মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নে অবস্থিত চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে চার বছর ধরে কোনো পণ্য আমদানি হচ্ছে না। চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশন ও অভিবাসন কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয় দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে। একসময় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কৈলাশহর ও আগরতলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আমদানি করা হতো বিভিন্ন ফল, কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো এসব আমদানি করা পণ্য। তবে ২০২০ সালের পর থেকে সেই বাণিজ্য থমকে গেছে।
অন্যদিকে, এ রুট দিয়ে এখনো নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে মাছ, সিমেন্ট, প্লাস্টিকসামগ্রী, জুসসহ নানা ধরনের পণ্য। তবে রপ্তানির পরিমাণও আগের তুলনায় অনেক কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ডলার সংকট, অতিরিক্ত ট্যাক্স ও পণ্যের অভাব—সব মিলিয়ে অচলাবস্থাব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আমদানি বন্ধের পেছনে প্রধানত তিনটি কারণ ডলার সংকট, অতিরিক্ত কর এবং ভারতীয় বাজারে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য না পাওয়া।
আমদানি ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ফাবি এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ডলার সংকটের কারণে আমদানিমূল্য অনেক বেড়ে গেছে। কিছুদিন আগে ৮ লাখ টাকার পণ্য এনে ৩ লাখ টাকা লোকসান করেছি। এ পরিস্থিতিতে কেউ আর ঝুঁকি নিতে চায় না।’
রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, দুই দেশের যৌথ আলোচনার মাধ্যমে ট্যাক্স হার কমানো গেলে আবারও আমদানি শুরু হতে পারে। পাশাপাশি স্থায়ী অবকাঠামো, নিরাপদ যোগাযোগ ও আধুনিক সুবিধাসহ একটি পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর গড়ে তোলার দাবি জানানো হয়।
কাঠামোগত সমস্যাও বড় বাধা
চাতলাপুর শুল্ক স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, রপ্তানিতে নিয়মিত অংশ নিচ্ছে বিডিএফ অ্যাগ্রো, জারা এন্টারপ্রাইজ, ফাবি এন্টারপ্রাইজ, রিমন ট্রেডার্স, প্রাণ-আরএফএলের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। একসময় এসব প্রতিষ্ঠান আমদানিও করত। এখন নানা কারণে আমদানি করছে না। তবে ব্যবসায়ীরা জানান, সীমান্তে অবকাঠামো দুর্বলতা, মোবাইল নেটওয়ার্কের সমস্যা এবং রাস্তার বেহাল দশা রপ্তানি কার্যক্রমকেও বাধাগ্রস্ত করছে।
রপ্তানি চললেও আমদানি নেই
শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি মাসে গড়ে ৪০০ টন মাছ, ৫০০ টন সিমেন্ট, ৫০ টন প্লাস্টিক পণ্য এবং আরও ৫০ টনের মতো অন্যান্য পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। তবে ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আমদানির পরিমাণ শূন্যের কোঠায়। ২০২২ সালে চাতলাপুর শুল্ক স্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরে রূপান্তরের জন্য সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
‘পূর্ণাঙ্গ বন্দর হলে বদলে যাবে পুরো অঞ্চল’
চাতলাপুর শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা জামাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই রুটে আমদানি-রপ্তানি বাড়লে কেবল বাণিজ্যিকভাবেই নয়; পুরো অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। তবে প্রয়োজন বাস্তবমুখী উদ্যোগ ও দুই দেশের মধ্যে সমন্বয়।
ব্যবসায়ীরা আশাবাদী, দ্রুত সরকারি পদক্ষেপ নেওয়া হলে এই রুট দিয়ে আমদানি আবার শুরু হবে এবং চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশন হয়ে উঠবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকেন্দ্র।