Homeঅর্থনীতিকোথায় থেমে সংস্কার, ব্যাখ্যা দাবি

কোথায় থেমে সংস্কার, ব্যাখ্যা দাবি


দেশের অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে আলোচনা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। সমস্যাগুলো সবারই কমবেশি জানা, আলোচনার কমতিও নেই। সংশ্লিষ্টরা বারবার বলেছেন, বিশ্লেষণও করেছেন—কোথায় কী সমস্যা। কিন্তু সমাধান কোথায়? কেন সংস্কার বাস্তবায়িত হয় না? কোথায় গিয়ে সব থেমে যায়? প্রশ্নগুলোর উত্তরই যেন সবচেয়ে বেশি অনুপস্থিত।

গতকাল সোমবার ‘অর্থনীতির পুনর্বিন্যাস বিষয়ে টাস্কফোর্সের সুপারিশ’ সংক্রান্ত দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের প্রথম দিনের প্রথম অধিবেশনে অংশ নিয়ে এভাবেই দেশের বিশিষ্টজনেরা মন্তব্য করেন। রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এই সম্মেলনের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টাস্কফোর্সের দুই সদস্য গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান ও র‍্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. আবদুর রাজ্জাক।

অনুষ্ঠানে সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক সংকট নতুন কিছু নয়, এ নিয়ে আলোচনা বহুদিনের। সমস্যাগুলো পরিচিত, বিতর্কও কম হয়নি। আমি নিজেই শত শত অনুষ্ঠানে এসব নিয়ে কথা বলেছি। কিন্তু মূল প্রশ্ন থেকে যায়—সমাধান কোথায়? কেন উদ্যোগ নেওয়া হলেও সংস্কার থমকে যায়? আসল বাধাগুলো কী? টাস্কফোর্সের কাছে তাঁর প্রত্যাশা ছিল, শুধু সমস্যার চিত্র নয়, সংস্কারের পথে বাধাগুলোও স্পষ্টভাবে উঠে আসবে। আমি দেখছি, এখনো সংস্কার আটকে আছে।’

অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণবিষয়ক টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন বাস্তবায়ন-সম্পর্কিত এই আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, এখনো তিনি অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণবিষয়ক টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন হাতে পাননি। যা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন ওই সেশনে সভাপতিত্ব করা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ও অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণে গঠিত টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কে এ এস মুরশিদ।

উল্লেখ্য, গত ৩০ জানুয়ারি টাস্কফোর্সের সদস্যরা সাড়ে পাঁচ শ পৃষ্ঠার বেশি একটি প্রতিবেদন সরকারপ্রধানের কাছে জমা দেন। প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ রয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশই ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি-সম্পর্কিত।

শেখ বশিরউদ্দীন অনুষ্ঠানে আরও উল্লেখ করেন, পূর্ববর্তী সরকারের সময় বাংলাদেশের অর্থনীতি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল এবং এই সময়ে ব্যাপক অর্থ পাচার হয়েছে। তিনি বলেন, এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। আগে যেমন তৈরি পোশাকশিল্প দ্রুত উন্নতি লাভ করেছিল, বর্তমানে সে ধরনের গতিতে তা সম্ভব হবে না। সে জন্য তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য ও রপ্তানি সম্প্রসারণে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।

এ সময় দেশের অর্থনীতির নানা সীমাবদ্ধতা এবং তার থেকে বেরিয়ে আসার কৌশল নিয়েও কথা বলেন সিপিডির চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, গত ৩০ বছরে রপ্তানি বহুমুখীকরণের জন্য যেসব খাত চিহ্নিত করা হয়েছিল, সেগুলোর এখনো সমাধান হয়নি। নীতি সংস্কারের জন্য আগে এসব সমস্যার সঠিক বিশ্লেষণ জরুরি। চামড়াশিল্প, আরএমজির বহুমুখীকরণ এবং ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ নিয়ে গভীর গবেষণা ও নীতিনির্ধারণ প্রয়োজন।

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অর্থনীতিকে পুনঃশোধন (রিসেট) করতে হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। বাজারকে তার গতিতে চলতে দিতে হবে। এর জন্য নীতিমালা বড় ধরনের শিথিলকরণ প্রয়োজন। অনেকগুলো কাজের মধ্যে সরকার যেগুলো করছে, সেগুলোর কিছু বের করে এনে ট্রেড বডিকে দিয়ে দিতে হবে।’

টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য ও অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান বলেন, ‘পোশাকের বাইরে শ্রমঘন শিল্পে আমাদের যেতে হবে। দক্ষতাভিত্তিক পণ্য ও সেবার দিকে আমাদের যেতে হবে। পোশাক খাতেও বৈচিত্র্য আনতে হবে। আমাদের নীতিমালাগুলোর মধ্যে সমন্বয় আনতে হবে। আমরা দেখি, একটি নীতি রপ্তানিকে উৎসাহিত করে, আবার আরেকটা নীতি রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করছে।’

র‍্যাপিডের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক বলেন, এখনই সরকারের উচিত একটি চিফ ট্রেড নেগোশিয়েটর অফিস গঠন করা, যাতে ট্রেড পলিসি সুষ্ঠুভাবে সমন্বিত ও সমন্বয় করা যায় এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে কার্যকরভাবে এর প্রয়োগ সম্ভব হয়।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত