রোজার শুরুতে মুরগির দাম কিছুটা কম ছিল। তবে ঈদকে সামনে রেখে সব ধরনের মুরগির দাম বাড়তে শুরু করেছে। পাশাপাশি বেশকিছু সবজির দামও বেড়েছে। তাছাড়া আগে থেকে বাড়তি থাকা সবজির দামও কমেনি।
শুক্রবার (২১ মার্চ) রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরের কাঁচাবাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
বেড়েছে সব ধরনের মুরগির দাম
গত সপ্তাহের তুলনা আজ বাজারে সব ধরনের মুরগির দাম প্রতি কেজিতে পাঁচ টাকা থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এছাড়া গরুর মাংসের দাম কমেছে ২০ টাকা এবং অপরিবর্তিত রয়েছে খাসির মাংসের দাম।
আজ বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকা এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া আজ ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ২০৮-২২৩ টাকা, কক মুরগি ২৮০-২৯৫ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৮৫-২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম ১১০-১১৫ টাকা, সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়।
এ ক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ১৩-২৩ টাকা, কক মুরগির দাম বেড়েছে ২৫ টাকা, লেয়ার মুরগির দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা। দেশি মুরগি ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে মাস খানেক আগে থেকেই গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছিল ৮০০ টাকা কেজিতে, যা আজ ২০ টাকা কমে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া ফার্মের মুরগির লাল ও সাদা ডিমের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
মুরগির দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে মায়ের দোয়া চিকেন হাউজের বিক্রেতা মো. আতিক বলেন, ‘ঈদ আসছে তাই দাম বেড়েছে। কয়েকদিন পরে আরও বাড়বে। মানুষের চাহিদা বেশি থাকাতে সাধারণত এ রকম সময়ে দাম বেড়ে যায়।’
ইব্রাহিম চিকেন হাউজের বিক্রেতা বলেন, ‘গোড়া থেকে দাম বেড়েছে। আমাদের কেনা বেশি তাই বিক্রিও করি বেশি দামে। আমাদের হাতে দাম বাড়ানোর কিছু নেই।’
এদিকে বাজার করতে আসা ক্রেতা আব্দুল গণি বলেন, ‘আসলে দামতো বাড়ছেই। যে কোনোরকম অনুষ্ঠান হলেই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। কারও কাছে অভিযোগ করার কিছু নেই। বেশি দামে জিনিসপত্র বিক্রি হবে আর আমরা কিনবো এটাই আমাদের নিয়ম হয়ে গেছে।’
সবজির দাম চড়া
কেবল মুরগির দামই না, একইসঙ্গে বেড়েছে বেশকিছু সবজির দামও। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব সবজির দাম প্রতি কেজিতে পাঁচ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এছাড়া লম্বা বেগুন, লেবু ও শসার মতো সবজিগুলোর উচ্চ দাম এখনও অপরিবর্তিত।
আজ বাজারে প্রতি কেজি টক টমেটো ২০-৩০ টাকা, দেশি গাজর ৩০-৪০ টাকা, শিম ৬০-৭০ টাকা, লম্বা বেগুন ১০০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১০০ টাকা, শসা ৫০-৮০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০ টাকা, সজনে ডাঁটা ১৪০-১৬০ টাকা, পটল ৬০-৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, কচুরমুখী ১২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০-৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০-৭০ টাকা, ধনেপাতা ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৫০ টাকা, ফুলকপি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা করে। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৩০ টাকা, হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়।
এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে শিমের দাম ১০ টাকা, সাদা গোল বেগুনের দাম ১০ টাকা, কালো গোল বেগুনের দাম ১০ টাকা, পেঁপের দাম ১০ টাকা, মূলার দাম ১০ টাকা, ঝিঙার দাম ২০ টাকা, কচুরমুখীর দাম ২০ টাকা বেড়েছে। প্রতি পিসে চাল কুমড়ার দাম বেড়েছে ১০ টাকা, ফুলকপির দাম বেড়েছে ১০ টাকা এবং বাঁধাকপির দাম বেড়েছে ৫-১০ টাকা।
এছাড়া প্রতি কেজিতে করলার দাম ২০ টাকা, সজনে ডাঁটার দাম ২০ টাকা, পটলের দাম ৩০ টাকা কমেছে। অন্যান্য সবজির দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
কমেছে পেঁয়াজ-আদা-রসুনের দাম
আজ মান ও আকারভেদে প্রতি কেজি নতুন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। এর মধ্যে ছোট ও বড় উভয় আকারের পেঁয়াজ ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আজ প্রতি কেজি নতুন সাদা আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা, নতুন লাল আলু ২০ টাকায়। নতুন বগুড়ার আলু ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আজ নতুন দেশি রসুন ৮০ টাকা, চায়না রসুন ২৪০ টাকা, চায়না আদা ১৮০-২০০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১০০ দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে গত সপ্তাহের তুলনায় আজ প্রতি কেজিতে লাল ও সাদা আলুর দাম কমেছে পাঁচ টাকা, নতুন দেশি রসুনের দাম কমেছে ২০ টাকা, চায়না আদার দাম কমেছে ২০ টাকা এবং নতুন ভারতীয় আদার দাম কমেছে ২০ টাকা।
আলু পেঁয়াজের বিক্রেতা মো. শরীফ বলেন, ‘ঈদের আগে আলু-পেঁয়াজের দাম আর বাড়বে না। কারণ বাজারে এগুলো এখন প্রচুর আছে। তবে আদা-রসুনের দাম এখন কমলেও ঈদের আগে বাড়তে পারে। এগুলো যেহেতু ইমপোর্ট করা হয়, তাই এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
এদিকে আজ বাজারে আকার ও ওজন অনুযায়ী ইলিশ মাছ ১ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা, রুই মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০-৭০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০-১ হাজার ৪০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪০০ টাকা, কৈ মাছ (চাষের) ২৫০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৫০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-১ হাজার ২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০-৮০০ টাকা, বোয়াল ৮০০-১ হাজার ২০০ টাকা, শোল মাছ ৮০০-১০০০ টাকা, মেনি মাছ ৬০০-৭০০ টাকা, চিতল মাছ ৬০০-১০০০ টাকা, সরপুঁটি মাছ ২৫০-৫০০ টাকা, রূপচাঁদা ৮০০-১ হাজার ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুদি দোকানের পণ্যের দাম অপরিবর্তিত
অন্যদিনের মতো আজও মুদিপণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। শুধু খোলা চিনির দাম প্রতি কেজিতে কমেছে পাঁচ টাকা করে।
আজ বাজারে প্রতি কেজি ছোট মসুর ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১২০ টাকা, মাষকলাই ডাল ১৯০ টাকা, ডাবলি ৬০ টাকা, ছোলা ১০৫ টাকা, কাজু বাদাম ১ হাজার ৬৫০ টাকা, পেস্তা বাদাম ২ হাজার ৭০০ টাকা, কাঠ বাদাম ১ হাজার ২২০ টাকা, কিশমিশ ৬০০-৭০০ টাকা, দারুচিনি ৫২০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৪০০ টাকা, কালো গোল মরিচ ১ হাজার ৩০০ টাকা, সাদা গোলমরিচ ১ হাজার ৬০০ টাকা, জিরা ৬০০ টাকা, প্যাকেট পোলাও চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাও চাল মান ভেদে ১১০-১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৫৭ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১২০ টাকা, খোলা চিনি ১১৫ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ছবি: প্রতিবেদক