বইমেলায় হাজারো বইয়ের ভিড়ে প্রকাশিত হয় ভ্রমণকাহিনি বা ভ্রমণ গদ্যের বই। আমাদের দেশের পর্যটকেরা এখন ঘুরছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে, উঠছেন এভারেস্টসহ বিভিন্ন জটিল পাহাড়ের চূড়ায়। সেসব রোমাঞ্চকর গল্প ধরা থাকে ভ্রমণবিষয়ক বইগুলোতে। এবারের মেলায় প্রকাশিত কয়েকটি বই নিয়ে রইল আজকের আয়োজন।
এভারেস্ট ও লোৎসে শিখরে
বাবর আলী
প্রকাশনী: চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন
এভারেস্ট ও লোৎসে অভিযানের কথা লিখতে বসে বাবর আলী লিখেছেন কিছু মুহূর্তের কথা। চোখের সামনে খুম্বু আইসফল, এভারেস্টের পশ্চিম গাত্র থেকে নেমে আসা বিকট তুষারধস, পাশের তাঁবুতে থাকা আরোহীর টানা কাশির দমক, উচ্চতর হিমালয়ের হিমজব্দ রাত, লোৎসে ফেসের ওপর ঝুলে থাকা ৩ নম্বর ক্যাম্প, তীব্র বাতাসে জবুথবু ৪ নম্বর ক্যাম্প, হেডল্যাম্পের বৃত্তাকার আলোয় সামিট পুশের রাতে দেখা শক্ত বরফের ওপর ক্রাম্পনের আঁচড়! পৃথিবীর সর্বোচ্চ বিন্দু থেকে বাকি দুনিয়া দেখার সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অনুভূতি আর বুদ্ধপূর্ণিমায় ভেসে যাওয়া চন্দ্রালোকে লোৎসে আরোহণের গল্প।
তানজানিয়ার হৃদয় হতে
ফাতিমা জাহান
প্রকাশনী: অনুপ্রাণন প্রকাশন
ট্যাঙ্গানিকা অর্থাৎ মূল ভূখণ্ড আর জানজিবার—এ দুটি ভূখণ্ড নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল তানজানিয়া। ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর তানজানিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ১২০টির বেশি আদিবাসী গোষ্ঠীর আবাসস্থল, হস্তশিল্প, কয়েকটি ন্যাশনাল পার্ক বা পশুপাখির অভয়ারণ্য আর জানজিবারের ভুবন ভোলানো সৈকতের রূপ নিয়ে হয়ে উঠেছে এক অনন্য দেশ। আফ্রিকার প্রকৃতি, জনসাধারণের জীবনযাপন কেমন, তা নিরীক্ষা করতেই লেখক ভ্রমণ করেছেন আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ। বাইরে থেকে ঝলমলে মনে হলেও সাধারণ মানুষের জীবনযাপন, তাদের বেদনা, বঞ্চনা লেখক তুলে ধরেছেন এই বইয়ে।
লাতিনের নাটাই
মহুয়া রউফ
প্রকাশক: প্রথমা
লাতিন আমেরিকা মানেই মায়া ও ইনকা সভ্যতা, ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো, পাবলো নেরুদা, ভিক্টর জারা, চে গুয়েভারা! কিংবা আতাকামা মরুভূমি, নিকারাগুয়ার আগ্নেয়গিরি, বলিভিয়ার সালার ডি ইউনি। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার স্প্যানিশ ও পর্তুগিজভাষী বিরাট লাতিন অঞ্চল আমাদের অনুরণিত করেছে পুরো কিশোরকাল। লেখকও তার বাইরে ছিলেন না। ফলে বড়বেলায় তিনি লাতিনের নানান ভৌগোলিক অঞ্চল ভ্রমণ করেছেন। সেসব অঞ্চলের সভ্যতা-সংস্কৃতি, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, ভৌগোলিক সমৃদ্ধি, রাজনৈতিক ইতিহাস দেখেছেন। সেই ছুঁয়ে দেখা গল্পই তিনি লিখেছেন এ বইয়ে। লাতিন আমেরিকা ভ্রমণের পনেরোটি গদ্য দিয়ে সাজানো হয়েছে ‘লাতিনের নাটাই’।
পদ্মার উৎস অভিযানে
সজল জাহিদ
প্রকাশনী: নটিলাস প্রকাশনী
নিজের জন্মস্থান পদ্মাতীরের পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ দেখতে গিয়েছিলেন লেখক সজল জাহিদ। বন্ধুদের সঙ্গে কোনো এক ছুটির দিনে। সেদিন পদ্মাতীরে চুপচাপ বসে থাকার সময় অবচেতনে ভেবেছিলেন, এই বিশাল নদীর উৎসমুখ একসময় দেখতে যাবেন। সে উদ্দেশ্যে ঘুরেছেন ভারতের বিভিন্ন রাজ্য। এরপর বন্ধুদের সঙ্গে সবকিছু ঠিকঠাক করেও ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার্স অভিযানে যেতে না পারার অসীম দুঃখ ঘুচিয়েছিলেন তিনি এই স্বপ্নময় অভিযানের মধ্য দিয়ে। নিজের জন্মস্থান এবং সেই নদীর সৃষ্টি বা উৎসমুখ অভিযানের এক মাদকতাময় আলেখ্য ‘পদ্মার উৎস অভিযানে’।
পূর্ব আফ্রিকার তিনকাহন
এলিজা বিনতে এলাহী
প্রকাশনী: অনুপ্রাণন প্রকাশন
রহস্য ও বৈচিত্র্যের মহাদেশ আফ্রিকা। সেই রহস্যে মোড়া ভূখণ্ডের প্রতিটি অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভৌগোলিক বৈচিত্র্য যেকোনো ভ্রমণকারীর আকর্ষণের জায়গা। এলিজা বিনতে এলাহী সেই আকর্ষণ অস্বীকার করতে পারেননি।
বইটি লেখকের পূর্ব আফ্রিকার তিন দেশ—কেনিয়া, উগান্ডা
ও রুয়ান্ডা ভ্রমণের আখ্যান। লেখক পথ চলতে চলতে প্রাচীন ইতিহাসের মুখোমুখি হয়েছেন, দেখেছেন নানান জনপদ আর সেখানকার মানুষ, জানার চেষ্টা করেছেন সেসব এলাকার সংস্কৃতি, বুঝতে চেয়েছেন বিবিধ ভাষার রহস্য। সেসব আবেগ, অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, স্বীকারোক্তি ও কৈফিয়তের হিসাবনিকাশ নিয়ে আবর্তিত লেখা হয়েছে ‘পূর্ব আফ্রিকার তিনকাহন’।