Homeঅর্থনীতিপুঁজিবাজারে কর অব্যাহতি দিলেও কোনো ফল আসে না: এনবিআর চেয়ারম্যান

পুঁজিবাজারে কর অব্যাহতি দিলেও কোনো ফল আসে না: এনবিআর চেয়ারম্যান


জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে পুঁজিবাজারে মূলধনি মুনাফার ওপর কর প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন ধরনের করছাড় চেয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জ ও পুঁজিবাজারের অংশীজনেরা। এতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ও আস্থা বাড়বে বলে তাঁরা যুক্তি দেখান। জবাবে করছাড় দিলেও কোনো ‘ফল’ পাওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক্-বাজেট আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।

আবদুর রহমান খান বলেন, ‘সারা জীবন কর অব্যাহতি দিলাম, রেজাল্ট তো আসে না। আগেই কেন অব্যাহতির কথা আসে। সবার আগে কেন ট্যাক্স হলিডে লাগবে? কর অব্যাহতির সংস্কৃতিতে আর থাকতে চাই না। অব্যাহতি দিতে দিতে নিম্ন কর-জিডিপি অনুপাত থেকে বের হতে পারছি না। আমাদের বদনাম হয়ে গেছে, রাজস্ব যা আদায় করি, তার সমপরিমাণ অব্যাহতি দিই।’

আবদুর রহমান বলেন, ‘পুঁজিবাজারে যত সুবিধা দেওয়া হয়েছে, মার্কেটে তার বেনিফিট পাওয়া যায়নি। ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে যারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে, তাদের ৭ থেকে ১৫ শতাংশ ক্যাপিটাল হারিয়েছে। আমার অব্যাহতি সংস্কৃতি থেকে বের হচ্ছি। আমরা পণ করেছি, অব্যাহতি আর দেন না। অব্যাহতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি।’

বাজেট আলোচনায় স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ লেনদেন হতে কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তি কর্তৃক মূলধনি মুনাফার ওপর সম্পূর্ণ কর অব্যাহতি চায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এক্সচেঞ্জটির চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের নিকট থেকে উৎসে কর সংগ্রহের হার হ্রাস, উৎসে লভ্যাংশ আয়ের ওপর কর হ্রাস এবং চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করা, তালিকাভুক্ত বন্ড থেকে অর্জিত আয় বা সুদের ওপর কর অব্যাহতির সুপারিশ করছি।’

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ তাদের বাজেট প্রস্তাবনায় লভ্যাংশ করের ওপর দ্বৈত করের বিধান প্রত্যাহার করে লভ্যাংশ আয়কে করমুক্ত করা, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রদেয় কর হারের ব্যবধান কোনোরূপ শর্ত ছাড়া ১০ শতাংশ করা, নির্ধারিত বার্ষিক মোট নগদ ব্যয় ও বিনিয়োগের সীমা ৩৬ লাখ টাকার স্থলে মোট ব্যবসায়িক টার্নওভারের ১০ শতাংশ করা, এসএমই ও এটিবিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহের তালিকাভুক্তির প্রথম তিন বছরের জন্য কর অব্যাহতি দেওয়া, করমুক্ত আয়ের এ সীমা ৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে।

এ ছাড়া ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) মূলধনি আয়ের ওপর করহার ১৫ শতাংশের পরিবর্তে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাঈদ আহমেদ সংগঠনের পক্ষে বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। সংগঠনটি করপোরেট কর হ্রাস করা, স্বাস্থ্যবিমার ওপর ট্যাক্স কর্তন রহিত করা, অনলাইনভিত্তিক বিমা প্রিমিয়ামের ওপর ভ্যাট ও করপোরেট কর রহিত করার প্রস্তাব জানিয়েছে।

বিমা খাতে সুনামের অভাব আছে জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, এ খাতে গভর্ন্যান্সের (সুশাসন) নেই।

উদাহরণ দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘অনেক বছর আগে আমার কাছে একজন সাংবাদিক আসলেন। তিনি জানালেন, একজন বিমা কোম্পানির কর্মকর্তা বাসায় থাকতে পারছেন না। গ্রাহকের পলিসি ম্যাচিউরড হওয়ার পর কোম্পানি টাকা দিচ্ছে না। এই হলো ইনস্যুরেন্স কোম্পানির অবস্থান। এটাই সত্য।’ তিনি যোগ করেন, উন্নয়ন সহযোগীরা দেশের বিমাকে প্রমোট করতে বলছে। কিন্তু এসব কারণে এটা এগোয় না।

বিমা কোম্পানিগুলো উন্নত দেশের মতো হেলথ কার্ডের প্রচলন করতে না পারায় সমালোচনা করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, হেলথ ইনস্যুরেন্স ভালোভাবে দিতে পারলে বাংলাদেশের মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়বে।

তাদের অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে—বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অনিবাসীকে ঋণের সুদ পরিশোধের সময় উৎসে আয়কর কর্তনের ক্ষেত্রে পূর্বের ন্যায় অব্যাহতির মেয়াদ বর্ধিত করা, ব্যাংকের করপোরেট আয়করের হার ৩০ শতাংশে হ্রাস করা এবং সব তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য অভিন্ন করপোরেট করের হার প্রণয়ন করা, ব্যাংকে মেয়াদি আমানতের হিসাব খোলা ও বহাল রাখা, ঋণ বিতরণ ও ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করার ক্ষেত্রে পিএসআর দাখিলের বাধ্যবাধকতার বিধান প্রত্যাহার করে আগের ন্যায় ই-টিআইএন দাখিলের বিধান পুনর্বহাল করা, দ্বৈত কর (ডাবল ট্যাক্সেশন) ট্রিটি হলো সরকার থেকে সরকার পর্যায়ের চুক্তি; তাই ব্যাংকগুলোকে দ্বৈত কর চুক্তিতে বর্ণিত করহার প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পারকুইজিট বাবদ ব্যয়ের ক্ষেত্রে অনুমোদিত সীমা প্রত্যাহার অথবা বৃদ্ধি করা ইত্যাদি।

মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট করহার ২৫ শতাংশ করা, স্টক লভ্যাংশের ওপর আরোপিত কর প্রত্যাহার করা, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ভ্যাটের হার হ্রাস করে ১০ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে। আলোচনায় এনবিআরের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত