শবে বরাত মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় শবে বরাত বিশেষ গুরুত্বসহকারে পালন করা হয়। বেশির ভাগ মুসলিম পরিবারে হালুয়া, রুটি, ফিরনিসহ বিশেষ খাবার তৈরি ও বিতরণ করা হয়। একটা সময় শবে বরাতকে ঘিরে বাজারে কেনাকাটার যে চিত্র দেখা যেত, তা এখন অনেকটাই বদলে গেছে। আগে এই সময়টায় বাজার ছিল ক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের ব্যস্ততা থাকত তুঙ্গে। সব ধরনের দোকানেই তেল, চিনি, ডাল, মাংস, সুজিসহ বিভিন্ন পণ্যের বিক্রি অনেক বেড়ে যেত। শবে বরাতের আগের দিন দম ফেলার ফুরসত পেতেন না ব্যবসায়ীরা। অথচ এবার চিত্র একেবারেই ভিন্ন। ক্রেতারা সংকটে ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন।
বিক্রেতারা জানান, করোনা মহামারির পর থেকেই উৎসবকেন্দ্রিক কেনাকাটার প্রবণতা কমে এসেছে। যদিও গত কয়েক বছরে বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, তবে এবার পরিস্থিতি আবারও খারাপের দিকে। ক্রেতাদের উপস্থিতি কম, যাঁরা আসছেন, তাঁরা শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনেই ফিরে যাচ্ছেন। এ ছাড়া ভোজ্যতেলের সংকটে বিক্রি আরও কমেছে।
ভোজ্যতেলের সংকট, অন্য পণ্যের বিক্রি কম
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচা, শান্তিনগর, রামপুরা, মানিকনগরসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মুদিদোকানগুলোয় ক্রেতার উপস্থিতি কম। বিশেষ করে সয়াবিন তেলের সংকট প্রকট, অনেকেই তেল না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। সংকটের সুযোগ নিয়ে কিছু বিক্রেতা বোতলজাত তেলের প্রতি লিটারে ৩-৫ টাকা বেশি নিচ্ছেন। এ ছাড়া খোলা তেলের দাম সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি, যা ১৯০-২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে চিনি, ডাল, সুজি, ছোলা ও চিনিগুঁড়া চালের দাম আগের মতো থাকলেও বিক্রি কমে গেছে। সাধারণত শবে বরাতে এসব পণ্যের চাহিদাই বেশি থাকে।
সেগুনবাগিচা বাজারের মুদিদোকানি মোস্তাফিজুর রহমান সিফাত জানান, ‘আগে শবে বরাতের আগে প্রতিদিন ৫০-৬০ প্যাকেট সুজি বিক্রি হতো, এবার মাত্র ৪ প্যাকেট বিক্রি করেছি। তেল, চিনি, বুটের ডাল, ছোলাসহ অন্য পণ্যের চাহিদাও বেশি ছিল। সকাল থেকে কথা বলারও সময় পেতাম না। কিন্তু এখন এসব পণ্যের চাহিদাও খুব বেশি নেই।’
গরুর মাংসের দাম বেড়েছে
চাহিদা কমলেও গরুর মাংসের দাম বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে দাম প্রতি কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে বর্তমানে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, হাটে গরুর দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁদেরও মূল্য বাড়াতে হয়েছে। তবে ক্রেতার সংকটে রয়েছেন তাঁরা।
সেগুনবাগিচা বাজারের মাংস ব্যবসায়ী মো. খোকন মিয়া বলেন, আগে শবে বরাতের আগে দিনে ৪-৫টি গরু বিক্রি হতো, এবার এক-দুটি বিক্রিই কঠিন হয়ে পড়েছে। সকাল থেকে শুধু হোটেল ব্যবসায়ীরা মাংস কিনতে এসেছেন। বাকি ক্রেতা খুব একটা নেই।
অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগির দাম ১৮০-২০০ টাকা ও সোনালি মুরগির দাম ৩০০-৩২০ টাকা কেজিতে স্থিতিশীল থাকলেও বিক্রি কম। দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলেও ক্রেতা না থাকায় ব্যবসায়ীরা তা করতে পারছেন না।
অন্যান্য পণ্যের দাম
দেশি পেঁয়াজের দাম ৪০-৫০ টাকা কেজি থাকলেও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৫-১০ টাকা বেড়ে ৬০-৭০ টাকা কেজি হয়েছে। এ ছাড়া আমদানি করা রসুন ও আদার দাম কেজিপ্রতি ১০-২০ টাকা বেড়েছে। আলু প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০-২২ টাকায়।