বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। চলতি পঞ্জিকা বছরের জানুয়ারিতে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৬ শতাংশ তৈরি পোশাক আমদানি বাড়িয়েছে দেশটির ক্রেতারা। ওই মাসে বাজারটিতে মোট ৮০ কোটি ডলার সমমূল্যের পোশাক রপ্তানি করেন দেশের উদ্যোক্তারা। এ রপ্তানি গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় ৪৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি। প্রবৃদ্ধির এ হার চীন, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ভারতসহ শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানো এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনসহ কয়েকটি দেশ থেকে পণ্য আমদানিতে বাড়তি শুল্ক আরোপ এমন প্রবৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা। তাঁরা বলছেন, গ্যাস–বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান করে দেশে উৎপাদনের জন্য ভালো পরিবেশ তৈরি করতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক দেশ হয়ে উঠতে পারবে বাংলাদেশ।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকেরা ৭২০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে। গত বছরের জানুয়ারিতে তারা আমদানি করেছিল ৬০৩ কোটি ডলারের পোশাক। অর্থাৎ চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পোশাক আমদানি বেড়েছে সাড়ে ১৯ শতাংশ। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি পোশাক আমদানি করে চীন থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম। আর বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়।
একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। এ বাজারে গত বছর তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে বাংলাদেশ। ২০২৪ সাল শেষে বড় প্রবৃদ্ধি না হলেও ইতিবাচক ধারায় ফেরে। সব মিলিয়ে গত বছর বাংলাদেশ থেকে ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি ২০২৩ সালের তুলনায় শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। যেখানে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি ২৫ শতাংশ কমে ৭২৯ কোটি ডলারে নেমেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি আরও বেড়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে। অটেক্সার তথ্য অনুসারে, জানুয়ারিতে দেশ থেকে মোট ৭৯ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি ২০২৪ সালের জানুয়ারির তুলনায় ৪৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি। গত বছরের জানুয়ারিতে দেশের রপ্তানিকারকেরা যুক্তরাষ্ট্রে ৫৪ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করতে পেরেছিলেন।
প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১৬০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে চীন। এ রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভিয়েতনাম রপ্তানি করেছে ১৪৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এ রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি।
প্রতিবেশী দেশ ভারত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে পাঁচ নম্বরে রয়েছে। দেশটি থেকে রপ্তানি হয়েছে ৪৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি।
চতুর্থ অবস্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়া জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি করেছে ৪১ কোটি ৯৯ লাখ ডলার, যা গত বছরের ৪১ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় কানাডা, মেক্সিকো ও চীন থেকে পণ্য আমদানিতে বাড়তি শুল্ক আরোপ করায় বাজারটি নিয়ে নতুন করে সম্ভাবনার কথা বলছেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। তাঁরা বলছেন, চীনা পণ্যে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে। এতে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রয়াদেশ সরাবে। ফলে বাড়তি ক্রয়াদেশ বা অর্ডার পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে বাংলাদেশের জন্য। এমনকি বিনিয়োগকারীরা চীন থেকে কারখানা সরিয়ে এখন অন্য দেশে নিতে আগ্রহী হতে পারেন।
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্তমানে পোশাক রপ্তানিতে যে প্রবৃদ্ধি, তা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোয় বাড়তি ক্রয়াদেশের প্রভাব। তবে পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে পারলে চীন–যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে বাড়তি বিনিয়োগের সুযোগ বাংলাদেশও নিতে পারে। কারণ ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বায়ার বাংলাদেশে আসা শুরু করেছে। যারা আগে চীন থেকে আমদানি করত। তবে এর জন্য গ্যাস বিদ্যুতের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে।