বাংলাদেশে ব্যবসার সম্ভাবনা খুঁজছে পাকিস্তানের শিল্পগোষ্ঠী এনগ্রো। এনগ্রো হোল্ডিংসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আব্দুস সামাদ দাউদ গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ কথা জানান। বৈঠকে তাঁদের আলোচনার মূল বিষয় ছিল বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা।
সাক্ষাৎকালে এনগ্রো সিইও বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ ও জ্বালানি খাতে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং কোম্পানির কার্যক্রম প্রসারের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। সামাদ দাউদ বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের সম্ভাবনা নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী। পাশাপাশি ভোলার গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে শিল্প খাতের বিকাশে অংশগ্রহণের সুযোগও আমরা দেখছি।’
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এই আগ্রহকে স্বাগত জানিয়ে টেকসই এবং ভবিষ্যৎমুখী অংশীদারত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে মনোযোগ দিতে চাই, যা আমাদের মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে।’
বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ দিতে আসা দাউদ চার দিনব্যাপী এই সম্মেলনের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘বিডা সামিটে এক মানবিক ছোঁয়া ছিল— এটি আন্তরিক, স্বাগতপূর্ণ এবং লক্ষ্যনির্ভর মনে হয়েছে। এক ছাদের নিচে এত শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিকে দেখে আমি অভিভূত।’
অধ্যাপক ইউনূস এনগ্রোর নেতৃত্বকে বাংলাদেশে আবার আসার আমন্ত্রণ এবং বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার সুযোগ দেখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাকে আবার আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। বাংলাদেশ অনেক কিছু দিতে পারে; শুধু বিনিয়োগকারীদেরই নয়, পুরো বিশ্বকে।’
ডিপি ওয়ার্ল্ডের সিইওর সাক্ষাৎ
ডিপি ওয়ার্ল্ডের গ্রুপ চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুলতান আহমেদ বিন সুলায়েম গত বুধবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের বন্দর ও লজিস্টিক অবকাঠামো খাতে কৌশলগত বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। দাভোসে অনুষ্ঠিত তাঁদের আগের আলোচনায় ডিপি ওয়ার্ল্ডের প্রধান চট্টগ্রামের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। প্রস্তাবিত এই বিনিয়োগের লক্ষ্য হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের যানজট হ্রাস, কার্বন নির্গমন কমানো এবং বাংলাদেশের প্রধান সামুদ্রিক প্রবেশপথের দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি সম্ভাবনাময় দেশ। বাংলাদেশে আসুন এবং চলুন আমরা এর সম্ভাবনাকে বাস্তবায়ন করি।’
সুলতান আহমেদ বিন সুলায়েম তাঁর প্রতিষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা এই অংশীদারত্বের জন্য অপেক্ষা করছি। আপনাদের সমৃদ্ধি মানেই আমাদের সমৃদ্ধি। চট্টগ্রাম থেকে দুবাই, আফ্রিকা—এটাই আমাদের যৌথ স্বপ্ন।’
প্রধান উপদেষ্টা ডিপি ওয়ার্ল্ডকে মৎস্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং হালাল মাংস রপ্তানির মতো বাংলাদেশের বিকাশমান খাতে আরও ব্যাপক সহযোগিতার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ডিপি ওয়ার্ল্ডের প্রধান ইতিবাচক সাড়া দিয়ে জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের দক্ষ শ্রমিকদের জন্য ভিসা সহজীকরণ এবং সামগ্রিক সহায়তা নিয়ে কাজ করছে। তিনি আরও জানান, চীন ও ভারতের ট্রেড মার্টের সফলতার পর তাদের নিজ দেশে ‘বাংলাদেশ মার্ট’ চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।