Homeঅর্থনীতিট্রাম্পের পর এবার ভারতে বিনা শুল্কে গাড়ি রপ্তানি করতে চাচ্ছে ইইউ

ট্রাম্পের পর এবার ভারতে বিনা শুল্কে গাড়ি রপ্তানি করতে চাচ্ছে ইইউ


বিশ্ববাণিজ্যের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভারতের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির দাবি তুলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। যুক্তরাষ্ট্রের পর ইইউও চাচ্ছে ভারত গাড়ি আমদানিতে বিদ্যমান চড়া শুল্ক তুলে দিক কিংবা উল্লেখযোগ্য হারে তা কমিয়ে আনুক। ভারতের জন্য এই মুহূর্তে বিষয়টি কেবল অর্থনৈতিক নয়, কৌশলগত সিদ্ধান্তও বটে। একদিকে দেশীয় গাড়ি শিল্পের স্বার্থরক্ষা, অন্যদিকে বৈশ্বিক বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা। এই টানাপোড়েনের মধ্যে দিল্লি জানিয়েছে, তারা ইইউকে আগের চেয়ে ভালো প্রস্তাব দিতে প্রস্তুত।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে বহুল প্রতীক্ষিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আওতায় গাড়ি আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারও আলোচনার টেবিলে আগের চেয়ে ভালো প্রস্তাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত বলে রয়টার্সকে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

ভারত সরকারের একজন কর্মকর্তা ও শিল্পসংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে শতভাগেরও বেশি থাকা আমদানি শুল্ক ধাপে ধাপে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে ভারত রাজি হয়েছে। যদিও দেশীয় গাড়ি নির্মাতারা অন্তত ৩০ শতাংশ শুল্ক রাখার পক্ষে এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির (ইভি) আমদানিতে আরও চার বছর কোনো শুল্কছাড় না দিতে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন।

ইইউর এমন দাবি এল এমন একসময়, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনও ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আলোচনায় গাড়ি ও ইভি আমদানিতে শুল্ক সম্পূর্ণ তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এতে দেশীয় গাড়ি নির্মাতারা ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছেন।

এই শুল্কছাড় কার্যকর হলে ভক্সওয়াগেন, মার্সিডিজ-বেঞ্জ ও বিএমডব্লিউর মতো ইউরোপীয় গাড়ি নির্মাতাদের জন্য ভারতের বাজার আরও উন্মুক্ত হবে। পাশাপাশি উপকৃত হবে ইলন মাস্কের টেসলাও, যাদের তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি এ বছর ভারতে আমদানি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সম্ভবত বার্লিনের কারখানা থেকে।

ভারতের এক শিল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র বলে, ইইউ আবার নতুন করে বিনা শুল্কে বাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে, আর ভারতও এবার আরও ভালো কিছু দিতে চায়।

সংশ্লিষ্ট তিনটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, গত সপ্তাহে এক বৈঠকে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইইউর দাবি ও ভারতের অবস্থান দেশটির ভারী শিল্প মন্ত্রণালয় ও গাড়ি শিল্পের প্রতিনিধিদের সামনে তুলে ধরেছে।

আলোচনাগুলো এখনো চলমান ও গোপন হওয়ায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করে ওই তিন সূত্র।

ইউরোপীয় কমিশন এ বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও গত মার্চের আলোচনার সারসংক্ষেপ বিনিময় করেছে। কমিশনের বাণিজ্য মুখপাত্র ওলোফ গিল এক বিবৃতিতে বলেন, মূল কিছু বিষয়ে ইইউ-ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি ও লক্ষ্য ভিন্ন। ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আকাঙ্ক্ষার মাত্রাও ভিন্ন।

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিংবা গাড়ি নির্মাতাদের সংগঠন সোসাইটি অব ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স (এসআইএএম) এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

ভারতের সুরক্ষিত গাড়ি বাজার

ভারতে বছরে প্রায় ৪০ লাখ ইউনিট গাড়ি বিক্রি হয়। এটি বিশ্বের অন্যতম সুরক্ষিত গাড়ির বাজার। দেশীয় গাড়ি নির্মাতাদের আশঙ্কা, শুল্ক বড় পরিসরে কমিয়ে দিলে আমদানি করা গাড়ি তুলনামূলক সস্তা হয়ে যাবে, তখন এ শিল্পে স্থানীয় বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়বে।

বিশেষ করে, টাটা মোটরস ও মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রার মতো কোম্পানিগুলো বৈদ্যুতিক গাড়িতে বিপুল বিনিয়োগ করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। কোম্পানি দুটি ইভি আমদানিতে শুল্কছাড়ের ঘোর বিরোধিতা করছে।

ভারতের গাড়িশিল্প যুক্তরাষ্ট্রকে প্রথম ধাপে সীমিতসংখ্যক পেট্রলচালিত গাড়ির শুল্ক ১০০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে। এরপর ধাপে ধাপে তা ৩০ শতাংশে নামানোর আশ্বাস দিয়েছে। তবে ইভির ক্ষেত্রে ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্ক না কমানোর পরামর্শ দিয়েছে তারা। এরপর সীমিত পরিমাণ আমদানির ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে শুল্ক ৩০ শতাংশে নামানোর কথা বলা হয়েছে।

ভারত এরই মধ্যে ইইউকে ১০ শতাংশ শুল্কের প্রস্তাব দিয়েছে কি না—তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের কারণে বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধ ও মন্দার আশঙ্কায় উভয় পক্ষই আলোচনায় কিছুটা নমনীয় হতে পারে।

ভারত ও ইইউ কয়েক বছর ধরে বাণিজ্য চুক্তির আলোচনায় আছে এবং চলতি বছরের শেষ নাগাদ আলোচনা চূড়ান্ত করতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।

ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কোস্টা গত সপ্তাহে এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ভারতের সঙ্গে আলোচনা এখনোই জোর দিয়ে এগিয়ে নেওয়ার সময়।

প্রথম ভারতীয় সূত্র বলে, ‘ইইউ যদি এখন ভারতের সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারে চাপে থাকে, তাহলে আমাদের দেখা উচিত, কীভাবে আমরা সেটা কাজে লাগাতে পারি। সবই নির্ভর করছে দর–কষাকষির ওপর।’





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত