Homeঅর্থনীতিঈদের পরও বাজারে আসছে না নতুন নোট

ঈদের পরও বাজারে আসছে না নতুন নোট


বাজারে নতুন টাকার সরবরাহ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এক জটিল পরিস্থিতি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিসংবলিত নতুন নোট ঈদের আগে ছাড়া হয়নি এবং ঈদের পরও তা বাজারে আসবে না। আগেই ছাপানো নোটগুলো ভল্টে জমা থাকলেও সরকারের নীতিগত কারণে সেগুলো বিতরণ স্থগিত রাখা হয়েছে। এই অবস্থায় অনেক ব্যাংক তারল্যসংকটে পড়েছে, বিশেষত যেসব ব্যাংক নগদ টাকার সংকটে রয়েছে।

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, জুলাই মাসে নতুন নোট বাজারে আসবে, তবে তার আগে ভল্টে জমে থাকা পুরোনো নোটগুলো পুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোর ভল্টে জমে থাকা নতুন নোট এখন কোনো কাজে আসছে না, যা তাদের জন্য বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, ঈদের আগে নতুন নোট বাজারে ছাড়ার প্রচলিত রীতি ভেঙে যাওয়ায়, ব্যাংকগুলোর নগদ টাকার প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়েছে। অনেক ব্যাংকের শাখায় ৫, ২০ ও ৫০ টাকার বিপুল পরিমাণ নতুন নোট জমে রয়েছে; কিন্তু সেগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকও আপাতত এই নোট ফেরত নিচ্ছে না, ফলে ব্যাংকিং খাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, ভল্টের ধারণক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণে নতুন নোট বিতরণ না করতে পারায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক শাখার ভল্টে সীমার চেয়ে বেশি টাকা জমা থাকলে তা বাংলাদেশ ব্যাংক বা সোনালী ব্যাংকের চেস্ট শাখায় জমা দিতে হয়। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি আলাদা, কারণ নতুন নোট গ্রহণ করা হলেও তা বিতরণ করা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নতুন নোট বাজারে না ছাড়ার সিদ্ধান্ত সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নেওয়া হয়েছে। যেহেতু আগে ছাপানো নোট বঙ্গবন্ধুর ছবিযুক্ত, তাই বিতর্ক এড়াতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, নতুন নকশার নোট বাজারে আসতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। সাধারণত নতুন নোট ছাপানোর প্রক্রিয়া শেষ হতে ১২-১৮ মাস লেগে যায়। ফলে জুনের আগে নতুন নোট বাজারে আসার সম্ভাবনা কম।

এই অবস্থায় তারল্যসংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর জন্য সমস্যা আরও বেড়ে যাচ্ছে। সূত্রমতে, ঢাকায় বিভিন্ন ব্যাংকের ৮০টি শাখার ভল্টে ৫, ২০ ও ৫০ টাকার নতুন নোটের বিশাল অঙ্ক অলস পড়ে রয়েছে। এখন এসব নতুন টাকা নিয়ে ব্যাংকগুলোর বিড়ম্বনার শেষ নেই। বিশেষ করে জনতা ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ন্যাশনাল ব্যাংক ও এবি ব্যাংকের কয়েকটি শাখা সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখে পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্রমতে, একটি ১ হাজার টাকার নোট তৈরিতে খরচ হয় ১২-১৫ টাকা এবং মোট টাকার অর্ধেকের বেশি ১ হাজার টাকার নোট। অন্য নোটগুলোর খরচ ৫-১০ টাকা। ফলে পুরোনো নোট নষ্ট করলে জনগণের টাকার অপচয় হবে। দেশে সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার ছাপানো নোট রয়েছে, যার মধ্যে সাধারণ সময়ে ২ লাখ ৬০ থেকে ২ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা মানুষের হাতে থাকে। ঈদ উৎসবের সময় এ চাহিদা বেড়ে প্রায় ৩ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছে যায়। সাধারণত এ সময়েই নতুন নোট বেশি বাজারে ছাড়া হয়। কিন্তু এবারের সিদ্ধান্তের ফলে সেই প্রচলন ব্যাহত হয়েছে।

বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপকেরা বলছেন, ঈদের আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নতুন নোট সংগ্রহ করা হয়েছিল, যা এখন শাখাগুলোর ভল্টে জমে আছে। সাধারণত নতুন নোট বিতরণের বিপরীতে পুরোনো নোট ফেরত নেওয়া হয়, কিন্তু এবার বাংলাদেশ ব্যাংক সেই নোট ফেরত নিচ্ছে না। ফলে শাখাগুলোতে অপ্রয়োজনীয় বিশাল অঙ্কের নতুন নোট জমে থাকছে, যা ব্যাংকের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করছে। এই অবস্থায় নতুন নোট বাজারে ছাড়ার বিলম্বের ফলে ব্যাংকগুলোর তারল্যসংকট আরও তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, নতুন নোট বাজারে ছাড়তে দেরি হলে অর্থনীতিতে কিছু নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে অর্থের প্রবাহ কমে গেলে তারল্যসংকট আরও প্রকট হতে পারে। আবার যদি ভল্টে থাকা নোট নষ্ট করে নতুন ছাপানো হয়, তাহলে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে, যা আর্থিকভাবে ক্ষতিকর হতে পারে।

এদিকে, সাধারণ জনগণের মধ্যেও এ সিদ্ধান্ত নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কিছু মানুষ মনে করছেন, বঙ্গবন্ধুর ছবিযুক্ত নতুন নোট বাজারে না ছাড়া ভালো হয়েছে, কারণ এটি রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিতে পারত। তবে অনেকেই আবার বলছেন, এত পরিমাণ নতুন নোট নষ্ট করা জনগণের অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি বিবেচনা করে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নতুন নোট নেওয়া হবে, তবে আপাতত সেগুলো বাজারে ছাড়া হবে না। নতুন নোট ছাপানো একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং তা বাস্তবায়নে আরও কিছু সময় লাগবে।

বাংলাদেশের মুদ্রা ছাপানোর দায়িত্বে থাকা দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেডের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সর্বশেষ নতুন নকশায় ২০০ টাকার নোট চালু হয়েছিল ২০২০ সালে। এরপর থেকে সব নোটেই বঙ্গবন্ধুর ছবি যুক্ত করা হয়েছে। ফলে নতুন ডিজাইনের নোট বাজারে আনতে আরও সময় লাগবে। তবে সরকার এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলে নতুন নোট বাজারে আসতে পারে আগামী মে-জুনের মধ্যে।

সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন, এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের করণীয় নির্ধারণ জরুরি। পরিস্থিতি উত্তরণে ব্যাংকগুলোর তারল্যসংকট নিরসনে ভল্টে থাকা নতুন নোট ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে পারে। অন্যথায় ব্যাংকগুলোর এ সংকট আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে, যা সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত