ঈদের নতুন জামা-জুতার পর এখন ভিড় বেড়েছে টুপি ও আতরের দোকানে। পাঞ্জাবির সঙ্গে মিলিয়ে পছন্দের টুপি সংগ্রহে অনেকে ছুটছেন এক দোকান থেকে আরেক দোকানে। কেউ কেউ খুঁজে নিচ্ছেন উন্নত সুগন্ধিযুক্ত আতর। আবার নতুন জায়নামাজ ও তসবিহ কিনছেন কেউ কেউ।
রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, গুলিস্তান, কাঁটাবন, কাকরাইল ও এলিফ্যান্ট রোডের কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, ঈদকে কেন্দ্র করে দোকানে দোকানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ডিজাইনের টুপির সমাহার। বড়-ছোট যে যার চাহিদা মতো পছন্দের টুপি বাছাই করছেন। ফুটপাতের দোকানের চিত্রও একই।
এর মধ্যে বায়তুল মোকাররম মার্কেটের নিচতলায় টুপি ও আতরের দোকানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে এখানে দেশি টুপির পাশাপাশি বিদেশি বাহারি টুপিও পাওয়া যাচ্ছে। দেশি টুপি কেনা যাচ্ছে ১০০ থেকে হাজারের মধ্যে। আর ৫০০ থেকে ১০ হাজারের মধ্যে মিলছে উন্নত মানের বিদেশি টুপি।
বায়তুল মোকাররমের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, বাইরে থেকে তাদের বেশিরভাগ টুপির চালান আসে তুরস্ক, সৌদি আরব, কাতার, পাকিস্তান, ওমান, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে। টুপির মান ভেদে দামেরও তারতম্য রয়েছে।
কাঁটাবন মসজিদ মার্কেটের ব্যবসায়ী আবু নাসের জানান, এবার আমদানি করা উন্নত টুপিগুলোর মধ্যে ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে সিন্ধি, রুমি (মিশরী), জিন্নাহ ও গুজরাটি টুপি।
এদিকে ফুটপাতের দোকানগুলোতে ছোটদের দেশি টুপি ৫০ থেকে ১০০ এবং বড়দের টুপি পাওয়া যাচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে।
ঈদের দিন শুভ্রতা ও পবিত্রতার সৌরভ ছড়িয়ে দিতে বাঙালি মুসলিমদের আতরের প্রতি আকর্ষণ চিরাচরিত। রাজধানীর টুপি-আতরের দোকানগুলোতে সৌদি আরব, ভারত ও আরব আমিরাত থেকে আমদানি করা কমপক্ষে ২০০ ধরনের আতর পাওয়া যাচ্ছে। মান অনুযায়ী সাধারণ আতরের দাম এক তোলা ১০০ থেকে দেড় হাজার টাকা। আবার কোনও কোনও বিদেশি আতরের তোলা বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে ১০ হাজার টাকায়।
বায়তুল মোকাররম মার্কেটে বিক্রি হওয়া আতরগুলোর মধ্যে হাসনা হেনা, সিলভার, রজনীগন্ধা, চকোলেট ম্যাক্স সুলতান, রয়েল, অরেঞ্জ, জান্নাতুল ফেরদৌস ও লর্ডভিনিয়া ম্যানের চাহিদা বেশি। বিক্রেতা সারোয়ার বলেন, এসব আতরের দাম প্রতি এমএল ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
এছাড়াও ভারতীয়, অ্যারবিয়ান ও ফ্রান্সের আতরের প্যাকেটগুলো পাওয়া যাচ্ছে ৫০ থেকে ৮ হাজার টাকা দরে। কাঁটাবন মসজিদ মার্কেটের ব্যবসায়ী হাবিব বলেন, ‘বিদেশি ব্র্যান্ডের পাশাপাশি দেশে তৈরি উদ নামে আতরটির প্রতি এবার ক্রেতাদের চাহিদা রয়েছে। এটি প্রতি তোলা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায়। বিক্রেতারা জানান, কড়া ঘ্রাণের কারণে বাংলাদেশের পাশাপাশি আরব দেশগুলোতেও এ আতরটির চাহিদা রয়েছে।’
ঈদে সব কিছুতেই নতুনত্বের ছোঁয়া রাখতে জায়নামাজ ও তসবিহকেও বাদ দেওয়া হয়নি। টুপি-আতরের পাশাপাশি এগুলোও সংগ্রহ করছেন কেউ কেউ। রঙ, নকশা ও কাপড়ের মান ভেদে জায়নামাজের দামে রয়েছে ভিন্নতা। বায়তুল মোকাররমে পাওয়া যাচ্ছে পাকিস্তানি কোকার জায়নামাজ ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকায়। তুরস্কের আইরিন ৬০০ থেকে ৭০০ এবং কাটারে নেওয়াজ ৫৫০ টাকা। ফুটপাতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে দেশীয় গ্যাবার্ডিন কাপড়ের জায়নামাজ। এছাড়াও ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে পাকিস্তান, তুরস্ক, আফগানিস্তান, ইরান ও বেলজিয়ামের জায়নামাজ।
অপরদিকে কাকরাইল মসজিদ ও এলিফ্যান্ট রোডের কয়েকটি দোকানে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তসবি। এর মধ্যে সোলেমানি ৫০ থেকে ১৫০, ক্রিস্টাল পাথরের ১০০ থেকে ৩০০ ও আকিক পাথরের তৈরি তসবিহ ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
বায়তুল মোকাররমের নিচতলা টুপি মার্কেটের ক্রেতা আজিজুল হক সুজন জানান, পরিবার ও নিজের জন্য পোশাক-জুতাসহ সবকিছু কেনা শেষে টুপি, আতর, জায়নামাজ ও তসবির দোকানে এসেছেন। তিনি মনে করেন এগুলো, পবিত্রতার প্রতীক। তাই শেষ মুহূর্তে সংগ্রহ করছেন। তবে অতীতের চেয়ে এবার বিদেশি আইটেমগুলোর দাম কিছুটা বাড়তি বলে জানান এই ক্রেতা।
বায়তুল মোকাররমের খুসবু টুপি ও আতরের দোকানের বিক্রেতা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ২০ রমজানের আগেও বেচা-কেনা ছিল হতাশাজনক। তবে শেষ মুহূর্তে কিছুটা ভালো বিক্রি হচ্ছে। আমদানি মূল্য বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারে।