Homeঅর্থনীতিনানা উদ্যোগের পরও কাঙ্ক্ষিত সাড়া নেই সর্বজনীন পেনশনে

নানা উদ্যোগের পরও কাঙ্ক্ষিত সাড়া নেই সর্বজনীন পেনশনে


নানামুখী উদ্যোগের পরও কাঙ্ক্ষিত সাড়া মিলছে না সর্বজনীন পেনশনে। শুরুতে ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও বর্তমানে এর চিত্র ভিন্ন। দিনকে দিন কমছে এর নিবন্ধনকারীর সংখ্যা। ফলে এর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকটাই চিন্তিত সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধনকারী গ্রাহকরা।

যদিও সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, শেখ হাসিনার সরকারের করা এ স্কিম চালু রাখবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আগে এ বিষয়ে আগ্রহী করতে প্রচারণা চালানো হলেও ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর সেভাবে প্রচারেও যেতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি রাখতে গিয়ে অনেকটাই তাড়াহুড়া করে ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট চারটি স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করে সরকার। সরকারের দিক থেকে বিষয়টি ফলাও করে প্রচারের চেষ্টা করা হলেও গত ১৪ মাসে জনগণকে আকৃষ্ট করতে পারেনি স্কিমগুলো। এখন পর্যন্ত সব স্কিমে নিবন্ধন করেছেন ৩ লাখ ৭২ হাজার ১৫৫ জন। এর মধ্যে শুধু সমতা স্কিমে নিবন্ধন করেছেন ২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৮৪ জন। বাকিটা অবশিষ্ট তিনটি স্কিমে। সরকারের এই উদ্যোগ সম্পর্কে এখনও অবহিত নন দেশের বড় সংখ্যাক মানুষ। বলা হচ্ছে, অর্থ বিনিয়োগ করে তা ফেরত পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের নিয়ন্ত্রণে পেনশন স্কিমের অর্থ জমা থাকলে তাতে ঝুঁকি বাড়বে। এ জন্য স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান দরকার।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সাধারণ মানুষের মধ্যে সর্বজনীন পেনশন-সুবিধা জনপ্রিয় করতে ও জনগণকে আকৃষ্ট করতে ৬০ বছর বয়স থেকে মাসিক পেনশন-সুবিধার বাইরে গ্র্যাচুইটি হিসেবে এককালীন মোটা অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করার সুবিধা যুক্ত করতে যাচ্ছে সরকার। এ ছাড়া সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থার আওতায় স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। তারপরও কাঙ্ক্ষিত হারে গ্রাহক বাড়ছে না। বিষয়টি সরকারের নজরে এলে গত ১৪ অক্টোবর পেনশন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করে সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থাকে জনপ্রিয় করার জন্য এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট তিন লাখ ৭২ হাজার ১৫৫ জন গ্রাহক সর্বজনীন পেনশনের চার স্কিমে নিবন্ধন করেছেন। কিন্তু তাদের সিংহভাগই পুরনো নিবন্ধনকারী এবং নতুন করে কেউ নিবন্ধন করেনি বললেই চলে।

পেনশন কর্তৃপক্ষ বলছে, আগে এনরোলমেন্ট নিয়মিত ছিল। সরকার পরিবর্তনের পর প্রচারে যেতে পারেনি পেনশন কর্তৃপক্ষ। এ কারণে এই সময় এনরোলমেন্ট কম হয়েছে। তবে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার জন্য পেনশন কর্তৃপক্ষকে পরামর্শও দিয়েছে পরিচালনা বোর্ড। সময়ে সময়ে যদি কোনও পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হয় তাহলে সেই সুযোগও আছে বলেও জানিয়েছে বোর্ড।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাধারণ মানুষের মধ্যে সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থায় আকৃষ্ট করতে যারা সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হবেন, তারা সবাই স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা পাবেন। আর গ্র্যাচুইটি বাবদ পেনশনারদের কী পরিমাণ অর্থ এককালীন পরিশোধ করা হবে, সে ক্ষেত্রে মাসিক পেনশন কী পরিমাণ কমবে, তা বিশ্লেষণের কাজ শুরু করেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ।

