Homeঅর্থনীতিপ্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে বর্ধিত মূসক-শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি, আশ্বাস এনবিআরের

প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে বর্ধিত মূসক-শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি, আশ্বাস এনবিআরের


প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ওপর আরোপিত বর্ধিত ভ্যাট ও শুল্ক কমানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ দাবি জানান সংগঠনের নেতারা। বিষয়টি বিবেচনার করার আশ্বাস দিয়েছে এনবিআর।

সাক্ষাৎ শেষে বাপার নির্বাহী সদস্য এবং প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘ (প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে) আমরা আগের হারে ভ্যাট ও শুল্ক দিতে চাই। এনবিআর চেয়ারম্যান ইতিবাচকভাবে বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। সব শুনে তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। এ ব্যাপারটি দেখতে কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। সার্বিক দিক বিবেচনা করে এনবিআর আমাদের ত্বরিত সমাধান দেবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এনবিআরকে বুঝিয়েছি। আশা করি, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ভালো একটি সমাধান পাব। মূসকের হার যেন বাড়ানো না হয়। আমরা চাই না, এই কষ্টের দিনে ভোক্তার ওপর কোনোরকম চাপ আসুক। আমরা সুলভ মূল্যে ভোক্তার হাতে পণ্য পৌঁছে দিতে চাচ্ছি।’

গত ৯ জানুয়ারি এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বাড়ায়। পরে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের সমালোচনা এবং চাপের মুখে ৯টি পণ্য ও সেবার ওপর আরোপ করা বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহার করে সরকার।

বর্ধিত ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার না হলে ভোক্তাকে বাড়তি টাকা ব্যয় করতে হবে জানিয়ে আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘কিছু পণ্যের ওপর ২০০ শতাংশের বেশি ভ্যাট বেড়েছে। ৫ টাকার বিস্কুট আগামী দিনে ৭ টাকায় কিনতে হবে। ১০ টাকার বিস্কুট ১৩ টাকা আর ২০ টাকার জুস কিনতে খরচ হবে ২৫ টাকা।’

তিনি যোগ করেন, ‘বর্ধিত ভ্যাট ও শুল্কের কারণে ভোক্তা ও কৃষকের ওপর কেমন প্রভাব পড়বে, ক্রেতার পকেট থেকে বাড়তি কত টাকা যাবে, এই পয়েন্টগুলো আমরা তাঁর (এনবিআর চেয়ারম্যান) সামনে তুলে ধরেছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্ধিত ভ্যাট ও শুল্কের কারণে বিস্কুটের দাম ১০ শতাংশ বেড়ে যাবে। জুসে প্রায় ২০ শতাংশ সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি আরোপ হয়েছে। ১৫ শতাংশ ভ্যাট ছিল। তার ওপর আরও ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ২৫ টাকার জুসের ওপর সাড়ে ৭ টাকা দেওয়ার দাবি ছিল সরকারের পক্ষ থেকে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিনয়ের সঙ্গে মাফ চেয়েছি। বলেছি, বাংলাদেশের ভোক্তার কাছ থেকে ২০ টাকার জুসে ৭ টাকা ভ্যাট নেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। তাদের বিনয়ের সঙ্গে আহ্বান জানিয়েছি বাংলাদেশের ভোক্তার ওপর এ ধরনের জুলুম করবেন না।’

ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামের তুলনায় বাংলাদেশে ভ্যাটের হার বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের খাদ্যের ব্যয় বেশি। খাদ্যপণ্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য এই বর্ধিত ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার করতে হবে।

সরকার তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে—জানতে চাইলে আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা গঠনমূলকভাবে সরকারকে বোঝাব। বারবার বোঝাব। ডায়ালগ, সেমিনার করব। যেন মানুষ বুঝতে পারে করের হার বাড়িয়ে অতিরিক্ত কর আদায় করা যাবে না। এনবিআর চেয়ারম্যান অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। বলেছেন, আমাদের একটা সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবেন।’

তিনি বলেন, ‘গত ৯ জানুয়ারি ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ার পরও আমরা এখনো পণ্যের দাম বাড়াইনি। আমাদের লস হচ্ছে। আমরা ভীষণভাবে লস দিচ্ছি। আমরা চাইলে এই লসের বোঝা থেকে কারখানাগুলো বের করে নিয়ে আসতে পারি। কারখানাগুলো লাভে নিয়ে আসতে পারি।’

এদিন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ওপর বর্ধিত ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার করতে এনবিআর চেয়ারম্যানকে স্মারকলিপি দেয় বাপা।

এ সময় বাপা সভাপতি এম এ হাশেম, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, পারটেক্স স্টার গ্রুপের এমডি আজিজ আল মাহমুদ, এসএমসি এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফ নাসির, রানী ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি মোহাম্মদ বশির, বাংলাদেশ বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভুইয়া, আকিজ ফুডস অ্যান্ড বেভারেজের পরিচালক সৈয়দ জহুরুল আলম, স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের চিফ অপারেটিং অফিসার পারভেজ সাইফুল ইসলাম ও বাপার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শহিদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, গত ৯ জানুয়ারি এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে দেয়। এর মধ্যে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের পণ্য বিস্কুট, কেক, আচার, চাটনি, টমেটো পেস্ট, টমেটো কেচাপ, টমেটো সস, আম, আনারস, পেয়ারা ও কলার পাল্প ইত্যাদি পণ্যসমূহের ওপর ৫ শতাংশ হারে মূসক আরোপ ছিল। তা বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

সেখানে আরও বলা হয়, এ ছাড়া ফলের রস ও ফ্রুট ড্রিংকসের ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ হারে আরোপ ছিল, তা বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে এবং আর্টিফিশিয়াল বা ফ্লেভার ড্রিংকস ও ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকস (নন-কার্বোনেটেড) পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যবসায়ী পর্যায়ে আগে ৫ শতাংশ হারে মূসক আরোপ ছিল, যা বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।

বর্ধিত ভ্যাটের প্রভাব কৃষক থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত পড়বে জানিয়ে তা প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন বাপা নেতারা।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত