কয়েকদিন পর শুরু হবে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র মাস রমজান। রোজার সময় বাংলাদেশে সবকিছুর দাম যেন ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে। এসময় বাড়তি খরচে ক্রেতাদের দুর্ভোগ বাড়ে। তবে এবছর আমদানি বেশি হওয়ায় পণ্যের দাম বাড়বে না বলেই আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। তবে এরই মধ্যে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সবজির বাজারে। বেড়েছে আদা, লেবু ও বিদেশি রসুনের দাম। দোকানিরা বলছেন, বাজারে শীতকালীন সবজি কমে এসেছে, তাই দামও কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহে ২০ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি হওয়া বড় সাইজের ফুলকপি এখন ৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আর ২০ টাকা করে বিক্রি হওয়া বাঁধাকপি এখন ৩০ টাকা। গত সপ্তাহে যে লাউ বিক্রি হচ্ছি ৩০ থেকে ৪০ টাকায়, সেগুলো এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। বাজারে ৬০ টাকার ঢেড়শ এখন ১০০ টাকা। ৮০ থেকে ১২০ টাকার পটল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা।
তবে যেসব সবজির এখনও যোগান আছে, সেগুলোর দাম অপরিবর্তিত দেখা গেছে। কাঁচামরিচ আগের দামে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। বেগুন মানভেদে পাওয়া যাচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে। দেশি করলা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, উস্তা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর গত সপ্তাহের তুলনায় দাম কমেছে পেঁপের, ২০ টাকা কমে এই সবজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজিতে। এছাড়াও অপরিবর্তিত আছে শিমের দামও। জাতভেদে শিম বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। শসা পাওয়া যাচ্ছে ৪০ টাকা কেজিতে।
এছাড়াও বাজারে মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে, আর জালি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা পিস। পেঁয়াজ পাতার আঁটি ১৫ টাকা। লালশাক, পালংশাক ও কলমিশাকের আঁটি ১০ টাকা। মুলা প্রতি কেজি ৩০ টাকা, পাকা টমেটো ২৫ থেকে ৩০ টাকা। কাঁচা টমেটো ৪০ টাকা। আলু ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে এসেছে কিছু গ্রীষ্মকালীন সবজিও। তবে সেসব সবজি বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। প্রতি কেজি বেগুন ৬০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা। চিচিঙ্গা ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর রায়সাহেব বাজারের বিক্রেতা আবুল কালাম বলেন, শীতের সময় শেষ। বাজারে যেসব সবজির চালান কমেছে। সেগুলো দাম বেড়েছে। এখন থেকে সবজির দাম বাড়বে। শীতের সময়ে যে সুবিধা পাওয়া যেতো, এখন আর তা পাওয়া যাবে না। আগে যা ৫ থেকে ৭ টাকায় কিনতাম। এখন তা ২০ থেকে ২৫ টাকা কিনতে হচ্ছে।
তিনি আর বলেন, বাজারে এখন নতুন সবজি আসছে। কিন্তু শীতের সবজি কমছে। এই দাম বাড়াটা স্বাভাবিক।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সুমাইয়া আক্তার বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় আজ কয়েকটি সবজির দাম বেশি। ফুলকপি, পাতাকপি ও লাউয়ের দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি।
রমজানকে কেন্দ্র করে বাড়ছে লেবু ও আদার দাম
শবে বরাতের দিন থেকে বেড়েছে লেবুর দাম। এক হালি দেশি লেবু ৬০ টাকা, ছোট জাতের এলাচি লেবুর হালি ৪০ টাকা। এলাচি বড় জাতের লেবু ৫০ টাকা। আদার দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। ১১০ টাকার আদা বর্তমানে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চায়না রসুনের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে বর্তমানে ২৪০ টাকা।
তবে নতুন দেশি রসুন বাজারে আসায় বাজারে দেশি রসুনের দাম ১০০ টাকা কমেছে। বর্তমানে দেশি রসুন ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডালের দাম আগের মতোই আছে, মটর ডাল ১৪০, মসুর ডাল ১১০ টাকা, চিকন ১৩৫ টাকা। বুটের ডাল ১২০ টাকা।
বিক্রেতা আবু সাঈদ বলেন, শবে বরাতের দিন ও পরের কয়েকদিন লেবুর দাম বেশি ছিল। এসময় এলাচি ছোট ছিল ৩০ টাকা আর বড়টা ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আজ প্রতি হালি লেবুতে ১০ টাকা করে বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ বাজারে তো লেবুর দাম কম। এরপরও আমরা বিক্রি করতে পারছি না। কিন্তু শ্যাম বাজার ও সূত্রাপুর বাজারে ৮০ টাকা করে হালি বিক্রি হচ্ছে। রমজানের দিকে অনেকে তাকিয়ে আছে। লেবু স্টক করে রাখছে। অনেকে বাজারে লেবু আনছে না। লেবুর চালান কম থাকায় দাম বেশি।
বিক্রেতা মোহাম্মদ মিঠু বলেন, রমজানের কারণে আদার চাহিদা বাড়ছে। চাহিদা বাড়ায় আদার দাম কিছুটা বেড়েছে।