিআর


পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সামিট পাওয়ার লিমিটেডের কর ফাঁকির তথ্য পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। লভ্যাংশের ওপর উৎসে কর ফাঁকি এবং এর ফলে আরোপিত জরিমানার অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) অনুসন্ধানে এই কর ফাঁকির বিষয়টি উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া তথ্যমতে, সামিট পাওয়ার লিমিটেডের ৬৩ দশমিক ১৯ শতাংশ মালিকানা রয়েছে সামিট করপোরেশন লিমিটেডের কাছে। বাকি ৩৬ দশমিক ৮১ শতাংশ মালিকানা রয়েছে অন্য কোম্পানি এবং সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর হাতে।

আয়কর আইন, ২০২৩-এর ১১৭ ধারামতে, বাংলাদেশে নিবন্ধিত কোনো কোম্পানি বা অন্য কোনো কোম্পানির লভ্যাংশ প্রদানের সময় উৎসে কর কাটার নিয়ম রয়েছে। সামিট পাওয়ার লিমিটেড লভ্যাংশ দেওয়ার সময় সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ারহোল্ডারদের থেকে ২০ শতাংশ হারে উৎসে কর কেটে নিয়েছে। কিন্তু একই গ্রুপের প্রতিষ্ঠান সামিট করপোরেশন লিমিটেডকে লভ্যাংশ দেওয়ার সময় উৎসে কর কাটেনি। অথচ ওই প্রতিষ্ঠানই সামিট পাওয়ারের সর্বোচ্চ শেয়ারধারী। এর মানে সবচেয়ে বেশি কর ফাঁকি দিয়ে মুনাফা নিয়েছে।

এনবিআর আর্থিক প্রতিবেদন যাচাই করে দেখিয়েছে, সামিট পাওয়ার লিমিটেড ২০১৭-১৮ থেকে ২০২৩-২৪ সাল পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৯৭৫ কোটি ৫৭ লাখ ২৮ হাজার ৯২১ টাকা লভ্যাংশ দিয়েছে শেয়ারহোল্ডারদের। এর বিপরীতে ২০ শতাংশ হারে উৎসে করের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৯৫ কোটি ১১ লাখ ৪৫ হাজার ৭৮৪ টাকা। তবে কোম্পানি কেবল ৩৬ দশমিক ৮১ শতাংশ শেয়ারধারীর কাছ থেকে উৎসে কর কেটেছে ৭৬ কোটি ৭৭ লাখ ৪০ হাজার ৫৫৩ টাকা। কিন্তু ৬৩ শতাংশের বেশি শেয়ারধারী সামিট করপোরেশন লিমিটেডের ৩১৮ কোটি ৩৪ লাখ ৫ হাজার ২৩১ টাকা উৎসে কর কাটা হয়নি।

আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ৫৭ ধারা এবং আয়কর আইন, ২০২৩ এর ১৪৩ ধারায় নির্দিষ্ট উৎসে কর না কাটার অপরাধে কোম্পানিকে নতুন করে ১৪৬ কোটি ৭৩ লাখ ৭৩ হাজার ৫৮৪ টাকা জরিমানা দিতে হবে। অর্থাৎ, শুধু উৎসে কর না কেটে নেওয়ায় সামিট পাওয়ারকে ৪৬৫ কোটি ৭ লাখ ৭৮ হাজার ৮১৫ টাকা সরকারকে দিতে হবে।

শুধু সামিট পাওয়ার নয়, একই গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠান সামিট করপোরেশনও কর ফাঁকি দিয়েছে। এনবিআর সূত্র জানায়, সামিট করপোরেশনের ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ শেয়ারের মালিক সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। তিনটি কোম্পানিই সামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠান। সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল সিঙ্গাপুরভিত্তিক অনিবাসী কোম্পানি।

আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ধারা ১৮(৩) এবং আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ২৭(ঘ) অনুযায়ী, বাংলাদেশের কোনো কোম্পানি থেকে দেশের বাইরে পরিশোধ করা কোনো লভ্যাংশ বাংলাদেশে অর্জিত বলে গণ্য হবে।

এনবিআর সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি (ডিটিএএ) রয়েছে। এই চুক্তির অনুচ্ছেদ-১১ এর প্যারাগ্রাফ ১ ও ২ অনুসারে লভ্যাংশের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর কেটে নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে সামিট করপোরেশন লিমিটেড থেকে সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডকে দেওয়া লভ্যাংশের ক্ষেত্রে উৎসে কর কাটা হয়নি। এনবিআরের অনুসন্ধানে দেখানো হয়েছে, ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ সাল পর্যন্ত সামিট করপোরেশন লভ্যাংশ দিয়েছে ২ হাজার ৯১৭ কোটি ৭১ লাখ ৩২ হাজার ৩৭৪ টাকা। এর প্রায় সবটাই পেয়েছে সামিট ইন্টার‍ন্যাশনাল। কারণ, ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ মালিকানা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির হাতে; যাতে ৪৩৭ কোটি ৬৫ লাখ ৬৯ হাজার ৮৫৬ টাকা উৎসে কর ফাঁকি দিয়েছে কোম্পানিটি।

আয়কর অধ্যাদেশ ও আয়কর আইন অনুযায়ী, কর ফাঁকি দেওয়ার অপরাধে ২১০ কোটি ৭ লাখ ৫৩ হাজার ৫৩১ টাকা জরিমানা দিতে হবে কোম্পানিকে। এ ক্ষেত্রে জরিমানাসহ কোম্পানির কর ফাঁকির পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৪৭ কোটি ৭৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৭ টাকা।

সিআইসির প্রতিবেদন অনুসারে, এই কোম্পানির লভ্যাংশের ওপর মোট উৎসে কর ফাঁকির পরিমাণ ১ হাজার ১১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে গতকাল সামিট পাওয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল ওয়াদুদের নম্বরে ফোন করে বন্ধ পাওয়া গেছে। হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। কোম্পানি সচিব স্বপন কুমার পালের নম্বরও বন্ধ পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, সামিট পাওয়ারের ১৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র বা প্ল্যান্ট রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বর্তমানে ৫টি কেন্দ্রই বন্ধ। কেবল ১০টি চালু রয়েছে। বন্ধ থাকা কেন্দ্রগুলো হলো জাঙ্গালিয়া (গ্যাসভিত্তিক, ৩৩ মেগাওয়াট), মদনগঞ্জ (এইচএফও-ভিত্তিক, ১০২ মেগাওয়াট), আশুলিয়া (গ্যাসভিত্তিক, ১১ মেগাওয়াট), মাধবদী (ইউনিট-১, গ্যাসভিত্তিক, ১১ মেগাওয়াট) এবং চান্দিনা (ইউনিট-১, গ্যাসভিত্তিক, ১১ মেগাওয়াট)।

প্ল্যান্টগুলো বন্ধের কারণ হিসেবে কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়, গ্যাসস্বল্পতা, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চাহিদা না পাওয়ার কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন বন্ধ হয়েছে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত