বহুজাতিক রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান উবারের অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে উবার বাংলাদেশে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ অবদান রেখেছে। এর মধ্যে উবার মটো ও অটো সার্ভিসের অবদান ৯২০ কোটি টাকার সমপরিমাণ। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাবলিক ফার্স্টের ‘উবার ইকোনমিক ইমপ্যাক্ট রিপোর্ট বাংলাদেশ-২০২৪’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, উবার ওই বছরে ২১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে, যা দেশের মোট গাড়িচালকদের অর্ধেকের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করেছে। এ ছাড়া, উবার ব্যবহার করে যাত্রীরা ৬৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকার সুবিধা পেয়েছেন। অর্থাৎ যাতায়াত সহজ হওয়া, সময় বাঁচানো ও ভাড়ার সুবিধার মতো নানা দিক থেকে তাঁরা এই উপযোগ পেয়েছেন। বিকল্প কর্মসংস্থানের তুলনায় চালকরা ৪২ শতাংশ বেশি আয় করেছেন। ২০২৩ সালে উবার বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পে ২৯০ কোটি টাকার অবদান রেখেছে।
পাবলিক ফার্স্টের টেক, মিডিয়া ও টেলিকমপ্রধান এমি প্রাইস গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে। এ সময় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক ও বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর অনুষ্ঠানে খাতসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারকদের নিয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, নারীরা উবার ব্যবহারে সাধারণত নিরাপদ বোধ করলেও রাতে পুরুষ ও নারী উভয়ই সমানভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে থাকেন। কেন এমনটি হচ্ছে, তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা দরকার, যা শুধু উবারের একার পক্ষে নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সহযোগিতা প্রয়োজন।
ফাহমিদা খাতুন পরামর্শ রেখে আরও বলেন, উবারের টেকসই ও কার্যকর ব্যবহারের পরিসরের বিস্তৃতি, দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্ব এবং ব্যয়ের সামর্থ্যও নিশ্চিত করা জরুরি। শহর ও গ্রামের মানুষের আর্থিক সক্ষমতা এক নয়, তাই উবার যেন সব শ্রেণির মানুষের জন্য সাশ্রয়ী হয়, সেদিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রশ্নোত্তর পর্বে রাইড শেয়ারিং এই উবার অ্যাপটি পিক টাইমে ব্যবহারের সময় অস্বাভাবিক ভাড়া দেখানো হয়, এমন অভিযোগও উঠে আসে। এ সময় বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকেরা বিআরটিএর বক্তব্য জানতে চাইলে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন তখন সরাসরি উত্তর না দিয়ে উবার কর্তৃপক্ষকে কীভাবে এ ভাড়া নির্ধারণ করা হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা দিতে এ-বিষয়ক একটা অনুষ্ঠান আয়োজনের পরামর্শ দেন।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, রাইড শেয়ারিং খাতে উবারের ভূমিকা প্রশংসনীয়। এটি পরিবহন খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এবং জনজীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। তবে একটি বড় সমস্যা হলো, সব রাইড শেয়ারিং সেবা কার্যকরভাবে চলছে না। কিছু অ্যাপস বন্ধ, আবার কিছু চালক সক্রিয়ভাবে অ্যাপ ব্যবহার না করে চুক্তিভিত্তিক সেবা দিচ্ছেন। তিনি জানান, ইতিমধ্যে কিছু রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে, কারণ তাঁরা নিয়ম মানছিলেন না। এ ছাড়া, যাঁরা চালক হয়েও অ্যাপস বন্ধ রেখে ভিন্ন উপায়ে যাত্রী পরিবহন করছেন, তাঁদের বিষয়ে উবারকে নোটিফিকেশন পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
‘উবার ইকোনমিক ইমপ্যাক্ট রিপোর্ট বাংলাদেশ-২০২৪’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে উবার ৭.২ মিলিয়নেরও বেশি যাত্রীকে সেবা দিয়েছে এবং ৩ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি চালকের জন্য জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে ৮২ শতাংশ যাত্রী অফিসে যাতায়াতের জন্য উবার ব্যবহার করেছেন। এতে প্রতিবছর আনুমানিক ১১ লাখ কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হয়েছে, যা ৯৪ কোটি টাকার সমপরিমাণ। এ ছাড়া ৮৭ শতাংশ যাত্রীর উবারের কারণে শহরে যাতায়াত সহজ হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, ৭৬ শতাংশ চালক জানিয়েছেন, উবার তাঁদের প্রথম আয়ের প্ল্যাটফর্ম। ৯৫ শতাংশ নারী যাত্রী বলেছেন, নিরাপত্তাই তাঁদের উবার ব্যবহারের অন্যতম প্রধান কারণ। ৮৯ শতাংশ যাত্রী মনে করেন রাতে বাড়ি ফেরার সবচেয়ে নিরাপদ মাধ্যম।
উবার বাংলাদেশের কান্ট্রি হেড নাশিদ ফেরদৌস কামাল বলেন, ভবিষ্যতে আরও উন্নত সেবা দেওয়ার জন্য উবার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা যে সেবা দিচ্ছি, তার আর্থিক মূল্য যদি ১ হাজার টাকা হয়, তবে অর্থনীতিতে তার ইমপেক্ট আরও কয়েক গুণ বেশি।
এমি প্রাইস গবেষণার পদ্ধতি সম্পর্কে বলেন, ২০২৪ সালের মে মাস থেকে জুলাই এই দুই মাসে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। এ জন্য ১০৭৩ জন উবার অ্যাপস ব্যবহারকারী যাত্রী এবং ২৬২ জন উবার অ্যাপস ব্যবহারকারী ড্রাইভারের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। অর্থনৈতিক অবদান জানতে অ্যাপস ব্যবহার করে ড্রাইভারদের আয় ও গাড়ি চালাতে দিয়ে তাঁদের যাবতীয় ব্যয় বিশ্লেষণ করা হয়েছে।