দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে আরও একধাপ এগিয়ে নিতে আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সভায় ১৩টি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে, এতে ব্যয় হবে ৩৮ হাজার কোটি টাকা। বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্প ফেজ-৩, পায়রা সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনাল ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফিডিং কর্মসূচি এবং রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প। এসব প্রকল্পের মধ্যে ৮টি নতুন এবং ৭টি সংশোধিত, যেগুলোর ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবও আলোচনায় আসবে।
প্রকল্পগুলোর অর্থায়নের ধরনও বৈচিত্র্যময়। ৯টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে, ১টি বৈদেশিক অনুদানে, ২টি সরকারি অর্থ ও ঋণসহায়তায়, ১টি অনুদান ও সংস্থার নিজস্ব তহবিলে এবং বাকি ২টি সরকারি ও সংস্থার যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
এই প্রকল্পগুলোর অনুমোদনের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে এবং টেকসই উন্নয়নের পথে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনাসচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন আজকের পত্রিকাকে জানান, আগামীকাল রোববার এনইসি সম্মেলনকক্ষে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অষ্টম সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে চারটি বিভাগের মোট ১৫টি প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এর মধ্যে ভৌত অবকাঠামো বিভাগের ৮টি, আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের ৩টি, কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লিপ্রতিষ্ঠানের ৩টি এবং শিল্প ও শক্তি বিভাগের ১টি প্রকল্প রয়েছে। পাশাপাশি তিনটি প্রকল্পের ব্যয় অপরিবর্তিত রেখে শুধু সময়সীমা বৃদ্ধির প্রস্তাবও আলোচনায় আসবে।
পরিকল্পনাসচিব আরও জানান, এসব প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করেছে। এরপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এগুলো অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য যে প্রকল্পগুলো উপস্থাপন করা হবে তার মধ্যে রয়েছে পায়রা সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনাল ও আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ, যেখানে ব্যয় করা হবে ৫ হাজার ৪২৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে ও টেক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পটি ৬৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে।
এ ছাড়া সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ১৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা, যা ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে সমাপ্ত করা হবে। অন্যদিকে চট্টগ্রামের কালুঘাট এলাকায় পয়োশোধনাগার নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ করা হবে ২০২৭ সালের জুনে। এতে ব্যয় হবে ২ হাজার ১৫৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
এ ছাড়া, অন্য প্রকল্পগুলোর ব্যয় ও বাস্তবায়নের মেয়াদ নিম্নরূপ। বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণ (১,৭০০ কোটি ৫১ লাখ টাকা, মেয়াদ ২০২৭ সাল), ডিজিটাল সংযোগ জোরদারে সুইচিং ও ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন (১২৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা, মেয়াদ ২০২৫ সাল), পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও দোতলা রাস্তা নির্মাণ (৩,৩১৮ কোটি টাকা, মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন), রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজ স্থাপন (১,২৯৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা, মেয়াদ ২০২৮ সালের জুন), ঢাকা শহরের আশপাশে ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্মাণ (৮০৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, মেয়াদ ২০২৭ সালের জুন) এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফিডিং কর্মসূচি সম্প্রসারণ (৫,৪৫২ কোটি ৪১ লাখ টাকা, মেয়াদ ২০২৭ সালের ডিসেম্বর) প্রকল্পগুলোও অনুমোদনের জন্য উপস্থাপিত হবে।
দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ও জনসেবামূলক খাতে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প আলোচনায় আসবে, যার মধ্যে রয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত খাদ্যগুদাম ও অন্যান্য অবকাঠামো সংস্কার (২৫৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা, মেয়াদ ২০২৭ সাল), জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রেকর্ডরুম সংস্কার (৬৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, মেয়াদ ২০২৭ সাল), দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রুভেন বুল তৈরির উদ্যোগ (৬৯ কোটি টাকা, মেয়াদ ২০৩০ সালের জুন) এবং বিদ্যুৎ বিভাগের স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারিং ব্যবস্থা বাস্তবায়ন (৭৭০ কোটি টাকা, মেয়াদ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর)।
এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরও গতিশীল করা, জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন এবং অবকাঠামোগত সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া, তিনটি প্রকল্পের সময়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাবও আলোচনায় আসবে, যা সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।