বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব পড়েছে আমদানিতে, কমেছে বাণিজ্যের গতি। তবু রাজস্ব আদায়ের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বেনাপোল কাস্টম হাউস। একই সঙ্গে পৌঁছে গেছে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার দ্বারপ্রান্তে। এই সময় (জুলাই-ডিসেম্বর) ৩ হাজার ২২৫ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করেছে প্রতিষ্ঠানটি, যা বছরজুড়ে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার প্রায় অর্ধেক।
যদিও এ সময়ে স্থলবন্দরটি দিয়ে আগের তুলনায় আমদানি ৬ শতাংশ কমেছে, তা সত্ত্বেও এই অর্জনের মধ্য দিয়ে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কাতারে রয়েছে। বেনাপোল কাস্টম হাউসকে চলতি অর্থবছরের জন্য রাজস্ব সংগ্রহে ৬ হাজার ৭০৫ কোটি টাকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় এবার ৭৫৭ কোটি টাকা বেশি আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে।
বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, রাজস্ব আয়ে দেশের স্থলবন্দরগুলোর মধ্যে বেনাপোলের অবস্থান চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের পরেই। কাস্টমস কর্তৃপক্ষের মতে, দক্ষ জনবল, অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধির কারণেই বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও এ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে।
জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য সহজ করতে বেনাপোল বন্দরের শূন্যরেখায় ৪১ একর জমিতে চালু হয়েছে কার্গোভেহিকেল টার্মিনাল, যা বন্দরের সক্ষমতা বাড়িয়েছে। এতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম দ্রুততর হওয়ায় অর্থবছর শেষে রাজস্ব আদায়ে রেকর্ড সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বেনাপোলে ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মতিয়ার রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, কার্গোভেহিকেল টার্মিনাল চালুর ফলে বাণিজ্য সম্প্রসারণের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আমদানি ও রাজস্ব বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমদানি কিছুটা কমলেও রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ হয়েছে। সবার সহযোগিতার ফলে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। তিনি আরও জানান, গত অর্থবছরে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেনাপোল কাস্টমস অতিরিক্ত ২১৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছিল।
এই স্থলবন্দরের হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহিদ আলী জানান, ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য দ্রুত খালাসে শ্রমিকেরা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। আর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বন্দরবিষয়ক সম্পাদক মো. মেহেরুল্লাহ বলেন, বাণিজ্য সুবিধা বাড়ানো হলে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি আরও বাড়বে।
বেনাপোল বন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) ফয়সাল আহসান সজীব জানান, নতুন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে, যা শেষ হলে বাণিজ্য কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত হবে।