দেশের পুঁজিবাজার ও ব্যাংক খাত এখন খাদের কিনারায় আর বিমা খাত খাদের ভেতরে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. এম আসলাম আলম। তাঁর মতে, বিমা খাতের এই দুরবস্থার মূল কারণ মালিকদের অনিয়ম ও গ্রাহকদের আস্থার অভাব।
আজ বুধবার আইডিআরএ এবং ইনস্যুরেন্স রিপোর্টার্স ফোরাম (আইআরএফ) আয়োজিত ‘বিমা খাতের সংস্কার ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইআরএফের সভাপতি গাজী আনোয়ার। প্রগতি লাইফের সিইও জালালুল আজিম ও সেনা ইনস্যুরেন্সের সিইও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফিক শামীম পৃথক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
চেয়ারম্যান বলেন, ‘বর্তমানে ৮২টি বিমা কোম্পানির কাছে গ্রাহকদের ৩ হাজার কোটি টাকার দাবি অনিষ্পন্ন রয়েছে। গ্রাহকদের বিমার টাকা না দিতে পারার ভয়ে এ বছর বিমা মেলাই করিনি। বিমার টাকা না দেওয়ার ক্ষেত্রে লাইফ ও নন-লাইফ উভয় কোম্পানিগুলো সমানে সমান। আইডিআরএর আইনি ক্ষমতা নেই উল্লেখযোগ্য শেয়ারহোল্ডারদের সম্পদ বিক্রি করে দাবি পরিশোধের, যার ফলে আদালতের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্তমানে বেশ কয়েকটি মামলা চলমান। অনিষ্পন্ন বিমা দাবি পরিশোধ না হলে বিমা খাতে আস্থা ফিরবে না।’
সেমিনারে সিইওদের সম্পদের বিমা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবের বিষয়ে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘যেখানে মানুষের বিমার প্রতি আস্থা নেই, সেখানে বিমা বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ কি মালিকদের পকেট ভরার জন্য করব? জনকল্যাণের স্বার্থে হলে বাধ্যতামূলক করা হবে, তবে শুধু ব্যবসার সুবিধার্থে নয়।’
আইডিআরএর কার্যক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আইডিআরএ নামে আছে, কিন্তু কার্যক্রম চালানোর যথেষ্ট ক্ষমতা নেই। আইডিআরএ কাউকে সাসপেন্ড করলে তারা আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ নিয়ে ফিরে আসেন, যা আইনগত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। বর্তমান বিমা আইন দুর্বল, যা বিমাকারীদের স্বার্থ রক্ষা করে, কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে দেয় না।’
বিমা আইনকে অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ আখ্যায়িত করে ড. আলম বলেন, আইডিআরএকে দুর্বল করে বিমাকারীদের পক্ষে এই আইন করা হয়েছে। আইডিআরএ কাউকে সাসপেন্ড করলে তারা আদালতে গিয়ে স্টে অর্ডার নিয়ে পুনরায় তারা ফিরে আসে। তাই ব্যাপকভাবে আইডিআরএর ক্ষমতায়ন প্রয়োজন।
আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে তথ্যের প্রয়োজন। কিন্তু বিমা কোম্পানিগুলো সঠিকভাবে তথ্য প্রদান করতে চায় না। যেসব তথ্য দেয়, তা ফেব্রিকেটেড (জালজালিয়াতি) কি না, তা-ও নিশ্চিত নয়। ডিজিটালাইজেশন হলে ৮৫ শতাংশ অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যায়। আমরা পদক্ষেপ নিই; কিন্তু সহযোগিতা পাওয়া যায় না।’
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কোম্পানি করদাতাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা আরও এক দফা বাড়িয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ করবর্ষের জন্য কোম্পানির রিটার্ন জমার শেষ তারিখ ১৬ মার্চ থেকে বাড়িয়ে ৩০ এপ্রিল ২০২৫ নির্ধারণ করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার এনবিআরের করনীতির দ্বিতীয় সচিব এইচ এম শাহরিয়ার হাসানের সই করা এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। আদেশে বলা হয়েছে, আয়কর আইন, ২০২৩-এর ধারা ৩৩৪-এর দফা (খ)-এর আওতায় এই সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন সম্প্রতি এনবিআরের কাছে রিটার্ন জমার সময় বৃদ্ধির অনুরোধ জানায়। এর আগের অর্থবছর ২০২৩-২৪-এও কোম্পানির রিটার্ন জমার সময় ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছিল।
এর আগে, ব্যক্তি করদাতাদের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় ৩১ জানুয়ারি থেকে বাড়িয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি করা হয়। পাশাপাশি, কোম্পানির জন্য নির্ধারিত সময় ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বাড়িয়ে ১৬ মার্চ করা হয়েছিল।