ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত আগস্টে সরকার বদলের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া নানা পদক্ষেপে ব্যাংক খাতে মানুষের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ আমলের শেষ দিকে এবং ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে আতঙ্কে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়া গ্রাহকেরা আবার ব্যাংকমুখী হচ্ছেন। এতে ব্যাংকগুলোয় ধীরে ধীরে বাড়ছে আমানত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের জুন শেষে দেশের ব্যাংক খাতে গ্রাহকদের রাখা আমানতের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ৪২ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা। সরকার পতনের পর গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৭৭ হাজার ৩১৫ কোটি টাকায়। সে হিসাবে ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকে আমানত বেড়েছে প্রায় ২ শতাংশ বা ৩৪ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা।
এদিকে গত বছরের জুন শেষে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে তা কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭৬ হাজার ৩৪১ কোটি টাকায়। সেই হিসাবে ৬ মাসের ব্যবধানে মানুষের হাতে টাকা কমেছে ১৪ হাজার কোটি টাকা।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ব্যাংক থেকে মানুষের টাকা তুলে নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বেশ কিছু ব্যাংকের প্রকৃত অবস্থার চিত্রও প্রকাশ পায়। তাতে অনেক গ্রাহক আতঙ্কিত হয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেন। কিন্তু এখন তা কেটে গেছে। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় ব্যাংকের ওপর আস্থা বেড়েছে; পাশাপাশি ব্যাংকে আমানতের সুদহারও বেড়েছে। অপরদিকে সম্প্রতি মূল্যস্ফীতি কমেছে। এতে প্রকৃত সুদের হার ইতিবাচক হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ ডিসেম্বর শেষে ছিল ১৭ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকা। এর আগে নভেম্বরে ১৭ লাখ ৬৩ হাজার কোটি, অক্টোবর শেষে ১৭ লাখ ৫৫ লাখ কোটি, সেপ্টেম্বর শেষে ১৭ লাখ ২৫ হাজার কোটি, আগস্ট শেষে ১৭ লাখ ৩১ হাজার ৮৯০ কোটি এবং জুলাই শেষে ছিল ১৭ লাখ ৪২ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা অনেকটা কমেছে। এতে ঋণের চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে কিছু ব্যাংক উচ্চহারে আমানত সংগ্রহ করছে। বেশি সুদ পেলে আমানতকারীরাও ব্যাংকে টাকা রাখতে বাড়তি আগ্রহ পায়, যা সম্প্রতি দেখা গেছে।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সুদহার নির্ধারণের সব ধরনের কলাকৌশল তুলে দেওয়ায় ব্যাংকগুলো নিজেদের সুবিধামতো সুদহার নির্ধারণের অধিকার ফিরে পেয়েছে। ফলে সব ধরনের ঋণের ওপর সুদহার আপাতত আরও বাড়বে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার ১০ শতাংশ রয়েছে। এতে আমানতের সুদের হার ৬-৭ শতাংশ থেকে ১২-১৪ শতাংশ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা সরকারি সঞ্চয়পত্রের চেয়ে বেশি। এই সুযোগ লুফে নিতে আমানতকারীরাও ব্যাংকে টাকা রাখা বাড়িয়ে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ব্যাংক মূলত সুদের ব্যবসা করে। আমানত এবং ঋণ বিতরণের সুদের পার্থক্যটা হলো ব্যাংকের মূল আয়। আমানত না থাকলে তো ঋণ দিতে পারে না। বর্তমান উচ্চ সুদহারের কারণে ব্যাংক একটু বেশি রেটে আমানত সংগ্রহ করতে পারছে। এতে আমানত বেড়েছে।