Homeঅর্থনীতিব্যাংক খাতের টেকসই পুনর্গঠনে বিশ্বব্যাংকের ১০ সুপারিশ

ব্যাংক খাতের টেকসই পুনর্গঠনে বিশ্বব্যাংকের ১০ সুপারিশ


নানামুখী চ্যালেঞ্জে জর্জরিত বাংলাদেশের ব্যাংক খাতকে স্থিতিশীল ও টেকসই করতে ১০ দফা সুপারিশ করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির মতে, দীর্ঘদিনের কাঠামোগত দুর্বলতা, সুশাসনের অভাব ও রাজনৈতিক প্রভাবের ফলে ব্যাংক খাত এখন গুরুতর ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এসব দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে দ্রুত সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক এই আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ সুপারিশগুলো তুলে ধরে বিশ্বব্যাংক। প্রতিবেদনে বলা হয়—বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত বর্তমানে উচ্চ খেলাপি ঋণ, মূলধন ঘাটতি, পরিচালন অদক্ষতা ও রাজনৈতিক প্রভাবে ঋণ বিতরণসহ একাধিক সমস্যায় জর্জরিত। এ অবস্থায় ব্যাংক খাতের দুর্বলতা দূর করতে সুসংগঠিত ও কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।
বিশ্বব্যাংকের ১০ দফা সুপারিশ হলো—

১. ব্যাংক খাতের নীতি কাঠামো উন্নত করতে অগ্রাধিকার দেওয়া।
২. আমানত সুরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করা।
৩. প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন আনা।
৪. রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক পুনর্গঠন।
৫. খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনায় শক্ত কাঠামো তৈরি।
৬. সমন্বিত দেউলিয়া আইন প্রণয়ন।
৭. ব্যাংকিং আইন ও নীতির যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
৮. জরুরি তারল্য সহায়তার জন্য নীতি কাঠামো তৈরি করা।
৯. ব্যাংক তদারকিতে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা অনুসরণ করা।
১০. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের জুনের শেষে দেশের ব্যাংক খাতের মোট সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা দেশের আর্থিক খাতের ৮৮ শতাংশ এবং মোট জিডিপির প্রায় ৫০ শতাংশ। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ রয়েছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের, ২৫ শতাংশ রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের এবং ৪ শতাংশ বিদেশি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে।

বিশ্বব্যাংকের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে ঋণের নামে অর্থ আত্মসাৎ, পারিবারিক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ প্রদান এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক অনুমোদন দেওয়ার মতো ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে চলমান। ২০২৩ সালে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে এক পরিবারের সদস্যদের পর্ষদে থাকার মেয়াদ ১২ বছরে উন্নীত করায় রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আরও দৃঢ় হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির তথ্য উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে আটটি ব্যাংকের পরিচালকদের মধ্যে পারস্পরিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৭০ কোটি মার্কিন ডলার, যা প্রমাণ করে ব্যাংক খাতে কীভাবে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম ইনস্টিটিউশনালাইজড হয়ে উঠেছে।

বিশ্বব্যাংক সতর্ক করে বলেছে, ব্যাংক খাতের অস্থিরতা কেবল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করে না, বরং বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাস করে এবং জিডিপির প্রায় ৭ শতাংশ পর্যন্ত বার্ষিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৭০ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত বিশ্বের ১৫১টি ব্যাংকিং সংকট বিশ্লেষণ করে এমনটাই উঠে এসেছে।

সংস্থাটি মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু দুর্বলতা চিহ্নিত করে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এই উদ্যোগকে কার্যকর করতে হলে বিশ্বব্যাংকের সুপারিশ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও কার্যকর নীতিনির্ধারণ প্রয়োজন।

বিশ্বব্যাংক জোর দিয়ে বলেছে, ব্যাংকিং খাতের সংকট মোকাবিলায় যত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে, অর্থনৈতিক ক্ষতির মাত্রা ততই হ্রাস করা সম্ভব হবে। এ জন্যই ১০ দফা সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে তারা।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত