Homeঅর্থনীতিসয়াবিন তেলের দাম বাড়লেও স্বাভাবিক হয়নি সরবরাহ

সয়াবিন তেলের দাম বাড়লেও স্বাভাবিক হয়নি সরবরাহ


বাজারে সয়াবিন তেল নিয়ে সৃষ্ট নৈরাজ্য নিরসনে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এতে প্রতি লিটারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ে আট টাকা করে। একইসঙ্গে এই মূল্যবৃদ্ধি বাস্তবায়নে তিনটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তবে সরকারের এই সিদ্ধান্তের কোনও কার্যকর ফলাফল বাজারে মেলেনি। এখনও সয়াবিন তেলের সংকটে ভুগছেন গ্রাহক এবং খুচরা বিক্রেতা।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, আমরা অর্ডার দিয়ে, অগ্রীম টাকা দিয়েও তেল পাচ্ছি না। তেলের সঙ্গে অন্যান্য পণ্য না কিনলে তেল দেয় না কোম্পানিগুলো। গ্রাহক পর্যায় থেকেও একই অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা বলছেন, দশ দোকান ঘুরলে এক দোকানে তেল পাই। কেউ কেউ দাম রাখে বেশি। আবার কেউ অন্যান্য পণ্য না কিনলে বিক্রি করছে না।

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিরপুর ১ ও ২ নম্বরের কাঁচাবাজার ও মহল্লার মুদি দোকানগুলো ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

প্রায় এক মাস ধরেই সয়াবিন তেলের সংকট চলছিল। তখনই ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতারা অনুমান করে বলেছিলেন, তেলের দাম হয়তো বাড়তে যাচ্ছে। তাদের অনুমানকে সত্য প্রমাণ করে গত ৯ ডিসেম্বর সরকার তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এতে প্রতি লিটার খোলা ও বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ে আট টাকা করে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম হয়েছে ১৭৫ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৫৭ টাকা।

এদিকে দাম বাড়ানোর পরে বাজারে পুরাতন মূল্যের তেল পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এখন নতুন বা পুরাতন কোনও মূল্যের তেলই পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব খুচরা বিক্রেতা পাচ্ছেন তাদেরও অন্য পণ্য কেনার বিনিময়ে পেতে হচ্ছে সয়াবিন তেল।

তেল বিক্রি নিয়ে বিক্রেতাদের ভাষ্য

মিরপুর ১ নম্বর কাঁচাবাজারের নোয়াখালী জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা বাবুল আহমেদ বলেন, ‘আমি ১৫ দিন আগে অর্ডার দিয়ে অগ্রীম টাকা দিয়ে রেখেছি। বৃহস্পতিবার আমাকে তিন কার্টন তেল দিয়ে গেছে। এই তিন কার্টন তেল কিনতে আমার ১০ হাজার টাকা লেগেছে কিন্তু আমাকে ১৫ হাজার টাকার আটা, পোলাওয়ের চাল আর লবন কিনতে হয়েছে। এখন আমি খালি তেল বিক্রি করা বন্ধ করে দিয়েছি। ১০ আইটেম মাল কেউ কিনলে আমি তেল দেই, না হলে দেই নাই। কারণ আমার নিজের কাছেই নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমি ডিস্ট্রিবিউটরদের চাপও দিতে পারি না। চাপ দিলে এই দুই-তিন কার্টন তেলও দেবে না।’

একই বাজারের ফারজানা ভ্যারাইটিজ স্টোরের বিক্রেতা ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের তেল দেয় না। আমরা ডিলারের কাছে বললে বলে তারা বলে, তেল নাই। ডিলার যদি না দিতে পারে তাহলে আমরা কীভাবে পাবো?’

আলিফ ভ্যারাইটিজ স্টোরের বিক্রেতা মো. রায়হান বলেন, ‘১৫ দিন আগে অর্ডার দিয়ে গতকাল দুই কার্টন তেল পেয়েছি। তারা মাল দিতে চায় না। বলে তেল নাই। কিন্তু আমি নিশ্চিত, কোম্পানির কাছে মাল আছে। তারা দাম বাড়ালো কিন্তু এখনও তেল দিচ্ছে না।’

মিরপুর ২ নম্বরের মুদি দোকান বিসমিল্লাহ জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা মো. জসিম বলেন, ‘কোম্পানি তেল দেয় না বিক্রি করবো কীভাবে। তাই এখন খোলা তেলই বিক্রি করি।’

খোলা তেল কত দামে বিক্রি করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১৮০ টাকা লিটার বিক্রি করছি।’

একই এলাকার আরেক মুদি দোকান মায়ের দোয়া জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা বলেন, ‘যারা তেলের সঙ্গে আটা-পোলাওয়ের চাল বা অন্য মাল বেশি অর্ডার করে তাদের তেল দেয়। আমার দোকানে বেশি মাল রাখতে পারি না বলে আমার এখানে দেয় না। আমি বিক্রিও করি না।’

ক্রেতারা যা বলছেন

বাজার করতে আসা মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘কতদিন ধরে তেল নিয়ে একটা খেলা চলছে। দশ দোকান ঘুরলে এক দোকানে তেল পাই। এলাকার দোকানেতো পাইই না। এভাবেই চলে যাচ্ছে।’

আরেক ক্রেতা সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যারা বলছে তেল নেই তাদের কাছে তেল আছে। বিক্রি করছে না। সামনে রোজা তখন হয়তো আরও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করবে।’

আহসান হাবীব বলেন, ‘তেলের দাম বাড়লো কিন্তু তেল পাই না। যেই দোকানে পাই সেখানে আবার সঙ্গে অন্যকিছু কিনতে হয়। নাইলে খালি তেল বিক্রি করে না। আবার যারা খালি তেল বিক্রি করে তারা বেশি দাম রাখে।’

কাউসার হোসেন নামের এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা আছি বিপদে। বেশি দাম দিয়ে কিনে খাবো সেটাও পাই না। আসলে ব্যবসায়ী আর সরকার যে কী চায়, সেটাই আমরা বুঝতে পারি না। তারা কী আরও দাম বাড়াতে চায়? ’

গত ৯ ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভোজ্যতেল পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশীরউদ্দিন। এ সময় বাণিজ্য সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিনসহ দেশের ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সে সময় প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ১৭৫ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৫৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর আগে বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল ১৪৯ টাকা লিটারে বিক্রি হতো।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত