আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় শর্ত পূরণে আগামী তিন মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করতে হবে। সোমবার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ লক্ষ্যমাত্রা তুলে ধরেছে সংস্থাটি।
আইএমএফ মিশনের প্রধান ক্রিস পাপাগিওর্গিওর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়।
বৈঠকে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “আইএমএফ আমাদের আগামী জুনের মধ্যে কর-জিডিপি অনুপাত ৭ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত করতে বলেছে, যা বর্তমানে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।”
চলতি অর্থবছর (২০২৪-২৫) শেষে ৪ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে হবে এনবিআরকে। অর্থাৎ, আগের অর্থবছরের তুলনায় অন্তত ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজস্ব প্রবৃদ্ধি মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
জুলাই-মার্চ (প্রথম ৯ মাসে) এনবিআর প্রায় ২ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে বাকি তিন মাসে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহের প্রয়োজন হবে।
রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, “আইএমএফের এই প্রত্যাশা অত্যন্ত উচ্চাশাবাদী, বাস্তবতার বাইরে ও চ্যালেঞ্জিং।”
স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্যের পাশাপাশি আগামী অর্থবছর (২০২৫-২৬) কর-জিডিপি অনুপাত ৯ শতাংশে উন্নীত করার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। এ ছাড়া বিদ্যমান কর ছাড় (ট্যাক্স এক্সপেনডিচার) কমানো এবং অভিন্ন মূসক (ভ্যাট) হার চালুর সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
তবে সরকার জানিয়েছে, মূসক সংস্কার একবারে নয়, ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে।
এদিকে, রবিবার শুরু হওয়া আইএমএফের চলমান পর্যালোচনা মিশন চলবে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত। এই মিশনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে ঋণের চতুর্থ কিস্তি স্থগিত থাকার পর একসঙ্গে দুটি কিস্তি ছাড় পাবে কিনা বাংলাদেশ।
পর্যালোচনার অংশ হিসেবে আইএমএফ দলের সঙ্গে ইতোমধ্যে অর্থ উপদেষ্টা, অর্থসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং অর্থ বিভাগের ম্যাক্রোইকোনমিক উইংয়ের কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে।
আইএমএফ চলতি অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সামান্য বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করেছে, যা গত ডিসেম্বর মাসে ছিল ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে সরকার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ, যা আগের পূর্বাভাস ৬ দশমিক ৭ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।
মুদ্রাস্ফীতির ক্ষেত্রে কিছুটা স্বস্তির ইঙ্গিত দিয়েছে সংস্থাটি। তাদের মতে, এ বছর গড় মুদ্রাস্ফীতি ৯ শতাংশ হবে, যা আগের অনুমানের চেয়ে কম। সরকার অবশ্য ৮ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে, যা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আরও কমে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।