ঊর্ধ্বমুখী বাজার সামলাতে তুরস্ক ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বিপুল ডিম আমদানির পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া অন্যান্য দেশের সঙ্গেও ডিম আমদানির বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষিমন্ত্রী ব্রুক রোলিন্স গতকাল শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্বল্প মেয়াদে আমরা কয়েক শ মিলিয়ন ডিম আমদানির কথা ভাবছি।’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দাম ৬৫ শতাংশ বেড়েছে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে আরও ৪১ শতাংশ বাড়ার আশঙ্কা করা হয়েছে। এই অবস্থার জন্য মূলত পাখির ফ্লু (এইচএন৫এ১ ভাইরাস) মহামারিকে দায়ী করা হচ্ছে। ২০২২ সাল থেকে এই ভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রের পোলট্রিশিল্পের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। এ পর্যন্ত দেশটিতে ১৫৬ মিলিয়নের বেশি মুরগি মারা গেছে, যার ফলে ডিমের সরবরাহ কমে গেছে ও অসহনীয় মাত্রায় দাম বেড়েছে।
বিদেশ থেকে ডিম আমদানি ছাড়াও ডিমের দাম কমানোর জন্য ট্রাম্প প্রশাসন ১ বিলিয়ন ডলারের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এই পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে—খামারে ফ্লুজাতীয় রোগ বা বায়োসিকিউরিটি ব্যবস্থা জোরদার করতে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, ভ্যাকসিন গবেষণা ও উন্নয়নে দেওয়া হয়েছে ১০০ মিলিয়ন ডলার, কৃষকদের আর্থিক সহায়তায় দেওয়া হয়েছে ৪০০ মিলিয়ন ডলার।
কৃষিমন্ত্রী রোলিন্স বলেন, ‘আমরা বাণিজ্যিকভাবে ডিম উৎপাদনকারী খামারগুলোকে বিনা মূল্যে পরামর্শ ও চিকিৎসাসেবা দেব এবং সুরক্ষিত করতে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত খরচ বহন করব।’
এদিকে পোল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়ার পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনগুলো জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসগুলো তাদের সঙ্গে ডিম রপ্তানির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে। পোল্যান্ডের জাতীয় পোলট্রি ও ফিড প্রযোজক চেম্বারের পরিচালক কাতারজিনা গাওরনস্কা বলেছেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে ওয়ারশতে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস আমাদের সংগঠনকে জিজ্ঞেস করেছিল, পোল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ডিম রপ্তানিতে আগ্রহী কি না।’
গত বছর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার একটি বড় ইস্যু ছিল ডিমের দাম বেড়ে যাওয়া। তিনি ভোটারদের মধ্যে অপরিহার্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি১র হতাশাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন।
সম্প্রতি কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণে ডিমের দাম বাড়ার জন্য জো বাইডেনের প্রশাসনের ওপর দায় চাপিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘জো বাইডেন ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে দিয়েছেন। আমরা এটাকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি।’
পাখির ফ্লু মহামারি ও সরবরাহ সংকটের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দাম ব্যাপক হারে বেড়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এসব পদক্ষেপ ডিমের দাম কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।