Homeঅর্থনীতিপাচারের টাকা ফেরত আনার কাজ পরবর্তী সরকার যেন ধরে রাখে: গভর্নর

পাচারের টাকা ফেরত আনার কাজ পরবর্তী সরকার যেন ধরে রাখে: গভর্নর


বর্তমান সরকার পাচারের টাকা ফেরত আনার কাজ শেষ করতে না পারলে পরবর্তী সরকার যেন সেই উদ্যোগের ধারাবাহিকতা ধরে রাখে। তা না হলে এই উদ্যোগের কোনও সুফল মিলবে না।

বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার পল্টন টাওয়ারে অবস্থিত ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএর) মিলনায়তনে ‘সেমিনার অন বাংলাদেশ ম্যাক্রোইকোনোমিক ল্যান্ডস্কেপ: চ্যালেঞ্জেস ইন দ্যা ব্যাংকিং সেক্টর অ্যান্ড দ্যা পাথ এহেড’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

পাচারের টাকা ফেরত আনার বিষয়ে গভর্নর বলেন, কোনও দেশই পাচার করা টাকা ৫ বছরের আগে ফেরত আনতে পারেনি। আমরা চেষ্টা করছি। এই সরকারের পক্ষে সম্ভব না হলে পরবর্তী সরকার যেনও এই কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যায়।

ইআরএফ আয়োজিত ওই সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ও পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থনীতিতে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে। তবে বিদেশি মুদ্রা ও রিজার্ভ নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই। রিজার্ভের পতন কিছুটা হলেও থামানো গেছে। আইএমএফের কাছ থেকে এখনও এক টাকাও আসেনি। কিন্তু রেমিট্যান্স ২৪ শতাংশ বেড়েছে। এ মাসে ৩০ শতাংশ ছাড়াবে। এ বছর রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ছাড়াবে। এর মুল কারণ টাকা পাচার ঠেকানো গেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনও ডলার এখন বিক্রি হচ্ছে না। ব্যাংক ও কার্ব মার্কেটে ডলারের দরের ব্যবধান নেই বললেই চলে।

রেমিটেন্সের দর ম্যানিপুলেশন হচ্ছে না দাবি করে গভর্নর বলেন, দুবাইয়ে একটা গ্রুপ ডলার ম্যানুপুলেশন করতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমরা এতে প্রভাবিত হয়নি। আমানতের প্রবৃদ্ধি কমার কারণে প্রাইভেট সেক্টর ক্রেডিট গ্রোথ কমেছে। পলিসি রেট বাড়ার কারণেই যে কমেছে সেটা নয়। সরকারের ঋণ ১২ শতাংশ ছিল সেটা কমে ৯ শতাংশ হয়েছে। এখন ব্যাংকগুলোকে প্রাইভেট সেক্টরে ঋণ দিতে হবে। শুয়ে শুয়ে পয়সা কামানো ব্যাংকিং নয়।

ব্যাংকিং খাত বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক সংস্কারের কথা বলেন গভর্নর। তিনি বলেন, কোনও একক পরিবার যদি একটি ব্যাংকের ৮৭ শতাংশ টাকা নিয়ে যায় সেই ব্যাংক দাঁড়াতে সময় লাগে। এত কিছুর পরেও ইসলামী ব্যাংক ঘুরে দাড়িয়েছে। তারা ঋণ দেওয়া শুরু করেছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ে গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতি এক দিনে হয়নি। পলিসি টাইটেনিং করার পর অন্তত ১৮ মাস সময় লাগে এর বাস্তবায়ন ঘটাতে। আমাদের ক্ষেত্রে ৬ থেকে ৭ মাস হয়েছে। অন্তত আরও ৫ মাস লাগবে এর একটি ভালো প্রভাব দেখতে। আমরা মনিটারি পলিসিকে এখনও সংকোচনমুখিই রেখেছি।

৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাত সংস্কারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেক ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান গভর্নর। তিনি বলেন, বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হার এখন অনেক বেশি স্থিতিশীল। রিয়েল ইফেক্টিভ এক্সচেঞ্জ রেটও ভালো। আমাদের রেমিটেন্সের প্রবাহ ভালো।

এলডিসি গ্রাজুয়েশনের বয়ান পরিবর্তনের কথা বলেন গভর্নর। তিনি বলেন, আমাদের সমগোষ্ঠী কোনও দেশ এখন আর এলডিসিতে নাই। বাংলাদেশ ২০২১ সালেই এলডিসি থেকে বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু আমরা আমাদের দেশের শিল্প খাতের চাপে আমরা এলডিসি উত্তরণের সময় বাড়িয়ে ২০২৬ সালে নিয়ে আসি। গ্রাজুয়েশনের অনেক ভালো দিক আছে। দরিদ্র হয়ে থাকার মধ্যে কোনও সম্মান নেই। আমরা কেনও মধ্যম আয়ের দেশ হতে পারবো না। আমরা তো মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে আছি। কেন আমরা ট্যারিফের সুবিধার জন্য নিম্ন আয়ের দেশ হয়ে থাকবো।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন ইআরএফ এর সহ-সাধারণ সম্পাদক মানিক মুনতাসির।

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিনিয়োগ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ দুটি খাত হলো, ব্যাংক ও রাজস্ব খাত। তবে এনবিআরের কার্যকর সংস্কার না হলে ব্যাংক খাত এগোবে না।

তিনি বলেন, পাচারের টাকা ফেরত আনা সম্ভব। এজন্য পাচারকৃত অর্থের আলটিমেট বেনিফিশিয়ারি কে তা খুঁজে বের করতে হবে।

পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা এক সময় প্রবলেম ব্যাংক ছিলাম। এই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৫৪ শতাংশ। এখন সেই ব্যাংকটি একটি ভালো ব্যাংকের পরিণত হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কারণে।

ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য পরিচালক নিয়োগের নীতিমালা আরও সুগঠিত করার সুপারিশ করেন পূবালী ব্যাংকের এমডি। তিনি বলেন, আইটি বেইজড সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাহলে পলাতক কেউ ই-কেওয়াইসি দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, মুদ্রা পাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সঙ্গে অন্য ব্যাংকের রিয়েল টাইম ইন্টিগ্রেশন থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত