ঈদ মানে আনন্দ। আর সেই আনন্দের বড় একটা অংশজুড়ে থাকে সেমাই। তাই ঈদ ঘনিয়ে আসায় রাজবাড়ীর সেমাই কারখানাগুলোয় লেগেছে ব্যস্ততার ছোঁয়া। ভোরের আলো ফোটার আগে কারিগরদের হাত চলে সেমাই তৈরির কাজে, যা গোধূলির রংমাখা সন্ধ্যা পেরিয়ে গভীর রাতেও থামে না। রাজবাড়ীর চাহিদা মিটিয়ে কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে পাড়ি জমাচ্ছে এখানকার সুস্বাদু সেমাই। গুণগত মান নিশ্চিত করতে মালিক ও বিসিক কর্মকর্তাদের তীক্ষ্ণ নজরদারি চলছে পুরোদমে। এদিকে ঈদের উৎসবে মিষ্টিমুখ করতে সেমাইয়ের বাজার এখন গরম। বেড়েছে ক্রেতার চাহিদা ও দাম।
রাজবাড়ী বিসিক শিল্পনগরীর কারখানাগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের বাজার দখলে নিতে শ্রমিকেরা বিরামহীন কাজ করছেন। উন্নত মানের আটা মেশিনে মিশিয়ে খামির বানানো হচ্ছে, যা থেকে সূক্ষ্ম সুতার মতো সেমাই বেরিয়ে আসছে। এরপর রোদে শুকিয়ে, আগুনের তাপে ভেজে, তা প্যাকেটজাত করা হচ্ছে বাজারে পাঠানোর জন্য।
স্থানীয় দ্বীন ফুড প্রোডাক্টস কারখানার ম্যানেজার আব্দুস ছাত্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁদের কারখানায় সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সেমাই তৈরি করা হয়। স্থানীয়ভাবে আটা সংগ্রহ করে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ মণ সেমাই উৎপাদন করা হয়। কেমিক্যাল ও কৃত্রিম রঙের ব্যবহার নেই বলে ক্রেতাদের মধ্যে এর আলাদা কদর রয়েছে।
শ্রমিক নাফিজা খাতুন বলেন, ‘এখন দম ফেলার সময় নেই। সকাল ৮টায় কাজে ঢুকি এবং রাত ৮-৯টায় ছুটি পাই। মেশিনে সেমাই তৈরি করে রোদে শুকাই। তারপর আগুনে ভেজে প্যাকেটজাত করি। সারা শরীর আটায় ভরে যায়; ঈদের সময় এটি আমাদের রুটিন।’
আরেক শ্রমিক ফুলজান বেগম জানান, ‘পরিচ্ছন্নতা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। গ্লাভস পরে, নির্দিষ্ট পোশাক পরে কাজ করি। মালিকেরাও সব সময় খেয়াল রাখেন, যেন কোনোভাবে মানের সঙ্গে আপস না হয়।’
রাজবাড়ী বিসিক শিল্পনগরীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক চয়ন বিশ্বাস জানান, বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় তিনটি কারখানাসহ জেলায় মোট চার কারখানায় প্রতিদিন ১ হাজার থেকে দেড় হাজার কেজি সেমাই তৈরি হচ্ছে। ঈদ সামনে রেখে উৎপাদন দ্বিগুণ বেড়েছে। তাই খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেউ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরি করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।