পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তে রাজধানীতে সবকিছুর জমজমাট বেচাকেনা হচ্ছে। জামাকাপড় থেকে শুরু করে রান্নার তৈজসপত্র এমনকি মুদি দোকানেও দম ফেলার ফুরসত নেই। একইসঙ্গে পাইকারি এবং অলিগলির দোকানগুলোতে মসলা এবং সেমাই-চিনি বিক্রিরও ধুম পড়েছে।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) বিকালে রাজধানীর মৌলভীবাজার, পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বাজারের এ চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মসলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এলাচের দাম। বাজারে এখন ছোট এলাচ প্রতি কেজি সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা, বড় এলাচ প্রতি কেজি ৩ হাজার ৩০০ টাকা। অন্যদিকে লবঙ্গ ১ হাজার ৪০০ টাকা, জিরা ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, গোলমরিচ ৭০০ টাকা, দারুচিনি ৬৫০ টাকা, হলুদের গুঁড়া ৪০০ টাকা, তেজপাতা ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, আদা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয় বলে জানান ক্রেতা বিক্রেতারা।
এছাড়াও চাহিদা বাড়ায় বেড়েছে সেমাই ও চিনির দাম। প্যাকেট প্রতি সেমাইয়ের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। অন্যদিকে প্রতি কেজি চিনির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে ৮-১০ টাকা। শুধু সেমাই চিনি নয়, বেড়েছে কিসমিস ও বিভিন্ন বাদামসহ আনুষঙ্গিক বেশ কিছু পণ্যের দাম।
বর্তমানে খোলা লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। আর চিকন সেমাই কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। প্যাকেটজাত ২০০ গ্রাম সেমাই ব্র্যান্ডভেদে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডানো, পুষ্টি, ডিপ্লোমাসহ ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধ কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে গেছে। অন্যদিকে বাজারে প্রতি কেজি চিনা বাদাম ২০০ টাকা এবং কাজু বাদাম ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতি কেজি কিসমিস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। গত এক সপ্তাহের বাজারের তুলনায় কাজুবাদামে ১০০-১৫০ টাকা এবং কিসমিসে ৫০-৬০ টাকা বেড়েছে।
রাজধানীর মৌলভীবাজারে মসলা কিনতে আসা নাজমুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, প্রতিবার ঈদ এলেই মসলার দাম বেড়ে যায়। সকালে একদাম তো, বিকালে আরেক দাম। আজকের দামের সঙ্গে কালকের মিল থাকে না। সব দোকানেই একরেট। অনেকে আবার মূল্য তালিকার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করে। ভোক্তা অধিকার সব জায়গায় অভিযান চালালেও কখনও মৌলভীবাজারের মসলার দোকানগুলোতে অভিযান চালাতে দেখি না।
মিলন তালুকদার নামের আরেকজন ক্রেতা বলেন, রান্নাবান্নার জন্য অপরিহার্য একটা উপাদান মসলা। কমবেশি সব তরকারির সঙ্গেই মসলা লাগে। গত সপ্তাহে জিরা, এলাচের যে দাম ছিল তা কেজিতে আরও এক-দুইশো টাকা বেড়েছে। তুলনামূলক খুচরা বাজারের চেয়ে এখানে একটু কম দরে পাওয়ায় সবাই এখান থেকেই মসলা কিনতে আসেন।
এই ক্রেতা আরও বলেন, ঈদের কেনাকাটায় সেমাই-চিনি এখন অন্যতম পণ্য। ছোট বড় সবার পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে সেমাই। অতিথি আপ্যায়ন যেন সেমাই ছাড়া চলেই না। আমি কয়েকদিন আগেই খোলা দু’কেজি এবং প্যাকেট এক কেজি সেমাই নিয়েছি। সেটা ইফতারের পরপরই শেষ। আজ আবার যখন সেমাই কিনতে আসলাম দেখলাম কেজি প্রতি ১০ টাকা বেশি।
মুদি ব্যবসায়ী রাসেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত সপ্তাহ থেকেই চিনি সেমাই ও কয়েকটি মসল্লার দাম বেড়েছে। আগে চিনি বিক্রি করেছি ১২৫-১৩০ টাকায়। আজকে ১৪০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। কালকে আরও ৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। পাইকারি বেশি দরে কিনতে হচ্ছে তাই কিছু করার নেই। লাচ্ছা সেমাইও প্যাকেটে ৫ টাকা বেশি দামে কিনতে হয়েছে।
মৌলভীবাজারের মসলা ব্যবসায়ী শাহাদাত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রোজার শুরুতেই আন্তর্জাতিক বাজারে মসলার দাম বেড়েছে। আমরা তো ডিরেক্ট ইমপোর্ট করি না। যারা ইমপোর্ট করে তারা আন্তর্জাতিক বাজারের কথা বলে দাম বাড়িয়েছে। তাই পাইকারি পর্যায়েও দাম কিছুটা বেড়েছে।
মসলার দাম দুই আড়াই মাস পর আরও বাড়ার শঙ্কা জানিয়ে এই বিক্রেতা বলেন, কোরবানি ঈদের তুলনায় রোজার ঈদে মসলার চাহিদা কম থাকে। কোরবানির সময় এই দাম আরও বাড়বে। এখন কিন্তু মসলার পর্যাপ্ত মজুদ আছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা যদি এখন থেকে সতর্ক থাকেন তাহলে নতুন কোনও সিন্ডিকেট তৈরি হবে না, আর দামও বাড়বে না।