আন্তর্জাতিক রুটের জন্য জেট ফুয়েলের দাম লিটারে ১ সেন্ট কমানো এবং অভ্যন্তরীণ রুটের জন্য ১ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। তবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) মূল্যায়ন কমিটি অভ্যন্তরীণ রুটে বিদ্যমান দাম ১১০ টাকা থেকে কমিয়ে ১০৫ টাকা ৫১ পয়সা এবং আন্তর্জাতিক রুটে ৭৪ সেন্টস থেকে কমিয়ে ৬৯ সেন্টস করা যেতে পারে বলে জানায়।
রবিবার (২৩ মার্চ) বিইআরসির গণশুনানিতে এমন প্রস্তাবই উপস্থাপন করা হয়। দেশে প্রথমবারের মতো জেট ফুয়েলের দাম নিয়ে গণশুনানি হয়েছে। এতোদিন বিপিসি নিজেই দাম নির্ধারণ করতো।
শুনানিতে বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ, বিইআরসির সদস্য সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া, মো. মিজানুর রহমান, মো. আব্দুর রাজ্জাক ও মোহাম্মদ শাহিদ সারওয়ার উপস্থিত ছিলেন।
বিইআরসি মূল্যায়ন কমিটি শুনানিতে জানায়, বিপিসির ফর্মুলায় থাকা পরিচালন ব্যয়, আর্থিক চার্জ, স্টোরেজ চার্জ, বিতরণ ও বিপণন চার্জ, বিপিসির মার্জিন পর্যালোচনা করার প্রয়োজন রয়েছে। ডিসেম্বর মাসের তথ্য অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ রুটে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের আমদানির খরচ পড়েছে ৭৪ দশমিক ৫২ টাকা। শুল্ক-করাদি ২১ দশমিক ৮৯ টাকা, অপরেশনাল ব্যয় ৭ দশমিক ২৮ টাকা, কোম্পানি পর্যায়ে (বিমানবন্দর খরচ, পরিবহন ও কোম্পানির মার্জিন) ব্যয় ২ দশমিক ৬৪ টাকা এবং বিপিসির মার্জিন ৪ দশমিক ৩৯ টাকা যাচাই করা এবং আমদানি পর্যায়ের অন্যান্য খরচ পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। এসব পর্যালোচনা ছাড়াই তারা উভয়ক্ষেত্রে দর কমানোর পক্ষে মতামত দিয়েছে।
টেকনিক্যাল কমিটি তার সুপারিশে বলেছে, জেট ফুয়েল যেহেতু আমদানি করা হয়, সে কারণে আন্তর্জাতিক বাজারদর, ডলারের রেট, কোস্টাল ব্যয় এবং ট্যাংকলরীর মার্জিন মাসে মাসে সমন্বয় করা যতে পারে। অন্যান্য ব্যয় অপরিবর্তিত থাকবে।
শুনানিতে ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম বলেন, আপনারা লেট পেমেন্ট ও ড্যামারেজ খাতে যথাক্রমে ১ টাকা ও ১০ পয়সা হারে মার্জিন চেয়েছেন। এ ব্যয় নিয়মিত হিসেবে দিতে হলে প্রমাণ করে কোম্পানির দক্ষতা অভাব রয়েছে।
জবাবে বিপিসির জেনারেল ম্যানেজার এটিএম সেলিম উদ্দিন বলেন, আমরা টাকা দেই, অনেক সময় ডলার সংকটে ব্যাংকগুলো পেমেন্ট দিতে বিলম্ব করে।
এমন উত্তরে শামসুল আলম বলেন, এই দুর্বলতার দায় ভোক্তার কাঁধে চাপানো অন্যায়।
নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, পদ্মা অয়েল কোম্পানি মনোপলি ব্যবসার কাছে আমরা জিম্মি হয়ে পড়েছি। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের জ্বালানি তেলের দাম অনেক বেশি। বিদেশি এয়ারলাইন্স এখানে কম তেল কিনছে, আমাদের জ্বালানি খরচ প্রায় ২১ শতাংশ। আমরা তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছি না। আমরা লোকসান দিয়ে ঋণ খেলাপি হচ্ছি আর, পদ্মা অয়েলের হিসাব ভারী হচ্ছে।
শুনানি শেষে বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, আমরা সবার বক্তব্য জানলাম। শুনানি পরিবর্তী কারও কোনও মতামত থাকলে ৭ এপ্রিলের মধ্যে লিখিতভাবে জমা দেওয়া যাবে। যারা অংশ নিয়েছেন তারা দিতে পারবেন, আবার অন্যরাও দিতে পারবেন। আমরা এলপি গ্যাসের ফর্মুলার মতো করতে চাই। আন্তর্জাতিক বাজারদর কমবেশি হলে সেই অংশটুকু মাসে মাসে সমন্বয় করা হবে।