‘চুলার আঁচের এমন দশা– পেঁয়াজু মচমচে হচ্ছে না, ফুলছে না বেগুনিও। অন্য রান্না তো পরের বিষয়!’ প্রথম রমজানে গ্যাস নিয়ে বিপাকে পড়া রাজধানীর অনেক গৃহিণীর কণ্ঠে উঠে এসেছে এমন অভিযোগের সুর।
হুট করে বিকালে গ্যাসের চাপ কমে যাচ্ছে কেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মার্চের শুরুতে কিছুটা গরম পড়ায় গৃহস্থালির গ্যাস সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এতেই ঘটেছে বিপত্তি। রান্নাঘরে গৃহিণীদের প্রতীক্ষা দীর্ঘ হচ্ছে কিন্তু রান্না হচ্ছে না।
মার্চে যেমন রোজা শুরু হয়েছে, একইসঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে তাপমাত্রা। এদিকে ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে সেচ মৌসুম। ফলে মার্চে এসে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর কারণে বাসাবাড়িতে সংকট বেড়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসাবাড়িতে গ্যাস ব্যবহারকারী সাধারণ মানুষ।
রবিবার (২ মার্চ) প্রথম রমজানে সারা দেশে ২ হাজার ৮৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। কিন্তু চাহিদা ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। সংকটের মধ্যে তাপমাত্রা বাড়ার কারণে গতকাল গ্রিডের বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৯১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। তাপমাত্রা কম থাকায় গত মাসের শেষের দিকে গ্রিডের বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৮৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো। ২৫ ফেব্রুয়ারির গ্যাস সরবরাহের চিত্রে দেখা গেছে, ওই দিন বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৮৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। তাপমাত্রা বাড়ার কারণে বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রে দৈনিক ৮৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বেশি সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে সংকটে পড়েছে আবাসিকসহ অন্যান্য খাত।
রাজধানীর কলাবাগানের ভূতের গলির বাসিন্দা ফাতেমা আক্তার রুনা জানান, সারা বছর গ্যাসের কষ্ট করতে হয়, এই রমজানেও একই অবস্থা। সন্ধ্যা ৬টায় গ্যাস এলে মানুষ ইফতারের আয়োজন কখন করবে?’
একই অভিযোগ করেন বনশ্রীর বাসিন্দা মিঠু আহমেদ। তিনি বলেন, ‘প্রথম রোজায় কিনেই ইফতার খেতে হলো। গ্যাস এসেছে রাত ১১টা নাগাদ। এভাবে প্রতিদিন কি ইফতার কিনে খাওয়া সম্ভব?’
এই অভিযোগ শুধু রাজধানীর ওই দুই এলাকার মানুষের নয়। অনেক এলাকায় দুপুর গড়ানোর আগেই গ্যাস কমে, বিকাল নাগাদ গ্যাস থাকেই না। এর মধ্যে রয়েছে পুরান ঢাকায় অনেক এলাকা, রামপুরা, উলন, হাজারীবাগ, খিলগাঁওয়ের কিছু অংশ, মিরপুর ও উত্তরার কিছু অংশ, মোহাম্মদপুর, মানিকনগর, বাসাবোসহ আশপাশের বেশিরভাগ এলাকা।
ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাসের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ সাইদুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের যে চাহিদা সে অনুযায়ী গ্যাস পাচ্ছি না। এ মাসের জন্য গড়ে আমরা ১ হাজার ৯৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা দিয়েছিলাম। এর মধ্যে গতকাল পেয়েছি ১ হাজার ৫৫৯ মিলিয়নের মতো। আজ দুপুর নাগাদ কিছুটা বেড়ে ১ হাজার ৫৭০ মিলিয়নের মতো হয়েছে। ঘাটতি থেকে যাচ্ছে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো।’
তিনি বলেন, ‘এলএনজি সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে আমরা কিছুটা গ্যাস বেশি পাচ্ছি। তবে রোজায় গ্যাসের চাহিদা যেমন বাড়ে, বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ে। সেহেরি, ইফতার, তারাবির সময় লোডশেডিং যাতে না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হয়। এই অবস্থায় বিদ্যুতে গ্যাসের সরবরাহকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। যদিও আমরা চেষ্টা করছি বাসাবাড়িতেও যাতে সরবরাহ কিছুটা বাড়ানো যায়।’