যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচসি) আদলে ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতীয় স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের রূপরেখা ঘোষণা করেছে বিএনপি। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই রূপরেখা উপস্থাপন করেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা অনুযায়ী উন্নত কল্যাণকামী রাষ্ট্রে বিদ্যমান ব্যবস্থার আলোকে বিএনপি সবার জন্য বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা যেমন আজও নিশ্চিত হয়নি, তেমনি চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষাও আজ পরিকল্পিত নয়। আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাঙ্ক্ষিত প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জন করেনি। সাধারণ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির জন্য বিদেশ গমন প্রবণতায় এখনো রয়েছে উচ্চ হার। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা অদ্যাবধি সর্বজনীন জনবাস্তব হয়ে ওঠেনি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি দেশের জনগণের অন্যতম মৌলিক অধিকার এই কথাটির বাস্তব প্রতিফলন আজও প্রত্যাশিত মাত্রায় উপনীত হতে পারেনি।’
স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে বিএনপির প্রস্তাবনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় আসলে দারিদ্র্য বিমোচন না হওয়া পর্যন্ত সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র জনগণের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও সম্প্রসারিত করবে। প্রাথমিক ও প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যাপ্তসংখ্যক প্রশিক্ষিত নারী ও পুরুষ, পল্লি স্বাস্থ্যকর্মীর ব্যবস্থা করা হবে। সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণা সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।’
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের সমালোচনা করে মোশাররফ বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে অনিয়ম, আর্থিক দুর্নীতি, প্রশাসনিক দুর্বৃত্তায়ন, দলীয়করণের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতকে কুক্ষিগত করার ফলে চিকিৎসক ও রোগী সম্পর্কের অবনতি, বিদেশমুখী চিকিৎসার বিস্তার ঘটেছে।’
এ সময় স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপক উন্নয়নে তিন ধাপে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ তুলে ধরে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবনায় স্বল্পমেয়াদি (এক থেকে তিন বছর) পরিকল্পনা রয়েছে। এতে আমরা গ্রামীণ স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার গুণগত মান উন্নয়ন এবং কার্যকরী প্রাথমিক রেফারেন্স সেন্টার হিসেবে রূপান্তর, প্রয়োজনীয় বিশেষায়িত সেবা নিশ্চিত করা, পরিকল্পিত পরিবার ও জনসংখ্যার ব্যবস্থাপনার কথা আমরা বলেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেক নাগরিককে একজন সরকারি রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের অধীনে রাষ্ট্রীয় খরচে সর্বোত্তম স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের পর্যায়ক্রমিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিদ্যমান জেলা পর্যায়ের হাসপাতাল ও বিশেষায়িত স্তরের স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালীকরণ ও সঠিক রেফারেন্স সিস্টেম বাস্তবায়ন করা হবে। ২৪ ঘণ্টা হেল্প লাইন, জরুরি চিকিৎসাসেবা, দুর্ঘটনা পরবর্তী সেবা, দ্রুত স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা, স্বাস্থ্যসেবায় ন্যায়বিচার, রোগী ও সেবা প্রদানকারীর জন্য সমতাভিত্তিক আইন প্রণয়ন, সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে চিকিৎসক ও রোগীর সম্পর্ক উন্নয়নের কার্যকর ব্যবস্থা করবে বিএনপি।’
এ ছাড়া মধ্যমেয়াদি (এক থেকে পাঁচ বছর) এবং দীর্ঘমেয়াদি (১০ বছর পর্যন্ত) পরিকল্পনার মাধ্যমে গোটা স্বাস্থ্য খাতে আমূল পরিবর্তনের কথাও তুলে ধরেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা আমাদের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করছি। তবে আমরা মনে করি না যে তারা এসব প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা রাখে বা সেই সময় পর্যন্ত তারা থাকবে।’
খন্দকার মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা জাতির জন্য এই প্রস্তাবনা উপস্থাপন করছি যে অন্তর্বর্তী সরকার যদি এসব প্রস্তাবনা গ্রহণ করে, তাহলে ভবিষ্যতে জনগণের যে সরকার আসতে তারা সেগুলো বাস্তবায়ন করবে। আর যদি বিএনপিকে জনগণ পছন্দ করে আগামী নির্বাচনে সরকারে পাঠায়, তাহলে আমরা জনগণকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারে আমাদের উপস্থাপিত সবকিছু বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চালাব।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ফরহাদ হালিম ডোনার, বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম এবং বিএনপির মিডিয়া সেলের সমন্বয়ক অধ্যাপক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।