সূত্র আরও বলে, বর্তমানে দেশে প্রচলিত স্কিমের চাঁদার সঙ্গে কোনো ইনস্যুরেন্সের সংযোগ নেই, কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছে। যদি দেখা যায় যে এখানে ইনস্যুরেন্স যোগ করা দরকার, এটা পেনশনারদের জন্য সুবিধাজনক ও পেনশনাররাও তা করতে চাচ্ছেন বা এটা করলে গ্রাহক সংখ্যা বাড়বে, তখন পেনশন কর্তৃপক্ষ এখানে পরিবর্তন আনতে পারে বলে জানা গেছে। যেমন একজন শ্রমিক দুর্ঘটনায় পড়লে তার চাঁদা দেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। তাই ইনস্যুরেন্স থাকলে তিনি হয়তো সেখান থেকে ওই ইনস্যুরেন্স সুবিধাটা পাবেন। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পেনশন পাওয়ার বয়স বাড়ায়। এ রকম পরিবর্তনও আসতে পারে বলে জানা গেছে। সবকিছুই করা হচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থায় আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, মূলত প্রবাসী ও বেসরকারি খাতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের আকৃষ্ট করতে সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা চালু করা হলেও স্কিমগুলো তাদের আকৃষ্ট করতে পারছে না। প্রবাসী ও বেসরকারি খাতে নিয়োজিতদের জন্য চালু করা তিনটি স্কিমে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা মাত্র ৮৬ হাজার ৪৯৪ জন। তাদের মধ্যে অনেকে নিবন্ধন করার পর দু-এক মাস কিস্তি পরিশোধ করার পর আর কিস্তি দিচ্ছেন না।

সরকারের নীতিনির্ধারকরা আশা করেছিলেন, সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থায় প্রবাসীদের বিপুল আগ্রহ দেখা যাবে। এতে প্রবাসীদের শেষ জীবনের আর্থিক নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনি ডলার সংকটের সময়ে সর্বজনীন পেনশনের কিস্তি বাবদ সরকার বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে। কিন্তু প্রবাস স্কিমে অন্তর্ভুক্তির হার সবচেয়ে বেশি হতাশাজনক। গত ১৪ মাসে এই স্কিমে মাত্র ৯১০ জন প্রবাসী অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।

বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের জন্য প্রগতি স্কিমে নিবন্ধন করেছেন ২২ হাজার ৪১০ জন ও অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য সুরক্ষা স্কিমে ৬৩ হাজার ১৭৪ জন নিবন্ধন করেছেন।
সমতা স্কিম অতিদরিদ্রদের জন্য। এই স্কিমে অংশগ্রহণকারীদের মাসিক চাঁদার পরিমাণ এক হাজার টাকা, যার মধ্যে নিবন্ধনকারী ৫০০ টাকা ও সরকার ৫০০ টাকা পরিশোধ করে। অতিদরিদ্রদের জন্য হলেও সরকার থেকে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা হারে চাঁদা পাওয়ার লোভে এই স্কিমে অন্যরাও ঢুকে পড়ছেন। সমতা স্কিমে নিবন্ধনকারীদের তালিকা যাচাই করা হবে। এর মধ্যে যারা অতিদরিদ্র নয় বা এই স্কিমে যুক্ত হওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন, তাদের সমতা স্কিম থেকে বের করে অন্য স্কিমে স্থানান্তর করা হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে নানামুখী কর্মকাণ্ড পরিচালনার কথা ভাবছি। এর অংশ হিসেবে গ্র্যাচুয়িটি ও বিমা-সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি চিন্তাভাবনা করছি। বিশ্বের অন্যান্য দেশ কীভাবে গ্র্যাচুইটি পরিশোধ করছে, সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অর্থ উপদেষ্টার সম্মতিক্রমে তা উপদেষ্টা পরিষদের সভায় উপস্থাপন করা হবে। উপদেষ্টা পরিষদ সম্মতি দিলে এককালীন গ্র্যাচুইটি পরিশোধের বিধান যুক্ত করা হবে। তবে গ্র্যাচুইটি বাবদ এককালীন অর্থ দেওয়ার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, কিছুটা স্থবির হয়ে পড়লেও বন্ধ হচ্ছে না সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি। এ কর্মসূচি বন্ধ করে দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা বর্তমান সরকারের নেই। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা যথারীতি চলবে। এর সুযোগ-সুবিধাও বাড়ানো হচ্ছে।

২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দেশের সেই সময়কালের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থার ওপর প্রস্তুতকৃত কৌশলপত্র উপস্থাপনের পর দ্রুত সম্ভব এই নতুন পেনশন ব্যবস্থার উদ্দেশ্যে একটি আইন প্রণয়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ৩০ মার্চ সর্বজনীন পেনশন আইনের খসড়া প্রকাশিত হয়।

সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল ২০২২ সালের ৯ জুন ঘোষণা করেন যে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা চালু করা হবে। ২০২৩ সালের ২৩ জুন সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়।

সর্বজনীন পেনশন জুলাই ২০২৩ সালে চালু হওয়ার কথার সঙ্গে মিল রেখে ওই বছরের ১৭ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন।

আরও পড়ুন:

সর্বজনীন পেনশন: কীভাবে আবেদন করবেন?

মোবাইল ব্যাংকিংয়েই দেওয়া যাবে সর্বজনীন পেনশনের চাঁদা, চার্জ শতকরা ৭০ পয়সা

সর্বজনীন পেনশন স্কিম: এবার আর্থিক প্রতিষ্ঠানকেও অংশ নেওয়ার নির্দেশ

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যেসব সুবিধা পাবেন বেসরকারি চাকরিজীবীরা

এক মাসে কত জন নিলেন পেনশন স্কিম?





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত