Homeঅর্থনীতিউত্তরের আলু চাষিদের মাথায় হাত

উত্তরের আলু চাষিদের মাথায় হাত


বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের প্রধান আলু উৎপাদনকারী জেলা রংপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকেরা এ বছর বহুমুখী সংকটে পড়েছেন। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, হিমাগারের সীমিত ধারণক্ষমতা, সংরক্ষণ ব্যয়ের ঊর্ধ্বগতি এবং বাজারে আলুর নিম্নমূল্য—সব মিলিয়ে তাঁরা আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন।

হিমাগারের সংকট ও ভাড়া বৃদ্ধি

রংপুর কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১৯ লাখ ৯৮ হাজার টন। কিন্তু জেলায় বিদ্যমান ৪১টি হিমাগারের মোট ধারণক্ষমতা মাত্র ৪ লাখ ২৯ হাজার টন, যা উৎপাদনের তুলনায় প্রায় এক-চতুর্থাংশ। ফলে হিমাগারগুলোতে আলু সংরক্ষণের জন্য অগ্রিম ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বুকিং চার্জ নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সংরক্ষণ ভাড়া কেজি প্রতি ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে আগে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ভাড়া ছিল ৩০০-৩২০ টাকা। এবার বস্তাপ্রতি ভাড়া বেড়ে ৪০০ টাকা হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়েরও একই পরিস্থিতি।

উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি

রংপুরের কৃষকেরা জানান, ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে আলু উত্তোলন পুরোদমে শুরু হবে। এ বছর আলু উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। বীজ, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি বাড়ার কারণে প্রতি হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। গত বছর সরকারি বীজের কেজি ছিল ২৮-৩০ টাকা, যা এ বছর বেড়ে ৫০-৬০ টাকা হয়েছে। বেসরকারি বীজের দামও কেজি প্রতি ৪০ থেকে বেড়ে ৭৫-৮০ টাকায় পৌঁছেছে। এতে মাঠপর্যায়ে আলুর উৎপাদন খরচ পড়ছে কেজিপ্রতি ১৮-২০ টাকা, কিন্তু বর্তমানে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০-১২ টাকা দরে। এতে মৌসুমের শুরুতে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বাজারমূল্য কমা

উৎপাদন খরচ বাড়ার পাশাপাশি বাজারে আলুর দামও কমে গেছে। রংপুরের কৃষকেরা প্রতি কেজি আলু ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করছেন, যা তাঁদের উৎপাদন খরচের তুলনায় কম। এতে কেজিপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা লোকসান হচ্ছে। অন্যদিকে উৎপাদন খরচ ও সংরক্ষণ ব্যয় বাড়ার পরও বাজারে আলুর দাম পাচ্ছেন না ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকেরা। বাধ্য হয়ে এখানকার কৃষক প্রতি কেজি আলু ৮ থেকে ১১ টাকায় বিক্রি করছেন, যা তাঁদের উৎপাদন খরচের অর্ধেকের কম। ফলে তাঁরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

কৃষকদের বিক্ষোভ

হিমাগার ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে রংপুরের আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। তাঁদের দাবি, হিমাগারের মালিকদের সিন্ডিকেট ভেঙে বস্তাপ্রতি ভাড়া ২৮০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। বিক্ষোভের ফলে মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়, যা পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে নিয়ন্ত্রণে আসে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঢোলারহাট এলাকায়ও কোল্ডস্টোরেজের ভাড়া বাড়ার প্রতিবাদে কৃষকেরা সড়কে আলু ফেলে বিক্ষোভ করেছেন।

হিমাগারের মালিকদের বক্তব্য

হিমাগারের মালিকেরা জানান, বিদ্যুৎ, শ্রমিকের মজুরি এবং ব্যাংক সুদের হার বাড়ায় সংরক্ষণ খরচ বেড়েছে। বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা নির্ধারণ করেছে, যা তাঁরা অনুসরণ করছেন।

বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক গোলাম সারোয়ার রবিন ভাড়া বাড়ার কারণ হিসেবে বলেন, এ বছর বিদ্যুতের খরচ, শ্রমিকের খরচ ও কর্মচারীদের বেতন বেড়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকের সুদহার ৯ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ হয়েছে। এসব কারণে কোল্ডস্টোরেজে আলু সংরক্ষণের খরচ অনেক বেড়েছে।

রংপুরের বদরগঞ্জের শাহজালাল হিমাগারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আহসান হাবীব বলেন, ‘এবার আলুর উৎপাদন অনেক বেশি। তাই বিশৃঙ্খলা এড়াতে আমরা বস্তাপ্রতি ৫০ টাকা বুকিং চার্জ নিচ্ছি। আগে তা কখনো নেওয়া হয়নি। একইভাবে জেলার তারাগঞ্জের এন এম হিমাগারের ব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারির পরে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ শুরু হবে। বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা অগ্রিম বুকিং নেওয়া হচ্ছে। এই টাকা সংরক্ষণের ভাড়া থেকে সমন্বয় করা হবে।

প্রশাসনের পদক্ষেপ

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা জানান, তিনি আলুচাষি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং হিমাগারের মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে যৌক্তিক ভাড়া নির্ধারণের চেষ্টা চলছে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত