প্রাচীন রোমের মানুষ কাজ করার সময় কোমরবন্ধনীর সঙ্গে বেঁধে রাখতেন একখণ্ড কাপড়। নাম ছিল সুডারিয়াম। মূলত কাজ করার সময় ঘাম মোছার জন্য ব্যবহার করা হতো কাপড়ের এই খণ্ড, আমাদের গামছার মতো। কারও কারও মতে, রোমের মানুষেরও আগে মিসরের রানি নেফারতিতি হাতে বোনা একখণ্ড কাপড় মাথায় জড়াতেন।
রোমের পুরুষদের ব্যবহার করা হোক কিংবা নেফারতিতির ব্যবহার করা—এই ‘একখণ্ড’ কাপড়কে বিশেষজ্ঞরা বলতে চান আজকের দিনের স্কার্ফের আদি সংস্করণ। উৎপত্তি যেখানেই হোক না কেন, এখন এর পরিচয় ফ্যাশনের অনুষঙ্গ হিসেবে।
ধারণা করা হয়, আঠারো শতকের দিকে সিল্কের স্কার্ফ ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবে বাজারে আসে। স্টাইল-সচেতনদের চাহিদা থাকায় ধীরে ধীরে এর উৎপাদন বাড়তে থাকে। কিন্তু সিল্কের স্কার্ফ উচ্চবিত্তদের আলমারিতে সহজে জায়গা পেলেও সাধারণ নারীদের জন্য সেটি ছিল বিলাসী পণ্য। ফলে রেশমের জায়গায় রেয়নের মতো সাশ্রয়ী কাপড়ে তৈরি হতে থাকে স্কার্ফ। বলা বাহুল্য, এরপর থেকে এটি প্রায় সব শ্রেণির নারীর হাতে পৌঁছায়।
আঠারো থেকে একুশ শতক—এই সময়ে স্কার্ফ পরার প্যাটার্ন বদল করে বিভিন্ন সমাজে। ফলে এটি ব্যবহারের অনেক ধরন তৈরি হয়।
সেই ধারাবাহিকতায় এখন চারকোনা আকৃতির পাশাপাশি বাজারে পাওয়া যায় আয়তাকার স্কার্ফ। এগুলো লং স্কার্ফ নামেও পরিচিত। সিনথেটিক ও সুতি কাপড়ে তৈরি এই কাপড়খণ্ডের প্রান্তে অনেক সময় ট্যাসেল, উলের বল, লেইস বা ঝুমঝুমি দেওয়া থাকে। এটিও এর সুদীর্ঘ বিবর্তনের ফল। সাধারণত লম্বায় এগুলো ৪০ থেকে ৮০ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। যদিও এসবের গড় দৈর্ঘ্য ৫০ থেকে ৬৫ ইঞ্চি পর্যন্ত। একরঙা বা ছাপা এসব স্কার্ফ ফতুয়া, টি-শার্ট ও কুর্তার সঙ্গে ইদানীং খুব চলছে।
স্কার্ফ বিভিন্ন স্টাইলে পরা যায়, সে তো জানা কথা। কিন্তু যাঁরা নেফারতিতির মতো চুল ঢাকতে এটি ব্যবহার করেন, গল্প করার সুযোগটা এখন তাঁদের সঙ্গেই। একে বলা হয় টার্বান স্টাইল। আফ্রিকান নারীরাও অনেক সময় স্কার্ট-টপস ও ম্যাক্সির সঙ্গে চুলে টার্বান স্টাইলে স্কার্ফ পরেন। ধ্রুপদি ছোঁয়া থাকলেও চলতি ট্রেন্ডে বিশ্বাসী এসব স্কার্ফ টি-শার্ট, স্কার্ট ও শার্টের সঙ্গে চুলে বা খোঁপায় জড়িয়ে নিতে একটুও দ্বিধা করছেন না। এই হাওয়া লেগেছে আমাদের দেশের ফ্যাশনেও।
টার্বান স্টাইলে স্কার্ফ পরতে চাইলে
পারফেক্ট টার্বান স্টাইলে স্কার্ফ পরতে চাইলে চারকোনা সিল্কের স্কার্ফগুলো ব্যবহার করুন। এগুলো বিভিন্ন প্যাটার্নে টার্বানের মতো পরা যেতে পারে। চারকোনা আকৃতির স্কার্ফের ধরাবাঁধা কোনো মাপ হয় না। এগুলোর পরিমাপ ১৬ বাই ১৬ ইঞ্চি বা ৬০ বাই ৬০ ইঞ্চি হতে পারে।
সমান জায়গায় স্কার্ফটি পুরোপুরি ছড়িয়ে নিন। তারপর কোনাকুনি এক কোনা অর্ধেক ভাঙুন। এরপর অন্য কোনাটি ভেঙে নিন। এবার দুপাশ থেকে আরও দুটো ভাঁজ দিন। যেকোনো এক পাশ থেকে পেঁচিয়ে নিন পুরোটা; হয়ে গেলে মাথার পেছন থেকে জড়িয়ে কপালের ওপরে মাথায় গিঁট দিয়ে স্কার্ফের দুই প্রান্ত আবার পেছনে নিয়ে গিঁট দিন।
ফ্লোরাল বা অ্যানিমেল প্রিন্টের ছোট স্কয়ার স্কার্ফগুলো কোনাকুনি ভাঁজ করে নিন। এবার চুলটা হাতখোঁপা করে বেঁধে নিতে পারেন। এরপর গোসলের পর ভেজা চুল যেভাবে গামছায় মোড়ানো হয়, অনেকটা সেভাবেই জড়িয়ে নিন স্কার্ফ দিয়ে। ভালোভাবে শর্ট করে নেওয়ার জন্য হিজাব পিন ও ব্রোচ ব্যবহার করতে পারেন। ওয়েস্টার্ন পোশাক ও সানগ্লাসের সঙ্গে এমন স্টাইলে পরা স্কার্ফ ভালো মানায়। যাঁরা সাজের ব্যাপারে নিরীক্ষা করতে ভালোবাসেন, তাঁরা একরঙা থ্রি-কোয়ার্টার হাতার শার্টের সঙ্গে ফ্লোরাল প্রিন্টের সিল্কের স্কার্ফ এভাবে পরতে পারেন।
খোঁপায় জড়ানোর জন্য স্বল্প প্রশস্তের ছোট ছোট কিছু স্কার্ফ পাওয়া যায়। নরম সুতি, সিল্ক, প্লেন ও ছাপা জর্জেটের বিভিন্ন স্কার্ফ চাইলে কাপড় কেটে নিজেই বানিয়ে নিতে পারেন। ফ্লোরাল প্রিন্ট হলে গাউনের সঙ্গে খোঁপায় জড়িয়ে নিলে বেশ মানিয়ে যায়। চেক প্রিন্টের স্কার্ফ হলে একরঙা শার্টের সঙ্গে খোঁপায় জড়িয়ে পরা যেতে পারে।
জনপ্রিয় প্রিন্ট
কয়েক বছর ধরে কাপড়ে অ্যানিমেল প্রিন্ট ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। স্কার্ফও এর ব্যতিক্রম নয়। সুতি, সিল্ক বা সিনথেটিক—প্রায় সব ধরনের কাপড়ে অ্যানিমেল প্রিন্টের স্কার্ফ পাওয়া যায়। সাধারণ সুতির অ্যানিমেল প্রিন্ট স্কার্ফ এমনিতেই অনেক আধুনিক।
সূত্র: কসমোপলিটন, ভোগ ও অন্যান্য