Homeঅর্থনীতিসংকটেও দ্যুতি ছড়াল রপ্তানি খাত

সংকটেও দ্যুতি ছড়াল রপ্তানি খাত


নানা সংকটের মধ্য দিয়েও গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বর এক আশার প্রতিফলন হয়ে দাঁড়িয়েছিল, যেন বিলীন হওয়া বছরটির শেষ মুহূর্তে উজ্জ্বলতার দ্যুতি ছড়িয়ে গেল। এই সময়ের মধ্যে দেশের রপ্তানি খাত, যা জাতীয় অর্থনীতির মূল ভিত্তি প্রায় ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। অর্থাৎ দেশে উৎপাদিত চূড়ান্ত দ্রব্য ও সেবার রপ্তানির বাজারমূল্যের যে বৃদ্ধির হার হয়েছে, সেটিই ছিল এই প্রবৃদ্ধির মূলে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিসেম্বর মাসে দেশে রপ্তানি আয় বেড়ে ৪৬২ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা গত বছর একই সময় ছিল ৩৯৩ কোটি ডলার। এ সময় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ, যা দেশের বর্তমান অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক সিগন্যাল। এটি প্রমাণ করে, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি পোশাক এবং অন্যান্য রপ্তানি পণ্যের চাহিদা অব্যাহত রয়েছে। নভেম্বরে রপ্তানি আয় ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেড়েছিল, যা বছরের শেষ দিকে আরও শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দেখায়। তবে এই সাফল্যের পাশাপাশি শ্রমিক অসন্তোষ এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সংকট এখনো রয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এসব সমস্যা সমাধান না হলে ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কঠিন হতে পারে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে, রপ্তানি আয় মোট ২৪ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যেখানে ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশের প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। বিশেষত তৈরি পোশাক খাত, যেটি দেশের রপ্তানির অন্যতম মেরুদণ্ড, ১৩ দশমিক ২৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৯ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। ডিসেম্বর মাসে এই খাতের রপ্তানি আয় ৩ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার।

রপ্তানিকারকেরা মনে করেন, পোশাক রপ্তানির এই প্রবৃদ্ধি শুধু সংখ্যার সঙ্গে নয়, শিল্পের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার সঙ্গে জড়িত, যা দেশের প্রতি আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনবে এবং এটিকে টেকসই করবে। তাঁরা বিশ্বাস করেন, দেশের পোশাক খাতের সাফল্য এবং প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সরকার যেন প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করে, যাতে এই শিল্পের ভবিষ্যৎ নিরাপদ এবং স্থিতিশীল থাকে। তাঁদের মতে, একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল পরিবেশই দেশের পোশাক খাতকে বিশ্বের মঞ্চে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে, যা শুধু আয়ের ধারাকে দীর্ঘায়িত করবে না, বরং দেশের অর্থনীতিরও প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠবে।

এ বিষয়ে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আজকের পত্রিকাকে জানান, রপ্তানি আয় বাড়ছে, যা দেশের জন্য ভালো, তবে এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট সমাধান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে শূন্য সহনশীলতা এবং ব্যাংকিং খাতের সমস্যা সমাধান জরুরি। ঋণের সুদহার বাড়ার কারণে খেলাপি গ্রাহকের সংখ্যা বাড়বে এবং ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে সমস্যায় পড়ছেন। এর উন্নতি না হলে সম্ভাবনার রপ্তানি আবার ব্যাক টু প্যাভিলিয়নে নেমে যাবে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্যান্য শিল্পেও রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) হিমায়িত এবং জীবন্ত মাছ থেকে রপ্তানি আয় ১৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ বেড়ে ২৬৪ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২১৭ মিলিয়ন ডলার। একই সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকেও রপ্তানি আয় ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৫৭৭ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছর ছিল ৫২৩ মিলিয়ন ডলার।

কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় ৫৯৬ মিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে পাট ও পাটজাত পণ্যের ক্ষেত্রে ৮ দশমিক ১১ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং আয় দাঁড়িয়েছে ৪১৭ মিলিয়ন ডলারে, যা গত বছর ছিল ৪৫৪ মিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করে ১৫৮ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা গত বছরের ১২২ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় ২৯ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য থেকে রপ্তানি আয় ১২ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়ে ১১৪ দশমিক ৪২ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

চামড়ার জুতা রপ্তানি ৩০ দশমিক ৮০ শতাংশ বেড়ে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছর ছিল ২৭০ মিলিয়ন ডলার। তবে চামড়াজাত পণ্য থেকে ১১ দশমিক ১০ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছে এবং আয় ১৬২ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা গত বছর ছিল ১৮২ মিলিয়ন ডলার। কৃত্রিম চামড়ার জুতা রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, ৩৯ দশমিক ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে আয় হয়েছে ২৭৪ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছর ছিল ১৯৭ মিলিয়ন ডলার। হোম টেক্সটাইল খাতে ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেড়ে আয় দাঁড়িয়েছে ৪১১ মিলিয়ন ডলারে, যা গত বছর ছিল ৩৮১ মিলিয়ন ডলার।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত